রাষ্ট্রের নামঃ আফগানিস্তান
স্বাধীনতা দিবসঃ ১৯শে আগস্ট (১৯১৯ সাল)
নববর্ষঃ(আফগানিস্তানের বর্ষপঞ্জি) ২১শে মার্চ
জাতীয় পতাকাঃ ২০০২ সালের ৫ ফেব্রয়ারী আফগানিস্তানে নতুন জাতীয় পতাকা প্রচলিত হয়। ১৯৬৪ সালের আফগানিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী ডিজাইনকৃত নতুন জাতীয় পতাকা কালো, লাল, সবুজ তিনটি রং এবং আফগানিস্তানের জাতীয় প্রতীক নিয়ে গঠিত ।
রাষ্ট্র প্রধানঃ প্রেসিডেন্ট হামিদ কার্জাই, ২০০১ সালের ২২শে ডিসেম্বর আফগানিস্তানের অস্থায়ী সরকারের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ২০০২ সালের ১৩ই জুন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, কার্যমেয়াদ ৫ বছর, ডিসেম্বর মাসে শপথ গ্রহন করেন।
প্রকৃতি ও ভূগোলঃ আয়তন ৬৫২৩০০ বর্গকিলোমিটার। পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত, ভৌগলিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরে তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও তাজিকস্তানের সঙ্গে সংলগ্ন, উত্তর-পূর্বের প্রসারিত দীর্ঘ সরু অঞ্চল চীনের সঙ্গে সংলগ্ন, পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে পাকিস্তানের সঙ্গে সংলগ্ন, পশ্চিমে ইরানের সঙ্গে সংলগ্ন। আফগানিস্তানের ভূখন্ডে পাহাড় বেশি, মালভূমি ও পাহাড়ী অঞ্চলের আয়তন দেশের আয়তনের ৮০ শতাংশ। সমুদ্র-সমতল থেকে গড়পড়তা উচ্চতা ১০০০ মিটার। দেশের বৃহত্তম হিন্দুকুশ পর্বত মালা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক পর্যন্ত প্রসারিত। মহাদেশীয় আবহাওয়ার দরুন দেশের আবহাওয়া শুষ্ক এবং বৃষ্টিকম, বার্ষিক ও দৈনিক তাপমাত্রা পার্থক্য স্পষ্ট। ঋতুর তাপমাত্রার পার্থক্য ও দিনের বিভিন্ন সময়ের তাপমাত্রার পার্থক্য বেশী, শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা, গ্রীষ্মকালে অত্যন্ত গরম।
লোকসংখ্যাঃ ২ কোটি৭৭ লক্ষ৫ হাজার (২০০২ সালের জুলাই মাসে)। পাশতো জাতি ৪০ শতাংশ, তাজিকি ২৫ শতাংশ, তাছাড়া আরো আছে উজবেক, হাজারা, তুর্কমেন, বেলুচি ও নুরিস্তান ইত্যাদি বিশটিরও বেশী সংখ্যালঘু জাতি। রাষ্ট্রীয় ভাষা হচ্ছে পাশতো ও পার্সী। অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষা হচ্ছে উজবেক, বেলুচি ও তুর্কী ইত্যাদি। ৯৮ শতাংশেরও বেশী অধিবাসী ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী, এর মধ্যে ৯০ শতাংশ সুন্নি সম্প্রদায়ী, বাকিরা শিয়া সম্প্রদায়ী।
আফগানিস্তানের তিনটি প্রধান জাতিঃ
পাশতো জাতির লোকসংখ্যা ১কোটি ১০ লক্ষ, আফগানিস্তানের মোট লোকসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ। পাশতো জাতির লোকেরা বিচ্ছিন্নভাবে দুই শতাব্দী ধরে আফগানিস্তানে শাসন করেছে। পাশতো জাতির অধিকাংশ লোক সুন্নি মুসলমান, প্রধানতঃ হিন্দুকুশ পাহাড়ের দক্ষিণ দিকে বসবাস করেন।
দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি-তাজিক জাতির লোকসংখ্যা ৫০ লক্ষ, দেশের মোট লোকসংখ্যার ২৫ শতাংশ। তাজিক জাতির লোকেরা সুন্নি, আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রতিভাবান ব্যক্তিদের জন্মদাতা জাতি, দেশে এ জাতির শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে। অধিকাংশ মন্ত্রী, ব্যাংকার ও বড় বড় বণিক তাজিকী।
তৃতীয় বৃহত্তম জাতি-উজবেক জাতির লোকসংখ্যা ২৩ লক্ষ। তাঁরা হচ্ছেন সুন্নি মুসলমান। উজবেকী ভাষা ও পার্সী ভাষা তাঁদের দুটো প্রধান ভাষা।
রাজধানীঃ কাবুল, লোকসংখ্যা প্রায় ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার (২০০৩ সাল)। আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ, চারটি ঋতু স্পষ্ট, সারা বছরের গড়পড়তা তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের মতো।
প্রশাসনিক অঞ্চলঃ সারা দেশ ৩৩টি প্রদেশে বিভক্ত, প্রদেশের নীচে জেলা, অঞ্চল, মহকুমা ও গ্রাম।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ ১৫ শতাব্দীর আগে ছিলো ভারত এবং দূরপ্রাচ্যের সঙ্গে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের কেন্দ্র। ১৭৪৭ সালে আফগান জনগণ বিদেশী-হানাদারদের তাড়িয়ে দিয়ে একটি স্বাধীন ও এককালে শক্তিশালী আফগানিস্তান রাজ্য স্থাপন করেন। ১৯ শতাব্দীর পর, আফগানিস্তান ব্রিটেন ও রাশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে পরিণত হয়। ১৯১৯ সালে আফগান জনগণ ব্রিটেনের তৃতীয় আক্রমন ব্যর্থ করে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেন এবং ১৯শে আগস্টকে আফগানিস্তানের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ধার্য করেন। ১৯২৯ সালের জানুয়ারী মাসে ব্রিটেনের প্ররোচনায় আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পন্থী ধর্মীয় শক্তি ও উপজাতির সশস্ত্র শক্তি বিদ্রোহ করে আফগানিস্তানের মেনুলা রাজ্য উচ্ছেদ করে। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তানের উপর সশস্ত্র আক্রমন চালায়। আফগান জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বিদেশী আক্রমন বিরোধী সংগ্রাম চালান এবং অনেক সশস্ত্র প্রতিরোধ সংস্থা গঠন করেন। ১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাসে আফগানিস্তান লোয়া জির্গা আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের নামকে আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্রে পরিবর্তিত করে। ১৯৮৯ সালের ১৫ই ফেব্রয়ারী সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে তার যাবতীয় বাহিনী প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এরপর বিভিন্ন সম্প্রদায় ক্ষমতা-বন্টনে মতৈক্য অর্জন করতে না পারায় আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ ঘটে। ১৯৯৪ সালে ছাত্রদের সশস্ত্র শক্তি -তালিবান দ্রুত গড়ে উঠে। ১৯৯৬ সালে তালিবান রাজনৈতিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাসে দেশের নাম আফগানিস্তান ইসলাম আমীরাতে পরিবর্তিত হয়। " ১১ই সেপ্টেম্বর" ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত আফগানিস্তানে সামরিক তত্পরতা চালিয়ে তালিবান ও "আল-কায়েদা" সংস্থাকে মোটামুটি নির্মূল করে।২০০১ সালের ৫ই ডিসেম্বর আফগানিস্তানের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়, কার্জাই অস্থায়ী সরকারের চেয়ারম্যান মনোনীত হন। ২০০২ সালের জুন মাসের ১১ই থেকে ১৯শে জুন পর্যন্ত আফগানিস্তানের জরুরী লোয়া জির্গা সম্মেলন কাবুলে আয়োজিত হয়, প্রেসিডেন্ট কার্জাইয়ের নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানের অন্তবর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রীসভা নির্বাচিত হয়। ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচনে কার্জাই নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে আফগানিস্তানের ইতিহাসের প্রতম গণ-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, কার্যমেয়াদ ৫ বছর, ডিসেম্বর মাসে শপথ গ্রহন করের।
রাজনীতিঃ ২০০৪ সালের জানুয়ারী মাসে, আফগানিস্তানের লোয়া জির্গা সম্মেলনে নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। নতুন সংবিধান অনুযায়ী, আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট প্রজাতন্ত্র ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ইসলাম ধর্ম আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় ধর্ম, সৈন্যবাহিবীর রাষ্ট্রায়ন, নারী-পুরুষ সমতা, বিভিন্ন জাতির সমতা, রাষ্ট্রীয় ঐক্য ইত্যাদি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের মৌলিক নীতি হিসেবে নতুন সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়।
অর্থনীতিঃ আফগানিস্তান হচ্ছে একটি পশ্চাত্পদ কৃষি ও পশুপালন শিল্প-প্রধান দেশ। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ আফগানিস্তানকে বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অন্যতম বলে ধর্য করে। আফগানিস্তান খনিজ সম্পদে বেশ সমৃদ্ধ, কিন্তু এসব খনিজ-সম্পদ পুরোপুরি উত্তোলন করা হয় নি।আফগানিস্তানে সম্ভবতঃ পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ তাম্রসম্পদ মজুদ আছে, ৫ম মজুদ আছে পৃথিবীর বৃহত্তম লৌহ আকরিক খনি এবং ৭.৩কোটি টন কয়লা। বহু বছরের যুদ্ধের কারণে আফগানিস্তানের শিল্পের ভিত্তি প্রায় বিধ্বস্ত হয়েছে। তার শিল্প প্রধানত হালকা শিল্প ও হস্তশিল্প। কৃষি ও পশুপালন শিল্প হচ্ছে আফগানিস্তানের অর্থনীতির মেরুদন্ড। প্রধান ফসল হচ্ছে গম, তুলা, বিট এবং বিভিন্ন ফল।বিশ বছরেরও বেশী সময়ের যুদ্ধের কারণে আফগানিস্তানের অর্থনীতি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এককালে ৬০ লক্ষেরও বেশী আফগানিস্তানী বিদেশে নির্বাসিত হন। আফগানিস্তানের অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর অনেক ব্যবস্থা নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। আফগানিস্তানের অর্থনীতি ক্রমাগত পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
নতুন মুদ্রার নামঃ আফগানি
পররাষ্ট্রনীতিঃ আফগানিস্তান সরকার বরাবরই স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে এসেছে, জোট-নিরপেক্ষ আদোলনের প্রতিষ্ঠাতা দেশগুলোর অন্যতম। আফগানিস্তানের অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর, সক্রিয় পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে এসেছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের নীতিতে অবিচল আছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে।
চীনের সঙ্গে সম্পর্কঃ আফগানিস্তান ১৯৫৫ সালের ২০শে জানুয়ারী চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ১৯৭৯ সালের আগে দু'দেশ বরাবরই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে, দু'দেশের নেতারা অনেকবার সফর বিনিময় করেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমনকালে চীন সরকার আফগানিস্তান সরকারকে স্বীকৃতি দেয় নি। ১৯৯২ সালে দু'দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে আফগানিস্তানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হারিরি চীন সফর করেন।
আফগানিস্তানের ম্যাপ
|