চীনের উত্তর পশ্চিমাংশে অবস্থিত সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের রাজধানী উরুমুচি সংখ্যালঘুজাতির সুনিবিড় রীতি-নীতিতে বৈচিত্র্যময় একটি সীমান্ত নগর। তা ইউরেশিয়ার মূলভূভাগের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং এটা চীনের এমন একটি নগর, যা সমুদ্র থেকে সবচাইতে দূরে।
উরুমুচি শব্দটি মানে সৌন্দর্যময় পশুপালন খামার। এটা একসময় বিস্তীর্ণ তৃণভূমি ও সুন্দর পশুপালন খামার ছিল। গত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে নির্মাণকাজে চলার সুবাদে এখন উরুমুচি একটি আধুনিক শহরে পরিণত হয়েছে। শহরাঞ্চলে উঁচু উঁচু অট্রালিকা, ওভার ব্রীজ, অসংখ্য যানবাহন, বিরাটকারের সুপারমার্কেট, উচ্চ পর্যায়ের রেস্তরাঁ ও হোটেল, কফি হাউস, ইন্টারনেট ক্যাফে আর কনসার্ট হল এই নগররে আধুনিকায়ন আর ফ্যাশনের পরিচায়ক। উরুমুচি শহর এমন একটি শহর যেখানে বহু সংখ্যালঘু জাতির সংস্কৃতি বিরাজ করছে। ২২ লক্ষ লোকসংখ্যা বিশিষ্ট এই শহরে উইগুর জাতি. হুই জাতি, কাজাখ জাতি প্রভৃতি ৪৯টি সংখ্যালঘুজাতির বাস।
উরুমুচি সংখ্যালঘু জাতির নিবিড় রীতি-নীতি বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ একটি শহর। বহু জাতির জামা-পোষাক, ভাষা, আচার ব্যবহার আর জলখাবার এই শহরের একটি অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। আধুনিক সভ্যতা আর ফ্যাশন এই শহরকে নতুন বৈশিষ্ট্য যুগাচ্ছে।
এই শহরের অধিবাসীরা যেমন ঐতিহ্য মেনে চলতে পারেন, তেমনি ফ্যাশন অনুসরণ করতে পারেন।
আইজামালি উইগুর জাতির একজন মেয়ে, তিনি তুর্কী পণ্যদ্রব্য বিষয়ক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের ভাবপ্রাপ্ত মহা-ব্যবস্থাপক। যদিও তিনি একটি ঐতিহ্যিক উইগুর জাতির পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন, তবু তিনি আধুনিক জীবনযাত্রা পছন্দ করেন। অবসর সময়ে তিনি পুস্তক বিপনী, কফি হাউস আর চায়ের দোকানে যেতে পছন্দ করেন। তিনি বলেছেন, জীবনযাত্রার মান উন্নত হবার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক চাহিদাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই ক্ষেত্রের চাহিদা মেটানোর জন্য আমরা সচরাচর বইয়ের দোকান , কফি কক্ষ আর চাঁয়ের দোকানে যাই। মাসে আমি কমপক্ষে চার কপি বই কিনি। এতে আমার সাংস্কৃতিক মানও উন্নত হয়েছে।
এই শহরে ঐতিহ্যিক ও ফ্যাশনের জিনিস সব দেখা যায়। জাঁকজমকপূর্ণ বারে উইগুর জাতির ঐতিহ্যিক লোক সংগীত শোনা যায়। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন অনুসরণকারী পোষাক আর প্রাচীন ঐতিহ্যিক হস্তশিল্পজাত দ্রব্য- সংখ্যালঘু জাতির ব্যবহার্য তরবারি ও রঙিন টুপি একই বিভাগীয় দোকারে পাওয়া যায়।
বর্তমানে উইগুর জাতির বাড়িতে সোফা, রিফ্রিজ্যারেটর, টেলিভিশন, গ্রীজ পাস্প ইত্যাদি আধুনিক বাড়িতে ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামআছে। তাদের বাসা আধুনিক পরিবেশে পরিপূর্ণ।
মিস রেনলি প্রতিদিন বাসে করে অফিসে যান। তিনি এখন গাড়ি চালানো শিখতে চান এবং ব্যাংক থেকে নিয়ে একটি গাড়ি কিনতে চান।
এখন রাজধানী উরুমুচিতে ইন্টারনেট ক্যাফে, চায়ের দোকান, বার, ডিস্কোটেক ইত্যাদি অল্পবয়সীদের অবসর কাটানোর উপযোগী ব্যবস্থা রয়েছে। এখন বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিলে কফি রুমে যাওয়া আর গাড়ি চালানো শেখা যুবক যুবতীদের এক ধরণের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
একটি আধুনিক শহর হিসেবে উরুমুচিতে বুনিয়াদি ব্যবস্থা আর পরিসেবার ব্যবস্থা খুবই পূর্ণাঙ্গ। আবাস, যোগাযোগ, রেস্তরাঁ, সংস্কৃতি, আমোদ প্রমোদ ইত্যাদি ব্যবস্থা অধিবাসী ও বাইরে থেকে আসা অতিথিদের জন্য সুবিধা যুগায়। এই শহর থেকে অন্যান্য জায়গায় যাওয়ার জন্য ষাটেরও বেশি আন্তর্জাতিক আর অভ্যন্তরীণ এয়ার লাইন্স এবং সতেরটি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রেলগাড়ি চালু হয়েছে। উন্নত মানের টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে এই শহরকে সংযুক্ত করেছে।
দূষণ দূরীকরণ প্রসঙ্গে শহরের ডেপুটি মেয়র ওয়াং সিন হুয়া বলেছেন, গত পাঁচ বছরে প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে এই শহরে বায়ুমন্ডলের দূষণ দূরীকরনে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। পুরোপুরিভাবে দূষণ মুক্ত করার জন্য লীল আকাশ প্রকল্প নামে আমাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত ম্যাদাম পাই ইয়ুন পার্কে গিয়ে শরীর চর্চা করে থাকেন। তার মতে এখন শহরের পরিবেশ অনেক ভাল হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা প্রতিদিন পার্কে গিয়ে নাচ গান করি। এই পরিবেশে আমাদের মন খুবই ভাল এবং আমাদের জীবনযাত্রা আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে।
|