বৈচিত্র্যময় উন্নয়ন ধারার চীনের রাজধানী পেইচিং ২০০৮ সালের ওলিম্পিক গেমসের আগমনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাজধানীগুলোর অধিবাসীদের মতো পেইচিংবাদীদের মনও উদার এবং অতিথিপরায়ন।তবে কিছু কিছু নগরবাসির আচরণ ওলিম্পিক গেমসকে স্বাগত জানানোর পরিবেশের সংগে খাপ খায় না।যেখানে সেখানে থুথু ফেলা, বসে চড়তে লাইনে না দাঁড়ানো, এগুলো মাঝে মাঝে চোখে পড়ে।পেইচিংবাসীদের আচরণ যাতে ওলিম্পিক গেমস আয়োজনের স্বাগতিক শহর পেইচিং-এ বজায় থাকে সে জন্য পেইচিং নগরবাসিদের আচরণের গুণমান উন্নত করার তত্পরতা শুরু হয়েছে। আজকের এ অনুষ্ঠানে আপনারা শুনতে পাবেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের নিজস্ব সংবাদদাতার লেখা একটি রেকর্ডভিত্তিক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটির শিরোনাম: " ওলিম্পিক গেমসকে স্বাগত জানাতে পেইচিং নগরবাসীদের আচরনের গুনমান বাড়ানোর উদ্যোগ।"
২০০৪ সালের শেষ নাগাদ পেইচিং পৌর কর্পোরেশন ২০০৫ সালে এক বছরব্যাপী "সুসভ্য পেইচি", " গণ ওলিম্পিক" শিরোনামে রাজধানীতে আরচণ শিক্ষার অনুশীলণ " চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেন হুয়ে গুয়াং যিনি রাজধানীর পরিবেশকে সুসভ্য করে তোলা কমিটির পরিচালক তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
পেইচিংবাসীদের আচরনের গুনগত মান ক্রমাগত বাড়ছে।তবে দেশের রাজধানী হিসেবে, এবং বিশ্বের অন্যান্য বড় বড় শহরগুলোর সঙ্গে মিলালে পেইচিংবাসীদের আচরনের মান আরও উন্নত করার অবকাশ রয়েছে।তাদের ব্যাবহারে কিছু কিছু ক্রুটি এখনো দেখা যায়। এসব বিষয়ে তাদের আরও সতর্ক হওয়ার দরকার রয়েছে।পেইচিংবাসীদের আচরনের মান অধিক পরিমানে উন্নত করা আমাদের এই অনুশীলন কার্যক্রমের প্রধান উদ্দেশ্য।
এবারের " রাজধানীবাসির সুসভ্য আচরণ বিধি প্রচার শিক্ষা তত্পরতায়" ছ'টি বিষয় রয়েছে।মানুষের দৈনন্দিন সুব্যবহার, সামাজিক সভ্য আচরণ, প্রতিযোগিতার মাঠে সভ্য ব্যাবহার এবং বৈদেশিক সভ্য ব্যাবহার।প্রতি দু মাস পর পর এক একটি বিষয়ে কাজ করা হয়। এই প্রচার তত্পরতা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সে জন্য বিস্তারিত পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।গত মার্চ মাসের শেষ দিকে পেইচিং ডেইলি পত্রিকায় " গণ ওলিম্পিক" , " সভ্য ব্যবহার" শিরোনামে নানা ধরনের আচরণ বিধি প্রকাশ করা হয়েছে।পেইচিং টেলিভিশনে প্রত্যেক রাতে সোনালী সময়পর্বে " সভ্যতার ৩০ সেকেন্ড নামের কন্টুন প্রচার করা হয়। এই কাটুনে সমাজের অসভ্য আচরণের সমালোচনা করা হয়। এপ্রিল মাস থেকে সমাজের সভ্য ব্যবহার বিশেষভাবে প্রচার করা হয়েছে।পেইচিংএর বিভিন্ন তথ্যমাধ্যমগুলোতে বাস চলার সুশৃংখলতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। চীনের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জেন মিন বলেছেন, তিনি মনে করেন, এই বিষয় নিয়ে আলোচনার খুব প্রয়োজন রয়েছে।তিনি জানান, পেইচিং শহরে ১ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ বাস করে, ফলে এই মহা নগরে যানজট অধিক।অফিস-যাওয়া এবং অফিস থেকে বাসায় ফিরে আসার ব্যস্ত সময়ে কেউ বাসে উঠতে চায় না। বাসে আসন পাওয়ার জন্য লোকেরা বাসে উঠার আগে গাদাগাদি করতে থাকে।তিনি বলেছেন,
আমাদের এই জ্ঞান থাকতে হবে যে, কে বাসে আগে বা পরে উঠতে পারে সেটা শক্তির ব্যাপার নয়। বাসে উঠার আগে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে। ওলিম্পিক গেমস চলাকালে অনেক বিদেশী পর্যটক আসবেন। তাদের মধ্যে অনেকেই বাসে চেপে পেইচিংএ চলাফেরা করবেন।আমি আশা করবো , বাস চড়ার প্রতিযোগিতায় আমাদের নগরবাসী বিদেশীদের কাছে হাসির পাত্র হবে না।
বাসে চড়ার বিষয় ছাড়াও পেইচিং এর তথ্যমাধ্যমগুলোতে পেইচিংবাসীদের উদ্দেশ্যে যেখানে সেখানে থুথু না ফেলা এবং যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলার অভ্যেস গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।দৈনন্দিন সুব্যবহার প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গে পেইচিং পৌর -কর্পোরেশন অধিবাসীদের এসব জ্ঞান শিখিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে।যেমন ধরুণ কেমনভাবে সংগীত অনুষ্ঠান উপভোগ করতে হয়।
রাজধানীর পরিবেশ সুসভ্য করে তোলা কমিটির পরিচালক জেন হুয়ে গুয়াং আরও বলেছেন, পেইচিং ওলিম্পিক গেমসের সুষ্ঠু প্ররিবেশ স্বাগতিক দেশের দর্শকরা তৈরী করবেন।তবে প্রতিযোগিতার মাঠে আগে পেইচিংবাসীরা যে ব্যবহার দেখিয়েছে তাতে আরও সংশোধনের অবকাশ রয়েছে।তিনি বলেছেন,
খেলার মাঠে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা দেখার সময় যখন অন্য দেশের জাতীয় সংগীত বেজে উঠে তখন কোনও কোও দর্শক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখান না এমন ঘটনাও দেখা গেছে।চীন দল যখন কোনও বিদেশী দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তখন কোনো কোনো দর্শক অসভ্য আচরণ করে । যেমন ধরুন একটি বিদেশী ফুটবল টিম চীন দলের সঙ্গে খেলছে। যখন অতিথি দলের গোল হয় তখন দর্শকদের মধ্যে হাততালি না পড়ে মুখে শু শু শব্দ উঠে।কোনো কোনো দর্শক খেলার মাঝখানে মাঠ ত্যাগ করে ।
|