চীনে ৫৬টি জাতির লোক বসবাস করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জাতির লোকসংখ্যা দেশের মোট লোকসংখ্যার ৯৩ শতাংশ, বাকি ৫৫টি জাতির লোকসংখ্যা তুলনামূলক কম বলে তাদেরকে সংখ্যালঘু জাতি বলা হয়ভ চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর জনগণ প্রধানত প্রশ্চিম অঞ্চলে থাকেন।
সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে যে কয়েটি জাতির লোকসংখ্যা অপেক্ষাকৃতভাবে বেশী তাদের মধ্যে একটি হলো মঙ্গোলীয় জাতি। চীনের মঙ্গোলীয়দের লোকসংখ্যা ৪০ লক্ষ। ইতিহাসে তারা সুবিস্তীর্ণ তৃণভুমিতে যাযাবর জীবনযাপন করতেন, ফলে মঙ্গোলীয়দের স্বভাবগত প্রকৃতি দুর্দান্তসাহসী, উদার আর উষ্ণহৃদয়। মঙ্গোলীয় জাতির ঐতিহ্য অনুযায়ী সবচেয়ে বড় উত্সব হলো নাদামো উত্সব। মঙ্গোলীয় জাতির এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাদামো উত্সবে সাধারণত তিন দিন স্থায়ী হয়। মঙ্গোলীয় ভাষায় নাদামো শব্দটার অর্থ বিনোদন, ক্রীড়া বা খেলা। তৃণভূমির বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় নাদামো উত্সবে অনুকূল জলবায়ু, প্রার্থনার জন্য যজ্ঞানুষ্ঠান আয়োজিত হয়, তার পর কুস্তি, ঘোড়দৌঁড় আর তীরন্দাজ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজিত হয়ে থাকে।
সবাইকে ঘোড়ার দুধ দিয়ে তৈরী মদ আর ভেড়ার মাংস খাওয়ানো হয়, মঙ্গোলীয় মেয়েরা শ্রুতিমধুর গান আর নাচ পরিবেশন করেন। এমন সময়ে আপনি নিশ্চয় মুগ্ধ হবেন।
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে বসবাস করে থাকে তিরিশটিরও বেশী সংখ্যালঘু জাতি, যেমন চুয়াং, ই, মিয়াও, তোং, ইয়াও, পাই, তাই ইত্যাদি। তোং জাতির লোকেরা সংগীতে বিশেষ সুনিপুণ। গান গাওয়ার সময়ে বাদ্যযন্ত্র বাজানোর প্রয়োজন নেই, কারণ তাদের নানা গ্রুপের লোকের কণ্ঠে নানা গতিতে আর সুরে গানের শব্দ উচ্চারিত হয়।
দক্ষিণ পশ্চিম চীনের সংখ্যালঘু জাতির বাসস্থানের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, এগুলোর অনেকগুলোই কাঠের বা বাঁশের তৈরী এবং তারা হাতে বোনা কাপড় পরেন, মাথায় থাকে নানা রকম রূপার গহনা।
ইয়ুননান প্রদেশে সংখ্যালঘু জাতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশী, এখানে আছে ২৫টি সংখ্যালঘু জাতি। তাদের মধ্যে পাই জাতির লোকেরা সাদা রঙের পোষাক পরতে পছন্দ করেন। পাই শব্দটার অর্থই সাদা রঙ। এমন কি তাদের বাড়ির রঙও প্রধানত সাদা।
চীনের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে চুয়াং জাতির লোকসংখ্যাই সবচেয়ে বেশী। চুয়াং জাতির লোকসংখ্যা দেড় কোটি, প্রধানত কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে থাকেন।
চীনের যাবতীয় জাতির মধ্যে খুব সম্ভবতঃ চুয়াং জাতির লোকেরাই গান গাইতে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন। চীনের চান্দ্রপঞ্জিকা অনুসারে প্রতি বছরের তৃতীয় মাসের তিন তারিখে চুয়াং জাতির গানের উত্সব আয়োজিত হয়। সে দিন চুয়াংরা প্রেমের গান , নয়নভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যবলীর প্রশংসার গান গেয়ে আনন্দ করেন এবং তরুণ গায়করা সত্যিই প্রেমের পাত্রী জয় করতে পারেন।
চুয়াং জাতির গায়িকা হুয়াং ছুন ইয়েন বলেছেন, আমার জন্মভূমির পাহাড়ী গান খুবই শ্রুতিমধুর এবং খুবই বেশী সুন্দর। উদাত্ত বা মায়ামমতাপূর্ণ নম্র কণ্ঠে পাহাড়ী গান হয়, প্রেমের গান, ছড়ার মতো গান বা পানপ্রস্তাবের গান সবকিছুই আছে। আমার দাদাদাদী, বাবামা সবাই পাহাড়ী গান গাইতে পারেন। আমি ছোটবেলা থেকে পাহাড়ী গানের মাতানো সূরে বড় হয়েছি।
|