v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-05-19 13:39:29    
আমি নানির বাড়িতে আছি

cri
    নিজের বাবামার বিবাহ-বিচ্ছেদ সম্পর্কে আজকের ছেলেমেয়েরা বয়স্কদের চেয়ে ভিন্ন মত পোষন করে । তাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রন-ক্ষমতা, বাবামার প্রতি তাদের যত্ন আর সমোঝতা, অসুবিধার মধ্যে মনুষত্ব , বিবাহ আর অনুভূতি সম্পর্কে তাদের বুঝাবুঝিতে আমরা আর একবার অনুভব করেছি যে , পরিবারের পরিবর্তন ছেলেমেয়ের বড় হওয়ার এক আরম্ভ-বিন্দু হতে পারে , তাই এক অভিভাবক-পরিবারের বাবা বা মার সত্যি বেশী চিন্তা করার দরকার নেই , আপনাদের উচিত নিজেদের পরবর্তীকালের জীবনযাত্রা ভাল করে সামনে নিয়ে যাওয়া ।

    ফিফি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রী । ৮ বছর বয়সে তার বাবামার বিবাহ বিচ্ছেদ হয় । এক প্রবন্ধে ফিফি বলেছে , আমার বয়স যখন আট বছর আমার বাবামার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে , তার পর আমি এবং মা দুজন নানীর বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করি ।

    কিছু দিন পর বাবার আবার বিয়ে হয় , বাবার নতুন স্ত্রীর এক মেয়ে আছে , এটা মা আমাকে জানিয়েছেন ।মা আমাকে আরও জানিয়েছেন যে , বাবা কারখানার এক কর্মগ্রুপ নেতা ছিলেন , তার কর্মগ্রুপের এক নারী শ্রমিক আছেন , নারী শ্রমিকটির স্বামী শ্রম-অহিত হয়ে মারা যাওয়ার পর তিনি একা সন্তান নিয়ে অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটান , বাবা তাকে বেশী সাহায্যকরছিলেন বলে জনমত আর মার ভুলবুঝাবুঝির ফলে আমাদের পরিবার ভেংগে যায় । পরে বাবা নারী-শ্রমিকটিকে বিয়ে করেন । কিন্তু বাবা সুখী নন, কারণ তার প্রতি বাবার শুধু সহানুভূতি আছে প্রেম নেই । কিন্তু বিবাহ বাস্তবে পরিনত হয়েছে ।

    এক বছর পর মার দ্বিতীয় বিবাহ হয় । তিনি আমাকে তার নতুন পরিবারে নিতে পারেন নি , কারণ তার নতুন স্বামীরও একটি মেয়ে আছে । আমি মার কষ্টবুঝতে পারি । মা প্রত্যেক সপ্তাহের শেষ দিকে নানীর বাড়ি এসে আমার সাথে একটি রাত কাটান । সপ্তাহের শেষ দিকে যখন আমি বাড়িতে ফিরে আসি তখন আমি উপলব্ধি করতে পারি যে মা কেঁদেছিলেন ,কিন্তু মা আমার সামনে কিছু না হওয়ার ভান করার চেষ্টা করেন ।ঘুমবার আগে তিনি বারবার এ কথা বলেন , মাকে ক্ষমা করো ।আসলে আমি জানি , সাধারন সময়ে নিজের মেয়ে দেখাশোনা করতে পারেন না বরং স্বামীর মেয়ে দেখাশোনা করতে হয় বলে মা কষ্ট পাচ্ছেন ।

    উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর একদিন আমার ভীষন জ্বরহয় , তবু আমি ক্লাস বাদ দিইনি ।শিক্ষক আমার মাথায় হাত রেখে আমার জ্বর জেনে ফেলেন , তার পর তিনি বাবাকে টেলিফোন করে জিজ্ঞাস করেন যে ,বাচ্চা আপনার মেয়ে না ? স্বামী-স্ত্রী ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর বাবা-মেয়ে সম্পর্কও ছাড়াছাড়ি হয় ? শিক্ষকের দ্বারাতিরস্কৃত হওয়ারপর বাবা তাড়াতাড়ি ট্যাক্সিনিয়ে স্কুলে এসে আমাকে হাসপাতালে পাঠান।

    আমি সুস্থ হওয়ার পর বাবা আবার স্কুলে এসে আমাকে দেখতে আসেন এবং বলেছেন ,এই সপ্তাহের শেষে নির্দিষ্ট সময়ের আগে আমার জন্ম দিন পালন করবেন ।সেই দিন সন্ধ্যায় বাবা স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে আমার অপেক্ষা করছিলেন এবং আমাকে বলেছেন তিনি মাকে আমন্ত্রন করেছেন ।

    আমি বাবার সংগে এক রেস্তরাঁয় এসেছি । মাআসার আগে বাবা কিছু মদ খেয়েছেন বলে মুখ লাল হয়েছে । তিনি আমাকে বলেছেন , বাবা এই জীবনে তোমার মা এবং তোমাকে সরি বলতে চাই । বলতে বলতে বাবা কেঁদে ফেললেন। তিনি নিজকে গালি দিতে দিতে বলেন, বিবাহ-বিচ্ছেদ বেছে নেয়ার জন্যে তিনি অনুতাপ করছেন ।

    এই সময়ে আমার মা এসে পৌছান।তিনি অত্যন্ত কম খেলেন। নানীর কথা চিন্তা করে আমি বাসায় ফিরে যেতে বললাম । আমরা তিনজন উঠে দাঁড়ালাম । একহাতে বাবার হাত অন্য হাতে মার হাত ধরলাম আমি । এসময়ে জীবনের সুখ-দুঃখ সবই অনুভব করতে পেরেছি আমি ।আমি কাঁনা কাঁনায় বলেছি, বাবা মা আপনারা ভালভাবে জীবনযাপন করুন, আপনাদের বর্তমানেযা পাওয়ার আছে সে সবই মূল্যবান বলে মনে করুন।আমার জন্যে চিন্তা করবেন না,আমি নানীর যত্নে বড় হয়ে মানুষ হব । আমি আপনাদের মেয়ে , আমি আপনাদের জন্যে এবং আমার নিজের জন্যে ভালভাবে আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে পারি। ভবিষ্যতে আমি আমার সাফল্য দিয়ে আপনাদের জন্মদেয়ার আর লালনপালনের জন্যে দান করব । যদি পুনর্জন্মেরসম্ভাবনা থাকে আমি কোনোমতোই আমাদের তিনজনকে আলাদা হতে দেব না ।

    বাবা জলভরা চোখ দুটো দিয়ে নিজের প্রথম বিবাহের স্ত্রীর উপর তাকিয়ে বলেন,ভালভাবে নিজের স্বাস্থ্য রক্ষা কোরো। আমি জানি , বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং আবার বিয়ে করার পথ বেছে নেয়ার পর বাবা যদিও এখনো তার প্রথম-স্ত্রী এবং মেয়ের কথা মনে করেন তবু তাঁরা এখন আর আগের তাঁরা নন,তাঁরা এখন এক পরিবারের লোক নন,তাঁরা দুই আলাদা পরিবারের লোক, এই দুটি ভিন্ন পরিবার আসলে দুই পৃথিবী ।

    এসময়ে মাও মাথা নিচু করে জল-ভরা চোখে বাবাকে বলে দেন, তুমি বেশী মদ খেও না,বেশী খেলে শরীরের উপকার হবে না ।

    এর পর বাবামা পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিলেন ।

    বাবামা দূরের দিকে যান । আমি মাথা তুলে অকাশে তাকালাম,তারপর আমি অনেক দুঃখ ও কষ্ট মনোভাব নিয়ে নানির বাড়ির দিকে যাই ।