চীনের দশম পুরষ্কৃত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী রাজধানী পেইচিংয়ের চারুকলা গ্যালারীতে প্রদর্শীত হচ্ছে । প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ' চিইউয়ান রোনছাই ' নামক এক পোশাক ডিজাইনিং কর্ম স্বর্ণ পুরষ্কার পেয়েছে , এই সুন্দর পোশাক ডিজাইনিং কর্ম দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে , আজকে এই পোশাকের ডিজাইনার লিং ইয়া লিকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি ।
আমাদের সংবাদদাতা তার সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় লিং ইয়া লি তার আঁকা ছবি ' চিইউয়ান রোনছার ' পাশে দাড়িয়েছিলেন । লিং ইয়া লি এক সুন্দরী মেয়ে , দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রীর মতো , কিন্তু আসলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন যুব শিক্ষক । তার আঁকা ছবি সম্বন্ধে লিং ইয়া লি বলেছেন , চিইউয়ান হচ্ছে ছবিতে তার ডিজাইন করা পোশাক পরা মোডেলের নাম , তিনি ছোট বেলা থেকেই সুন্দরী মেয়ের ছবি আকঁতে পছন্দ করেন , তিনি তার আঁকা প্রত্যেক সুন্দরীর জন্য নাম রাখেন এবং তাদের গল্প ও অভিজ্ঞতা রচনা করেন । এবার তিনি যে ' চিইউয়ান রোনছাই ' ছবি একেঁছেন , প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মঙ্গলের প্রতীক -- চীনের ড্রাগন জামা-পোশাকে প্রকাশ করা । তিনি আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , ড্রাগন হচ্ছে চীনের সবচেয়ে মঙ্গল প্রাণী , সাপের রাশি বছরে আমার জন্ম , চীনে সাপকে ছোট ড্রাগন বলা হয় । ছবিটির মেয়ের নাম চিইউয়ান , রোন-র অর্থ সন্ধ্যা বেলা , ছবির অর্থ সন্ধ্যা বেলার আবছা অন্ধকারে সুন্দরী চিইউয়ানের সুদৃশ্য পোশাক ।
লিং ইয়া লির আঁকা ছবি চার সেট সাদার রঙের পোশাক নিয়ে গঠিত। ছবিতে সুন্দরী চিইউয়ান সাদা রঙের ভাঁজপড়া স্কাট পরেন , দেখতে আকাশের মেঘের মতো , উপরে সাদা রঙের এক ড্রাগন কোমর থেকে হালকাভাবে কাঁধে জড়িয়ে থাকে , হাতায় সাদা রঙের আঁশ , দেখতে ভারী সুন্দর । দশকরা বলেছেন , তারা ভাবতেও পারেন না যে এই পোশাকের ডিজাইনার একজন অল্পবয়সী মেয়ে ।
১৯৭৭ সালে চীনের চেচিয়ান প্রদেশে লিং ইয়ালির জন্ম । ছোটবেলায় লিং ইয়ালি এক চঞ্চল মেয়ে , পড়াশুনার চেয়ে খেলা বেশী পছন্দ করতেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের ভতি পরীক্ষায় তিনি ভালো ফল পান নি । ছোট বেলা থেকেই ছবি আঁকা পছন্দ করেন বলে তিনি চীনের চারুকলা ইন্সটিটিউট ভতি হন । এই ইন্সটিটিউটে তার পড়ার বিষয় হলো কাপড় রং দেয়া । পড়াশুনার তৃতীয় বছরে লিং ইয়ালি চীনের 'ভ্রাতা' কাপ আন্তর্জিতিক পোশাক ডিজাইন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন , শিক্ষকের সাহায্যে তিনি 'ছত্রাক' নামে এক সেট পোশাক ডিজাইন করেছেন এবং তৃতিয় স্থানের পুরষ্কার পেয়েছেন । এই পুরষ্কার লিং ইয়ালিকে বিরাট অনুপ্রেরনা দিয়েছে এবং তাকে আতমবিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে । তিনি বলেছেন , প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার পর আমি বুঝতে পেরেছি আমার পড়ার বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । জামা-পোশাক তৈরীর বিভিন্ন কাপড় সম্বন্ধে আমি আগের চেয়ে অনেক বেশী জানতে পেরেছি , বতমানে জামা-পোশাক বাজারের বৃহতমো পরিবর্তন বিভিন্ন ধরনের কাপড় ব্যবহার করা । বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের বৈশিষ্ট্য না জানলে উচ্চমানের পোশাক তৈরী অসম্ভব ।
২০০২ সালে লিং ইয়ালি আরেকবার 'ভ্রাতা' কাপ পোশাক ডিজাইন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন । তার ডিজাইন করা পোশাক লাইনিন দিয়ে তৈরী । তার ডিজাইন করা পোশাকে এক শ বিশ ধরনের রং আছে , লাইনিন কাপড়ের এককটি বিন্দু যেন এককটি ডাল , এই পোশাকের রং , স্টাইল আর বৈশিষ্ট্যময় লাইনিন কাপড়ের জন্য লিং ইয়ালি চার শতাধিক প্রতিযোগীর মধ্যে জয়ী হয়েছেন , তিনি একমাত্র প্রথম শ্রেণীর পুরষ্কার জয় পেয়েছেন । তার আঁকা বেশ কয়েকটি ছবি চীনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা পুরষ্কার পেয়েছে ।এই সব ছোট-বড় পুরষ্কার লিং ইয়ালিকে পরিবর্তন করেছে , তিনি আগের চেয়ে আরো পরিশ্রমী হয়েছেন । তিনি বলেছেন, চারুকলা ইন্সটিটিউটের তৃতীয় বছর থেকে আমি আর সময় নষ্ট করি নি । আমি আর দোকানে ঘুরে বেড়ানো ও খেলাধুলায় সময় দিন কাটাই না । আমি আমার সব সময় পড়াশুনা ও পোশাক ডিজাইনের কাজে ব্যবহার করেছি । প্রতিটি পুরষ্কারই আমাকে উত্সাহ দেয় , পুরষ্কার পেয়ে আমি আনন্দ বোধ করি ,এই ধরনের আনন্দ সুন্দর জামা-পোশাক পরা ও খেলাধুলার চেয়ে বেশী , ব্যস্ত হলেও তিনি কষ্ট মনে করেন না ।
লিং ইয়ালি চিত্রশিল্প পছন্দ করেন , চিত্রশিল্পের সব ক্ষেত্রে তার উত্সাহ আছে । যেমন তৈলচিত্র , মুদ্রিত ছবি , জামা-পোশাক ডিজাইন , বস্ত্র কাপড়ের ডিজাইন ইত্যাদি কাজ তিনি করেছেন , তার ডিজাইন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বলে দশক ও ক্রেতাদের সমাদর পেয়েছে । তার ডিজাইন করা গোলাপী ফুর , সবুজ ও লাল রংয়ের পিয়নী ফুলের আয়না , অলংকরের বক্সে দেখতে খুব সুন্দর , বিছানাপত্রের পিয়নী ফুল দেখতে সত্যিকার ফুলের মতো । তার ডিজাইন করা পদ্মা ফুল , ডালিম প্রভৃতি নক্শাও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সমাদর পেয়েছে । তার ডিজাইন সম্বন্ধে লিং ইয়ালি বলেছেন , আমার ডিজাইনের একটি নীতি কখনো পরিবতন হবে না , তা হচ্ছে আমি একজন চীনা । যদিও আমার ডিজাইন করা পোশাক আন্তর্জাতিক প্রবনতার সংগে সংগতিপূর্ণ এবং বিদেশের কাপড় দিয়ে তৈরী হতে পারে , তবে আমার ডিজাইন পোশাক চীনের সংস্কৃতির সংগে বিছিন্ন হবে না । চীনের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আমার ডিজাইনের মূল নীতি । পরবর্তীকালে আমি পোশাক ডিজাইনের মধ্য দিয়ে চীনের সংস্কৃতি গোটা পৃথিবীকে প্রচারের প্রয়াস চালাব , আমি চীনের সংস্কৃতিকে পৃথিবীর প্রবনতার সংগে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করবো , আমার বিশ্বাস আমার এই প্রচেষ্টার কল্যানে আমার ডিজাইন পোশাকে আমার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য চিরকাল থাকবে ।
ব্যস্ত হলেও লিং ইয়ালি প্রতিদিন বই পড়া বন্ধ করেন নি । তিনি বলেছেন , ছোট বেলায় আমি মন দিয়ে পড়াশুনা করি নি , এটা খুব দুঃখের বিষয় । বড় হয়েই আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি বই পড়া কত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার । যতবেশী বই পড়ি , ততই নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারছি । আমি অনেক বই পড়তে চাই , কিন্তু হাতে বই পড়ার সময় কম , তাসত্বেও আমি প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা বই পড়ি । আমি বিশ্বাস করি বই পড়ার মাধ্যমে চীনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আমার উপলব্ধি আরো গভীর হবে , আমি অবশ্যই আরো উন্নত মানের জামা-পোশাক ডিজাইন করতে পারবো ।
|