তুরুফান অঞ্চল উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলে অবস্থিত। ওখানকার উত্পাদিত আঙ্গুর সংখ্যাপ্রকার বহুল আর মিষ্টি বেশি বলে দেশ-বিদেশে এই অঞ্চল সুবিখ্যাত। এ অঞ্চলের শাংশাং জেলার লিয়ানমুছিং থানার হোগামুয়াদি গ্রামে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি আছে। "আঙ্গুররাজ" বলে সুপরিচিত এই গ্রামের কৃষক সমাইকুরবান ।
১৯৮৫ সালে চীনের গ্রামাঞ্চলে কৃষিকর্মে দায়িত্ব-বন্টন ব্যবহার চালু হয়েছে। তখন সমাইকুরবান ছিলেন একজন প্রৌঢ়। চাষাবাদের জন্য তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির সমস্ত সঞ্চয় ব্যবহার করে চাষাবাদের জন্যে প্রায় ২০ হেকটর পতিত জমিবর্গা নিয়েছেন। তখন থেকে তিনি ও তাঁর স্ত্রী এই সব জমিতে পরিশ্রম করেছেন এবং নলকূপ খনন করেছেন। ফলে তাঁর পুরো জমিতে আঙ্গুর গাছ লাগানো হয়েছে। এখন তাঁর খামারে দলে দলে গরু ও ভেড়া, অসংখ্য আঙ্গুর গুচ্ছ, ঐতিহ্যিক উইগুর স্টাইলের বাড়ি আর দূরের পাহাড় একটা বিস্ময়কর ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তার সমভিব্যবহারে ষাটেরও বেশি বয়সী সমাইকুরবান বলেছেন, প্রথমে আমি কেউই পতিত জমি বর্গা নেন নি। পরে তারা দেখেছেন আমি পতিত জমিতে আঙ্গুর বপন করেছি এবং আয় হয়েছে। তারাও পতিত জমি চেয়ে আঙ্গুল বপন করতে শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের থানায় মোট কয়েক শো হেকটর পতিত জমিতে আঙ্গুর বপন করা হয়েছে। এখন আমার বার্ষিক আয় ছ'থেকে সাত লক্ষ ইউয়ান, গত দু'বছরে আমার বার্ষিক আয় ১২ লক্ষ ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে।
কুরবানের আঙ্গুরের যেমন ফলন বেশি, তেমনি গুনমানও উন্নত। গোটা তুরুফান অঞ্চলে তাঁর আঙ্গুর বাগান দেখে অবাক হয়েছেন। তাঁরা তাঁকে আঙ্গুররাজ বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন।
আঙ্গুর বপন ছাড়া কুরবান প্রায় একশো গরু ও ভেড়া আর প্রায় এক হাজার কবুতর পালন করেছেন এবং ছোট প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন করেছেন। প্রতি বছর তার গবাদিপশু পালন জনিত আয় এক লক্ষ ইউয়ানেরও বেশি। আঙ্গুর বপনের কাজে ব্যস্ততার কারণে গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে সিনচিয়াং, কানসু, সানশি, নিনসিয়া ইত্যাদি অঞ্চল থেকে ৪০জন মজুর ব্যবহার করেছেন। বেতন ছাড়াও এদের জন্য বিনামূল্যে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং তাদের প্রত্যেককে দু'মাসের বার্ষিক ছুটি দেয়া হয়। মালিক কুরবান প্রসঙ্গে ইয়েন মিন হাই নামে একজন শ্রমিক বলেছেন, আমাদের মালিক আমাদেরকে তাঁর নিজের ছেলে মতো অদির করেন। যাদের অসুবিধা আছে, তারা মালিকের সাহায্য পায়।
১৯৯১ সাল থেকে ইয়েন মিন হাই কুরবানের বাড়িতে চাকরি শুরু করেছেন ১২ বছর হল। তিনি বলেছেন, কুরবানের বাড়িতে হান জাতি, উইগুর জাতি, হুই জাতি আর কাজাখ জাতির শ্রমিকরা চাকরি করেন। ভিন্ন জাতির ভিন্ন রীতি-নীতির চাহিদি মেটানোর জন্য তাদের আলাদা আবাস আর খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যখন সংখ্যালঘু জাতির উত্সব ও হান জাতির বসন্ত উত্সব পালিত হয়, তখন মালিক তাদের নিয়ে গাড়ি চালিয়ে বাজারে যান। এই প্রীতিকর পরিবেশে কুরবানের খামারে বিভিন্ন জাতির শ্রমিকরা তাঁর পরিবার পরিজনের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারেন। এখন কুরবানের ব্যক্তিগত সম্পত্তি কয়েক ডজন লক্ষ ইউয়ান রেনমিনবিতে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা সম্প্রসারিত করার জন্য তিনি " সমাই কুরবান আঙ্গুররাজ" নামে একটি কোম্পানি স্থাপন করেছেন। তাঁর ছোট ছেলে ইউসুফ নানচৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক হয়েছেন। তিনি এখন কোম্পানির সহা ব্যবহাপব নিযুক্ত হয়েছেন। কুরবান বলেছেন, কোম্পানিতে আমাদের নিজের উত্পন্ন কিশমিশ বিক্রি ছাড়া সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কিশমিশ, তুলো , চা ইত্যাদি কৃষিজাত দ্রব্যও ক্রয় করে নেওয়া হয়। কোনো কোনো সময়ে আমরা অন্যদের আঙ্গুরও প্রক্রিয়াকরণ করি।
আঙ্গুর বপনের প্রযুক্তি আর ব্যবসা সম্প্রসারিত করার সঙ্গে সঙ্গে কুরবান গ্রামের শিক্ষা ব্রত উন্নয়নের উপরও মনোযোগ দেন। ১৯৯৫ সালে গ্রামে একটি মাধ্যমিক স্কুল স্থাপনের জন্য তিনি ৪ লক্ষ ইউয়ান অর্থ বরাদ্দ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাচ্চারা লেখাপড়া না করলে ভবিষ্যতে উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। সুতরাং আমি কিছু দরিদ্র ছাত্রছাত্রীকে কিছুটা অর্থ সাহায্য দেই। এখন কুরবান মাধ্যমিক স্কুল তুরুফান অঞ্চলের একটি অগ্রণী স্কুলে পরিণত হয়েছে।
এই আঙ্গুররাজ আরও বলেছেন, স্থানীয় বিভিন্ন জাতির জনগণের নিরলস পরিশ্রসের কল্যাণে তুরুফানের আঙ্গুর অবশ্যই আরও মধুর হবে। এখানকার লোকদের জীবনযাত্রা অবশ্যই আরও সুন্দর হবে।
|