v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-05-19 20:59:17    
ঘুড়ির গল্প

cri
    প্রাচীনকালে চীনাদের পুর্ব পুরুষরা বায়ু-শক্তিকে কাজে লাগাতে জানতেন । আকাশে-বাতাসে পুষ্পরেনু , বীজ , পাতা ইত্যাদি উডতে দেখে তাদের মনেও ওড়ানোর বাসনা জেগেছিলো।

    কথিত আছে , দু হাজার বছর আগে লুবান নামে একজন ছুতোর কাঠ আর বাঁশ দিয়ে পৃথিবীর প্রথম ঘুড়ি তৈরী করেছিলেন । ঐতিহাসিক পুঁথিপত্র অনুযায়ী , লুবানের তৈরী ঘুড়িটি নাকি তিন দিন আকাশে উড়েছিলো । পরবর্তীকালে চীনে বাঁশের চটা অরে কাগজ দিয়ে ঘুড়ি তৈরী করা হয়েছিলো । আজ থেকে প্রায় তিন শো বছর আগে পেইচিং থিয়ান চিন , সানতং প্রদেশের ওয়েফাং আর চিয়াং সু প্রদেশের নানফুংকে কেন্দ্র করে চীনে ঘুড়ি বানানোর চারটে কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল । ১৯১৫ সালে পানাসা পন্য মেলায় চীনের পেইচিংয়ের ঘুড়ি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হাছাংইংয়ের বানানো একটি ঘুড়ি রৌপ্য পদক পেয়েছিলো । বর্তমানে থিয়ানচিন শহরের তৈরী ঘুড়ি বৃটেন , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , ফ্রান্স প্রভৃতি কৃড়িটিও বেশী দেশে আর অঞ্চলে রফতানি করা হচ্ছে ।

    চীনের ঘুড়ি অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতি বিজ্ঞানের বিকাশ ত্বরান্বিত করেছিলো । চীনের বিশ্বকোষের তথ্য অনুযায়ী , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান আবিস্কারকরা উদ্ভয়নরহস্য অনুধাবনের জন্য এক হাজারেরও বেশী বার ঘুড়ি উড়িয়েছিলেন । তারা মনে করতেন , বিমানের মত ঘুড়িও উড্ডয়ন-যন্ত্র । ওয়াশিংটেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিমান-পরিবহন ও মহাশুন্য বিষয়ক যাদুঘরের একটা ফলকে লেখা আছে , চীনের ঘুড়ি ও রকেট বা হাউইবাজি প্রাচীনতম উড্ডয়ন-যন্ত্র । এ থেকে বোঘা যায় , চীনই ঘুড়ির জন্মস্থান ।

    সারা চীনে ঘুড়ি ওড়ানবোর মরশুম হোলো বস্তকাল । নির্মেঘ আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে কবোষনো রোদে সবার শরীর-মন চাংগা হয়ে ওঠে । চীনের কোনোকোনো জায়গায় এক-এক পরিবারের যাবতীয় লোক খোলা মাঠে গিয়ে ঘুড়ি ওড়ায় । দেখে মনে হয় , মাঠে ঘুড়িয়ে মেলা চলছে । শোনা যায় ঘুড়ির সুতো কাটা হলে সুতো কাটা ঘুড়ির মত মানুষের দুংখবেদনাও মিলিয়ে যাবে ।

    মানুষ , জীবজন্তু আর বস্তুর আদলে তৈরী চীনের ঘুরিগুলোকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায় । বাস্তব জগতের মাছ , কচ্ছপ , চিংড়ি মাছ , কাঁকড়া , প্রজাপতি , ফড়িং , বা কোনো তরকারী হোক তার পুরান কাহিনীর অপসরিই হোক , তাদের হুবহু আদলে ঘুঁড়ি তৈরী করা হয় । থিয়ান চিং শহরের শিল্পীদের তৈরী ঘুড়ির মঙগলসুচক চীনা শব্দের আর ইংরেজি শব্দের নকশাও থাকে ।

    দেখতে যতটা সহজ মনে হয় , ঘুড়ি বানানো ততটা সহজ নয় । ভালো ঘুড়ি যেমন সুদৃশ্য তেমনই মজবুত করে তৈরী করতে হয় । ঘুড়ির প্রস্তুত-প্রণালী উপকরণ বিষয়ক বিদ্যা , প্রতিরূপ-বিষয়ক বিদ্যা , বায়ু-শক্তি বিদ্যা আর নন্দনতত্বের সঙ্গে জড়িত । চীনের লোক-শিল্পীদের তৈরী বৈচিত্র্যময় ঘুড়িগুলোর মধ্যে কোনোটা দেশলাইর বাক্সের মত ছোটো , কোনোটা টেবিলের মত বড় । প্রতিটি ঘুড়ির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে ।

    চার-পাঁচ বছরের বাঁশের ফালি আর চটা দিয়ে ঘুড়ির কাঠামো তৈরী হয় । বাঁশের ফালি আর চটা শক্ত , হালকা এবং স্থিতিস্থাপক , বাতাসের ঝাপ্টায়েও সহজে ভাঙে না । ঈগল আকারের ঘুড়ি বানানো বেশ পরিশ্রমের কাজ । ঈগলের ঠোট বানাতে বাঁশের ফালি আগুনে তাতিয়ে চাপ দিয়ে দিয়ে বাঁকিয়ে নিতে হয় । জোড় মজবুত করতে তামার তবক ব্যবহার করা হয় যাতে ঘুড়ি ভাঁজ করে এক জায়গা থেকে সহজেই অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় ।

    ঘুড়ির কাঠামোর উপর লাগানো হয় কাগজ অথবা রেশমী কাপড় । রেশমী কাপড় হালকা আর টেকসই । ঘুড়ির জমিন সমতল নয় , বৃত্তাকার । তাই সহজেই উপরে উঠতে পারে । জমিনের সামনের দিকের বাঁশের চটা মোটা ও শক্ত , পিছন দিকের বাঁশের চটা সরু ও নরম । এ জন্য বাতাসে ঘুড়ির জমিনে কাঁপন ধরে না । ঘুড়ির জমিনের অনুকরণেই নাকি বিমানের পাখার নকশা তৈরী করা হয়েছিলো ।

    ঘুড়ি আকাশে ওড়ালে যাতে নীচে থেকে সপষ্ট দেখা যায় সে জন্য গাঢ় রং দিয়ে ঘুড়ির উপর ছবি আঁকা হয় । নীল রং সাধারণত ব্যবহার করা হয় না । কারণ নীল আকাশ ঘুড়ির পটভুমি । ঘুড়ি ওড়ানো যাদের সখ তাদের কেউ কেউ বলেন , আমাদের কাছে ঘুড়িই পাখি । আকাশ ঘুড়ি দেখলে আমাদের মনে হয় আকাশে পাখি উড়ছে ।