v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-05-12 21:31:19    
নিউইয়র্কে চীনা নারী ডাক্তারের অভিযাত্রা

cri
    চীনের হ্যনান প্রদেশের শ্যছি জেলার এক ঐতিহ্যিক চীনা ডাক্তারপরিবারে উয়েন রুই-ছিনের জন্ম হয় । ছোটবেলা থেকেই উয়েন রুইছিন -এর স্বপ্ন একজন ডাক্তার হওয়া , কিন্তু তার এই ইচ্ছা পূরণ হয়নি । ১৯৬৭ সালে তার বিয়ে হয় এবং ইংরেজী ভাষা ভাল জানেন বলে তিনি তখনকার গন কমিউনে এক ইংরেজী শিক্ষিকা হন । এক বছর পর তিনি দ্বিধাহীনভাবে শিক্ষিকার কাজ ছেড়ে জেলা মেডিকেল-কলেজে ভর্তি হন । ১৯৭০ সালে তিনি স্নাতক হয়ে থানা -ক্লিনিকে চিকিত্সক হন ।১৯৭৯ সালে তিনি গ্রামে নিজের খরচে ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক খুলেন । চিকিত্সক জীবনে তিনি মালিশ, মা ও শিশু- স্বাস্থ্য রক্ষা সহ অনেক ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন । ব্যবস্থাপনার কারণে লোকসান হওয়ায় তার এই ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যায় ।ব্যর্থ হলেও তিনি মনে মনে বিশ্বাস করেন যে , এমন এক দিন আসবে যেদিন তিনি সত্যিই নিজের মালিকানাধীন এক ক্লিনিক খুলবেন ।

    উল্লেখ করা দরকার যে , এ কয়েক বছরে কাজে ব্যস্ত ও ক্লান্ত হলেও উয়েন রুই-ছিন কখনো ইংগরেজী চর্চা বাদ দেন নি । ৪৯ বছর বয়সে তিনি ইংরেজীর চতুর্থ গ্রেড আর ৫২ বছর বয়সে অষ্টম গ্রেডপরীক্ষার সার্টিফিকেট লাভ করেন।তার এই সাফল্য হ্যনানপ্রদেশের শিক্ষা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল ।বিশ্বিবদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সামনে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ননা করার সময়ে উয়েন রুই-ছিন বলেছিলেন, হয়ত হঠাত এক দিন আমিও বিদেশে পড়তে যাব ।

    ২০০১ সালের আগষ্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভাইপো তার স্ত্রীকেনিয়ে স্বদেশে বাবামাকে দেখতে ফিরে আসেন ।তারা উয়েন রুই-ছিনকে তাদের সংগে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব করেন , উয়েন রুই-ছিন ভাইপোর প্রস্তাব গ্রহন করলেন এবং মনেমনে ভাবলেন ,তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক খুলবেন।

    সহজে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেতে পারেন বলে উয়েন রুই-ছিন ও ভাইপো ভাবতে পারেননি ।কিন্তু তিনি ভিসা পেয়েছেন । "কেন আপনি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান ", মার্কিন দূতাবাসের ভিসার কর্মকর্তা তাকে প্রশ্নটি করলে তিনি উত্তর দিলেন , আমি যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করে যে উপার্জন করব দেশে ফিরে তা দিয়ে এক হাসপাতাল খুলব ।ভিসা কর্মকর্তাটি তার উত্তর শুনে হেসে উঠলেন , যুক্তরাষ্ট্রে উপার্জন করে চীনে হাসপাতাল খোলা! কি আশ্চর্য !কথাটা বলে তিনি দ্বিধাহীনভাবে উয়েন রুইছিনের পাশপোর্টে সীল দিলেন ।

    ২০০২ সালের ২৭শে এপ্রিল উয়েন রুই-ছিন ভাইপোর সংগে যুক্তরাষ্ট্রেরউদ্দেশ্যে বিমানে উঠলেন ।২৮শে এপ্রিল নিউইয়র্কেপৌঁছার পর তিনি পথের ক্লান্তি উপেক্ষা করে এক চীনা মেয়ের সমভিব্যহারে বিশ্ববিখ্যাত ম্যানহাট্টন স্ট্রীটে যান ।তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছেন যে , রাস্তাটিতে একটিও ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক নেই ।বাসায় ফিরে তিনি ভাইপোকে জানিয়েছেন , তিনি ম্যানহাট্টন স্ট্রীটে এক ক্লিনিক খুলবেন ।তার ঘোষনাটি শুনে ভাইপোবিস্মিত হলেন এবং তাকে জানালেন , এক বিদেশী নাগরিকের পক্ষে এটা যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভব নয় ।ভাইপোর কথা বিশ্বাস করেন না বলে তিনি নিজেই সুযোগ খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নিলেন । পরের এক সপ্তাহে তিনি আশেপাশে দশ-বারোটি স্বাস্থ্য ইউনিটে গিয়ে জেনেছেন ,যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিদেশী নাগরিকদের পক্ষে ক্লিনিক খোলা একেবারে সম্ভব নয় ।

    যুক্তরাষ্ট্রে নিজের ক্লিনিক খুলতে পারেন না বলে ওয়েন রুই-ছিন আবাসিক এলাকার এক হাসপাতালে পরিস্কার করার কাজ জোগাড় করলেন ।এটা এক নোংরাও পরিশ্রমীকাজ , তবে এটা হাসপাতালের কাজ , তাই ওয়েন রুই-ছিন পছন্দ করেন।

    এক দিন সকালে ওয়েন রুই-ছিন মেঝ পরিস্কার করছিলেন, এ সময়ে এক মধ্যবয়সী পুরুষ এক ছোটো মেয়েকে কোলে নিয়ে তাড়াহুড়া করে হাসপাতালে প্রবেশ করেন,মেয়েটির এক বাহু নরমভাবে ঝুলে পড়েছে । মেয়েটি ব্যথা ব্যথা বলে চিত্কার করছিল ।ডাক্তার হিসেবে ওয়েন রুই-ছিন এক নজরে বুঝতে পেরেছেন মেয়েটির বাহুর সন্ধি-চ্যুতি ঘটেছে এবং এটা ডাক্তারের জন্যে এক অত্যন্ত সাধারন সমস্যা,যার সমাধান করতে মাত্র দু-এক মিনিট লাগে। একটু ভেবে ওয়েন রুই-ছিন আন্তরিকভাবে সামনে গিয়ে পুরুষটিকে বললেন,আমি ডাক্তার ছিলাম ,আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি ,বিনা খরচে আপনার বাচ্চাকে সাহায্য করতে পারি ।পুরুষটি কথা বুঝেননি মনে করে ওয়েন রুই-ছিন নিজের কথা আবার ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছিলেন এমন সময়ে এক মেয়ে চীনা ভাষায় তাকে বললেন , এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আপনার আচরন এখানকার আইন বিরোধী, মেয়েটি ব্যাখ্যাকরলেন যে, মার্কিন আইন অনুযায়ী ডাক্তারের যোগ্যতাবিহীন লোক রোগীর চিকিত্সা করা নিষিদ্ধ ।

    মেয়েটির সংগে কথাবার্তা বলার মাধ্যমে ওয়েন রুই-ছিন জানলেন, মেয়েটি চীনের সানতুং প্রদেশ থেকে পড়তে এসেছেন ।মেয়েটি তাকে মার্কিন নাগরিকের বাসায় হাউস-মেড হওয়ার প্রস্তাব দিলেন ।তিনি ওয়েন রুই-ছিনকে বলেছেন ,যুক্তরাষ্ট্রনিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইলে প্রথমে নানান দিক থেকে তাকে বুঝে নিতে হবে ।

    ১০ দিন পর তিনি ডিক নামে ৪০ বছর বয়সী ব্যবসায়ীর ছেলের নার্স হলেন ।ডিকের স্ত্রী লিউ লো-ইয়ুও চীন থেকে এসেছেন । মতবিনিময়ে কোনো অসুবিধা না থাকায় ওয়েন রুই-ছিন ডিকের ছেলের নার্সের কাজ নিলেন ।

    ওয়েন রুই-ছিনের দেখাশোনায় ডিকের ৩ বছরের ছেলে আন্দ্রিকার স্বাস্থ্য দিনদিন ভাল হয়ে ওঠে ।তার কাজ এবং আন্তরিকতার জন্য ডিক ও তার স্ত্রী আন্তরিকভাবে তাকে মা ডাকেন, আন্দ্রিকা তাকে দাদী ডাকে ।ওয়েন রুই-ছিন এ পরিবারের সবাইকে ভালবেসেছেন এবং ডিককে নিজের মার্কিন সন্তান বলে মনে করেন ।

    ডিকের স্ত্রী লোইয়ু তিন বছর আগে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন , এর পর তার পিঠ মাঝেমাঝে ব্যথা হয় ।  বড়বড় হাসপাতালে চিকিত্সা করলেও কোনো ফল হয়নি ।এক বৃষ্টির দিন সকালে ব্যথায় লোইয়ুর চিত্কার শুনে ওয়েন রুই-ছিনের মনেউ কষ্ট হয়,তিনি তাকে বলেন,মালিশ হয়ত আপনার পিঠের উপকার হবে ।কিন্তু আপনাদের আইন লংঘন করতে ভয় করি আমি ।মালিশ করে চাপ কমিয়ে দেয়ার পারিবারিক স্বাস্থ্যরক্ষার উপায় আইনে নিষিদ্ধ নয় ,লোইয়ুর ব্যাখ্যা শুনে ওয়েন লোইয়ুকে মালিশ করলেন । কি আরাম ! ৪৫ মিনিটের পর লোইয়ু দীর্ঘ স্বাস ফেলে আনন্দস্বরে বললেন ।এক মাস পর ওয়েন রুই-ছিনের মালিশের প্রভাবেলোইয়ুর পিঠ ব্যথা একেবারে সেরে যায় ।এ খবর দ্রুত ডিক-দম্পতির আশেপাশের প্রতিবেশীদেরও বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ।ডিক সব সুযোগে লোকদের বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং তার চীনা মা ওয়েন রুই-ছিনের চিকিত্সার কৌশল সবার কাছে প্রচার করেন ।ডিক বলেন, এটা চীনা মায়ের পছন্দের কাজ, তিনি তার জন্য কিছু করবেনই ।

    ডিকের সাহায্যে ওয়েন রুই-ছিনের স্বাস্থ্য রক্ষা কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয় ।ওয়েন রুই-ছিনের মালিশ সবার কাছে সমাদর পেয়েছে । তিনি আনন্দের সঙ্গে দিন কাটান ।সময় তাড়াতাড়ি পার হয়ে যাচ্ছে , ওয়েন রুই-ছিনের ভিসার আর মাত্র ১০-১২ দিন বাকি ,দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ।ডিক তাকে বলেন , না , যাবেন না , আপনার ব্রত মাত্র শুরু হয়েছে ।চিন্তা করবেন না , দেখি , কিভাবে আপনার জন্য গ্রীন কার্ড যোগাড় করা যায় !

    কিছু দিন পর , ডিক ওয়েন রুই-ছিনকে ইমিগ্রেশন অফিসে নিয়ে যান , ইমিগ্রসেনের কর্মী তাকে এক গ্রীন কার্ড দিলেন । ডিক পারিবারিক স্বাস্থ্যরক্ষার শ্রেষ্ঠ মানুষ আর রাষ্ট্রীয় স্বার্থের রক্ষক নামে ২ লাখ ডলার দিয়ে ওয়েন রুই-ছিনের জন্য গ্রীন কার্ড অর্জন করলেন ।

    ওয়েন রুইছিন প্রত্যেক দিন নিজের স্বাস্থ্য-কেন্দ্রে কাজ করেন এবং সকাল ৭-৯ ও বিকেল ৩-৪টায় নিজের মার্কিন সন্তানের জন্য কিছু করেন এবং তার সংগে সময় কাটান ।