v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-05-09 20:18:25    
চীন উ সুর জনম্রস্থান

cri
    চীন উ সুর জনম্রস্থান।উ সুচীনের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংগ। বিশেষ এক ধরনের ক্রিড়া-ততপরতা হিসেবে উ সুর আছে অপুর্ব সৌন্দর্য আর ব্যাপক সামাজিক মুল্য।

    চীনে উ সুর ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। চীনের জনসাধারণের মধ্যে উ সুর ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত। সপ্তম শতাব্দিতে চীনের থান রাজত্বকালে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উ সু ক্রিড়াবিদদের নির্বাচিত করা হতো। দশম শতাব্দিতে চীনের সূং রাজত্বকালে পালাক্রমে উ সু প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু আর বিজয়ীদের মানদন্ড স্থির করা হয়।

    চতুর্দশ শতাব্দিতে চীনের মিংরাজকীয় সৈন্যবাহিনীতে উ সু প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উ সু ক্রিড়ার প্রচলন করা হয়। সপ্তদশ শতাব্দিতে চীনের ছিং রাজবংশীয় আমলে জনসাধারণের মধ্যে উ সু প্রতিযোগিতা মাঝেমাঝে অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৪৯ সালে নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উ সু ক্রিড়া জাতীয় ক্রিড়া প্রতিযোগিতা স্থান পেয়েছে।

    ১৯৮২ সালে ডিসেম্বর মাসে উ সু বিষয়ক চীনের প্রথম জাতীয় কর্ম সম্মেলনে উ সু উন্নয়নের বিশেষ নীতি প্রণয়ন করা হয়। এর পর সারা দেশে চীনা বক্সিং প্রণালী সংগ্রহ করার কাজ শুরু হয়। মাত্র তিন বছরের মধ্যে এক শো উনত্রিশটি চীনা বক্সিং প্রণালী পরিমার্জিত করা হয় এবং চীনা বক্সিং বিষয়ক অনেক বই আর ছবির সন্ধান পাওয়া যায়। ১৯৮৫ সালে উ সু ক্রিড়ার মান উন্নত করতে এবং উ সু ক্রিড়াবিদদের উত্সাহ দেয়ার জন্য চীনের জাতীয় ক্রিড়া কমিশন । উ সু ক্রিড়াবিদদের পদমর্যাদার শ্রেণীবিভাগ। নিদ্ধারণ করেছিলো। চীনের অনেক সেরা উ সু ক্রিড়াবিদ ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ শ্রেণীর সার্টিফিকেট পেয়েছেন।

    চীনের হোনান প্রদেশের তেংফেং জেলা শাও লিন উ সুর জন্মস্থান । শাও লিন উ সুর ইতিহাসও সুদীর্ঘ। বিচিত্র শাও লিন বক্সিং নিয়ে উ সুর একটা স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টি হয়েছে। হোনান প্রদেশের সংসান পর্বতের শাও লিন মন্দিরের সন্নাসীরা প্রথমে এই উসুর অনুশিলন করতো বলে তার নাম হয়েছে শাও লিন উ সু। শাও লিন মন্দির নির্মিত হয়েছিলো পঞ্চম শতাব্দিতে। শাও লিন মন্দির বস্তুতঃ একজন জমিদারের খামারের একটা অংশ ছিলো। জমিদারের স্বর্থ আর নিরাপত্তার জন্য এই মন্দিরের সন্ন্যাসীরা উ সু শিখেছিল।ক্রমে ক্রমে উ সু হয়েছে এই মন্দিরের এক দল সন্ন্যাসীর পেশা । সপ্তম শতাব্দির প্রথম দিকে এই মন্দিরের সন্ন্যাসীরা থান রাজবংশীয় শাসন প্রবর্তনে লি সি মিংকে সহায়তা করেছিলেন। লি সি মিং সম্রাট হওয়ার পর এই মন্দিরের সন্ন্যাসীদের প্রচুর মুল্যবান উপহারসামগ্রি দিয়েছিলেন। এজন্য শাও লিন মন্দিরের খ্যাতি অনেকখানি বেড়ে যায়। "শাও লিন মন্দির" নামে চীনের একটি ছায়াছবিতে এই ঐতিহাসিক ঘটনা চিত্রিত হয়েছে।

    কালক্রমে শাও লিন বক্সিং সমৃদ্ধ আর উন্নত হতে থাকে। যুগ যুগ ধরে চর্চা করতে করতে শাও লিন বক্সিং রপ্ত করা যায়। সুকৌশলে কাল্পনিক শত্রুর উপর আঘাত হানা শাও লিন বক্সিংয়ের একটা উল্লেখ্য যোগ্য বৈশিষ্ট্য ।

    বিশ্ব জনগণের মধ্যে চীনের কুংফু অর্থাত উ সুর প্রভাব দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। চীনের উ সু কেমন করে শিখা যায়, বহু সংখ্যক বিদেশী বন্ধু তা জান্তে চান। চীনের বিখ্যাত উ সু বিশেষজ্ঞ আর সিনিয়র কোচ সিয়া পো হুয়া এই প্রসংগে বলেছেন, উ সু শিখার প্রথম পর্যায়ে বিদেশী বন্ধুদের দেহের প্রশিক্ষণ চালাতে হবে। উ সু শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই মৌলিক অনুশীলন অপরিহার্য্য।

    হাটু অল্প বাঁকা করে দাড়াঁনো ,পালাক্রমে আকাশের দিকে পা উঠানো প্রভৃতি মৌলিক অনুশীলনের অংগ। মৌলিক অনুশীলন শেষ হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে সহজ বক্সিং-প্রণালী শেখা যেতে পারে। কোচ থাকলে শিখতে হয়। মৌলিক অনুশীলন করতে এবং সহজ বক্সিং প্রণালী শিখতে শিখতে শিক্ষাথীদের গায়ের জোর বেড়ে যায়। এই খেলার মূল কথাই হলো --দেহকে শক্তিশালী করা।

    আরো গভীরভাবে চীনের উ সু উপলব্ধি করতে আর শিখতে চাইলে চীনের প্রাচীন কালের দর্শনের বই পছতে হবে। কারণ উ সুর আত্মিক চর্চা চীনের প্রাচীন দর্শনিক চিন্তা ধারার সংগে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যারা দীর্ঘকাল ধরে একাগ্রমনে উ সু শেখেন শুধু তারাই চীনের উ সুর বিশাল আর নিগূঢ শিল্পরস উপভোগ করতে পারবেন।

    উল্লেখ্য করা যেতে পারে যে, তায়েকন্ডোর চেয়ে উ সুর দেহভংগীমা অনেক বেশী জটিল আর বৈচিত্র্যময়। উ সু শিখতে গেলে যেটা সহজ সেটা প্রথম আয়ও করতে হবে এবং যেটা কঠিন সেটা পরে শিখতে হবে। এব্যাপারে ধৈর্য্য না থাকলে চলবে না।