v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-04-28 20:25:04    
সেনসি প্রদেশের মর্যাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন

cri
    যে কোনো একটি দেশ আর জনগণ সম্বন্ধে জানতে চাইলে সে দেশের ইতিহাসের কিছু কিছু বিবরণ জানা দরকার। চীনের ইতিহাসে সেনসি প্রদেশের মর্যাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। গত কয়েক বছরে চীনে একটি নতুন প্রবচনের সৃষ্টি হয়েছে, সেটা হলোঃ গত দশ বছরের চীনকে দেখতে চাইলে গুওয়াংদং যান, গত একশো বছরের চীনকে দেখতে চাইলে সাংহাই যান, গত পাঁচ শো বছরের চীনকে দেখতে চাইলে পেইচিং যান, গত পাঁচ হাজার বছরের চীনকে দেখতে চাইলে সেনসি যান। এটা সত্যই যে, চীনের সেনসি প্রদেশের ইতিহাস সুদীর্ঘ এই প্রদেশের পুরার্কীতি আর ঐতিহাসিক কির্তি পর্যাপ্ত বলে সুখ্যাতি পেয়েছে। সেনসি প্রদেশে চীনের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসের চিনহ খুঁজে পাওয়া গেছে।

    চীনের উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত সেনসি প্রদেশ চীনের জাতীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্পত্তিস্থল। ১১ লক্ষ বছর আগে ল্যানতিয়েন প্রাগৈতিহাসিক মানব সেখানে জীবনযাপন করত; ছয় হাজার বছর আগে সিআনের কাছাকাছি বাস-করা প্যাংপো মানুষ সেখানে একটি সম্পূর্ণ মাতৃশাসিত আদীম গ্রাম নির্মান করেছিল এবং এখনও এই গ্রামের অপ্তিত্ব আছে; পাঁচ হাজার বছর আগে চীনা জাতির প্রথম সম্রাট শিয়েনইয়েনের কবরও সেখানে আছে। খ্রীস্টপূর্ব একাদশ শতাব্দী থেকে চীনের ১০টি রাজবংশ সেনসিতে পর পর তাদের রাজধানী নির্মান করেছিল। মোট ৭৯জন রাজা ১১০০ বছর সেখানে শাসন করেছে। সেনসি এক সময় চীনের রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিলো। এই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ইতিহাস সেনসির জন্য অজস্র প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ আর পুরার্কীতি রেখে গেছে। সুতরাং সেনসিকে একটি প্রাকৃতিক যাদুঘর বলা যায়।

    এখানকার বিপুল সংখ্যাক পুরার্কীতি আর মূল্যবান সম্পত্তি চীনের সুদীর্ঘ ইতিহাস আর উজ্জ্বল সভ্যতাকে প্রতিফলিত করেছে। অনেক লোক সেনসি আসার পর অনুভাব করে যে সেখানেই চীনের প্রাচীন ইতিহাসকে স্পর্শ করা যায়। প্রশ্ন হতে পারে, সেনসির পুরার্কীতির বৈশিষ্ট্য কি কি?

    চীনের অন্যান্য প্রদেশ আর শহরের পুরার্কীতির তুলনায় সেনসির পুরার্কীতির বৈশিষ্ট আলাদা। সেটা হলো, সেনসির পুরার্কীতি সম্পদ সেনসির পুরার্কীতিগুলোর মধ্যে বেশীর ভাগ এক হাজারের বেশি বছরের প্রাচীন। চীনের ইতিহাসে হ্যাং আর ঠাং যুগ শুধু যে চীনের সামন্ত তান্ত্রিক সংস্কৃতির সবচেয়ে উজ্জ্বল যুগ তাই নয়, তা তত্কালীন বিশ্ব সভ্যতার কেন্দ্র বলেও গণ্য হতো।বর্তমানে সেনসিতে যে পুরার্কীতিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে তাদের তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ সেই যুগের।

    বিশাল বিস্তার হলো সেনসির পুরার্কীতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য। চীনের ১৩টি রাজবংশ সেনসিতে ছিল। এবং ৭৯জন রাজা সেনসিতে প্রশাসন করেছেন। সুতরাং সেনসির বিভিন্ন জায়গায় বিচিত্র পুরার্কীতি ছড়িয়ে আছে এবং প্রত্যেক পুরার্কীতিই বেশিষ্ট্যসম্পন্ন। সেনসির পশ্চিম অঞ্চলে ক্রীতদাস যুগের স্যান আর চৌ রাজবংশের সাংস্কৃতিক কির্তিগুলো কেন্দ্রীকৃত হয়েছে, সেনসির মধ্য অঞ্চলে তান্ত্রিক সমাজ যুগের শিয়েন, হ্যাণ ,শুয় আর থাং রাজবংশের সাংস্কৃতিক প্রাচীন নিদর্শন পর্যাপ্ত ,সেনসির দক্ষিণ অঞ্চলে আছে প্রাচীনকালের রণক্ষেত্রের ধ্বংসাবশেষ ,উত্তর অঞ্চলে প্রাচীনকালের জলসেচের ধ্বংসাবশেষ,কবর,পাথর-খোদাই আর ধর্মীয় সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ। পুরার্কীতিগুলো সারা প্রদেশে ছড়িয়ে আছে।

    সেনসিতে পুরার্কীতির পরিমাণ এত বেশী, বিস্তার এত বিশাল, রকমারীতে এত বৈচিত্র এবং সেগুলো এতো মূল্য বান যে চীন সহ সারা পৃথীবিতে এটা এখন খুব বিখ্যাত হয়ে উঠেছে, তাই সেনসিকে প্রাকৃতিক ইতিহাস যাদুঘর রূপে চিহিত করা।

    তবে সেনসির পুরার্কীতি আর ঐতিহাসিক কৃতিগুলোর মধ্যে ছিং রাজবংশ আমলের সৈন্যদল আর ঘোড়ার পালের মূর্তিগুলো সবচেয়ে নাম-করা। সে সব ছিলো দু'হাজার বছর আগে ছিং রাজবংশের প্রথম রাজার কবরের সম্পদ।রক্ষী বাহিনী কুচকাওয়াজ অনুশীলন করছে-এমনভাবে সে সব মূর্তিগুলো নির্ম্যণ করা হয়েছে। সে সব মূর্তি উদ্ধার করার পর জাতি সংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান আর সংস্কৃতি সংস্থার দ্বারা বিশ্ব মানব জাতির অবিশিষ্টাংশ বা পুরার্কীতি তালিকায় অনুর্ভূক্ত করা হয়েছে। ছিং রাজবংশ আমলের সৈন্যদল আর ঘোড়ার পালের মূর্তিগুলো সম্বলিত যাদুঘর উন্মুক্ত হওয়ার পর তিন কোটিরও বেশী দেশি বিদেশি পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে। প্রায় একশোটি দেশের প্রধান, প্রেসিডেন্ট এবং রাজা এ মূর্তিগুলো দেখতে গিয়েছেন, তা ছাড়া, বিভিন্ন দেশের ১৭০ জন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রায় এক হাজার জন মন্ত্রী ও এ মূর্তিগুলো দেখতে গিয়েছেন। ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জাখ শিরাখ এ মূর্তিগুলোকে বিশ্বের অষ্টম বিস্সয় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ছিং রাজবংশ আমলের সৈন্যদল আর ঘোড়ার পালের মূর্তিগুলো না দেখলে চীনের ভ্রমন সম্পুর্ণ হয় না। বৃটেনের পর্যটক এরিখ আত্খিন বলেছেন, ছিং রাজবংশ আমলের সৈন্যদল আর ঘোড়ার পালের মুর্তিগুলো তাঁর মনে গভীর রেখা পাত করেছে। এটা সত্যই একটি মহান আবিস্কার এবং দেখার মতো বস্তু।