v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-05-23 13:27:10    
"ইয়েসাপু" বেড়াতে

cri
    চীনে এখন বসন্তকাল।রাজধানী পেইচিং থেকে শতাধিক কিলোমিটার দূরে "ইয়েসানপু " নামে একটি জায়গা আছে , যেখানে প্রতি বছর মে মাস থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত অজস্র পর্যটককে স্বাগত জানানো হয়।সেখানকার বালি উপত্যকা, জুমা নদী এবং কৃষকদের হসটেল দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করে থাকে।আজকের এই আসরে আপনাদের "ইয়েসাপু" বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছি।

    রাজধানী পেইচিং থেকে "ইয়েসানপু" যেতে গাড়ীতে এক ঘন্টার বেশী সময় লাগে।গোটা দর্শনীয়স্থানের আয়তন ৬০০ বর্গ কিলোমিটার।এই দর্শনীয়স্থানকে "বাইলি উপত্যকা", " জুমা নদী", " বদ্ধ টাওয়া", " বেইচাও প্যান আদিম বণ", "লংমেন গিলি খাত" এবং "চিনহুওয়া পাহাড় " প্রভৃতি বেশ কয়েকটি দর্শনীয়স্থানে ভাগ করা হয়।এ সব জায়গার মধ্যে কালি উপত্যকা সবচেয়ে সুন্দর এবং বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।বালি উপত্যকাকে

    "বাইলি চিত্রাঙ্কন করিডোরকে" " দুনিয়ার স্বর্গ" বলা হয়।এ দুটো জয়গায় "ইয়েসানপু " সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক জায়গা।তিনটি বড় উপত্যকা নিয়ে এই বা।বাইলি উপত্যকা গঠিত হয়।উপত্যকার দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ মিটার অথার্ত ১০৫ লি।সুতরাং একে শত লি উপত্যকা বলেও ডাকা হয়। পর্যটকরাযখন এখানে পা ফেলেন তখন তাদের মনে হয় তারা বুঝি অজান্তে স্বর্গে এসে পড়েছেন। উপত্যকার দু পাশে আকাশচুম্বী পাহাড়ে বৈচিত্র্যময় ফুল সাজিত হয়।পাহাড়ী রাস্তা আঁকাবাঁকা।তবে চার দিকে তাকলে মানুষের আতঙ্কের অনুভূতি নেই।মিস লি ছিন এখানকার গাইড।তিনি অনেক বার এখানে ভ্রম করেছেন।তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষায় এই শত লি উপত্যকা বর্ননা করেছেন। তিনি বললেন,

    "আপনারা যে জায়গায় এসে পড়েছেন তা হলো শত লি উপত্যকা ।এখানকার রাস্তা অত্যন্ত সরু এবং আঁকাবাঁকা । উপত্যকার দু পাশে উচু উচু পাহাড়। এই উপত্যকায় উপস্থিত হয়ে উপরের দিকে তাকালে এক ফালি আকাশ ছিদ্রের মতো দেখায়।এই উপত্যকার ভিতরেও অনেক দর্শনীয়স্থান আছে। যেমন উপত্যকার মাঝকানে স্থাপিত সেতুগুলো একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য।মানুষ সিঁড়ি দিয়ে পাহাড় থেকে নীচে নামতে পারে। " উপত্যকার আরো ভেতরে আছে "টিকটিকি উপত্যকা" নামে একটি জায়গা । এই উপত্যকায় এক রকম ঘাস দেখতে টিকটিকির মতো ।সুতরাং এই জায়গাকে টিকটিকি উপত্যকা ডাড়া হয়। গায়ে যদি এই ঘাসের পাতা লাগে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে খুব ব্যথা পায়।তাই ওখানে গেলে সাবধানে থাকতে হবে।তা সত্ত্বেও অনেক পযর্টক এখানে ভ্রমন করতে পছন্দ করেন।কেননা এখানেই উপত্যকা থেকে "এক ফালি আকাশ" উপভোগ করার আদর্শ জায়গা। গাইড লি বলেছেন। "এক ফালি আকাশ" দেখতে চাইলে মাটিতে চিত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে।যদি সাদা মেঘ আকাশে ভেসে যায় তাহলে দেখতে সাদা আর নীল ফিতার মতো লাগে।দেখতে চমত্কার লাগে।পযর্টকরা যদি আরো অভিযাত্রা চালাতে চান তাহলে এই টিকটিকি উপত্যকা থেকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।সামনে "বাঘের মুখ" নামে একটি জায়গা আছে। এই জায়গাকেই ইয়েসানপু উপত্যকার সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক জায়গা বলে গণ্য করা হয়। কারণ এই জায়গা দেখতে একদম বাঘের মুখ। ওখানে দাঁড়ালে মানুষকে অত্যন্ত ছোট দেখায়।মনে হয় এই বাঘ যে কোনো সময় মানুষকে গিলে ফেলতে পারে।ওখান থেকে আরো সামনে এগিয়ে গেলে যখন বাঘের মুখ থেকে রেহাই পায় তখন হাইডান ফুলের সমাবেশ পযর্টকদের দৃষ্টিগোচর হয়। পেইচিংএর স্বনির্ভরতা ভ্রমণ সোসাইটির চেয়ারম্যান মি: সেটেন এই ফূল বিশেষভাবে পছন্দ করেন। তিনি বললেন, এখানে এসেছি শুধু ফুল উপভোগ করার জন্য নয় । উপরন্তু এখানে একটি রুপকথা আছে।

    কিংবদন্তীতে বলা হয়, অনেক অনেক দিন আগে, এখানে বসবাস করতেন একজন বাবা আর তাঁর মেয়ে।বাবার নাম মা সেন হো এবং মেয়ের নাম হাইডান।দুজন শিকারের উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতেন।এক দিন দু জন শিকার করার পথে যান তখন হাঠাত একটি বাঘ বাবার উপর আক্রমন করে বসল।হাইডান নিজের জীবনের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে বাবাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করলেন।তিনি বাঘের সঙ্গে লড়াই করতে করতে তার অনেক রক্ত মাটিতে পড়ল।অবশেষে আশেপাশের গ্রামবাসীরা বাঘকে তাড়িয়ে হাইডানকে মুক্ত করলেন।গ্রামে ফিরে যাওয়ার পথে তার গায়ের রক্ত মাটিতে পড়ল। পরে রক্তমাখা মাটিতে আগুনের মতো ফূল ফুটল।পরে এই মেয়েকে স্মরণ করার জন্য এই ফূলকে হাইডান ফুল ডাকা হয় এবং এই উপত্যকাকে হাইডান উপত্যকা ডাকা হয়।ইয়েসানপু দর্শনীয়স্থানের পাশে একটি গ্রামের নাম জুগেজুন।এখানে ভ্রমণ করতে আসা পযর্টকদের মধ্যে অধিকাংশ এই গ্রামে বিশ্রাম করতে আর খেতে পছন্দ করেন।এই গ্রামে কোনো হোটেল নেই ।পযর্টকরা গ্রামবাসীদের বাড়িতে থাকেন।এই ধরনের পারিবারিক হোটেলগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।খরচও খুব বেশি নয়। প্রত্যেক লোক ১৫ ইউয়ান দিয়ে এক বাত কাটাতে পারেন।পেইচিংএ ব্যবসা-করা মিস মা ছুন হুওয়া এবং তাঁর স্বামী প্রতি বছরের গ্রীষ্মকালে এখন এসে কয়েক দিন কাটান।তিনি বলেছেন, গ্রামবাসীদের বাড়িতে থাকার অন্য এক ধরনের অনুভূতি আছে ।তিনি বললেন,

    ওখানকার সব বাড়ীঘর পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়।দরজার সামনে ঝুলানো সাইবোর্ডে লাখা আছে।প্রত্যেকটি পরিবারের রীতিনীতি ভিন্ন ভাড়াও ভিন্ন।কোনো পরিবার চক মেলানো বাড়ী, কোনো কোনো বাড়ীঘর দু তলা আবার কোনো কোনোটি এক তলা।এখানে থাকতে খুব ভালো লাগে।

    এখানে উল্লেখযোগ্য, ইয়েসানপু দর্শনীয়স্থানে একটি খাবার না খেলে খুব দু:খের ব্যাপার হবে।এই খাবার হলো সেকা খাসীর মাংস।যারা এই ধরনের খাসীর মাংস খেয়েছেন যতবারই তারা অভিজ্ঞতা বণর্না করেন. ততবারই তাদের মুখে আনন্দের আমেজ ঝিলিক দেয়।শিভিয়েতিয়েন একটি রেস্তারাঁর মালিক। তিনি বললেন,

    জবাই করার আগে পর্যটকরা নিজেই খাসী বাছাই করতে পারেন। এখানকার খাসীর মাংস চর্বিযুক্ত, কিন্তু খেতে তেমন চর্বিযুক্ত মনে হয় না।প্রথমে খাসী জবাই করা, তার পর খাসীর মাংস পরিষ্কার করা, তারপর মাংসে বিশেষ তেল আর সুগন্ধ লাগানো। এ সব প্রণালী শেষ হওয়ার পর আগুনে খাসীর মাংস সেঁকা হয়। অবশেষে সেকা খাসীর মাংস তৈরী হয়।ইয়েসানপু দর্শনীয়স্থান বেশ বড় না হলেও সব জায়গা দেখতে গেলে অনেক সময় লাগে।