পেইচিং গ্রহায়তন তথা প্ল্যানেটরিয়াম পেইচিংয়ের পশ্চিমাংশের কর্মব্যস্ত এলাকায় অবস্থিত । এর আঙিনার গেটে ঢুকলে একটি বিশেষ নতুন স্থাপত্যরীতির স্থাপত্যকর্ম চোখে পড়ে । বাইরে থেকে বিরাট কাচের দেয়ালের ভেতরের বিরাট গোলক আর অন্যান্য বেশ কয়েকটি জিনিসের আশ্চয আকৃতি ঝাপ্সাভাবে দেখা যায় । এসব নিয়ে মহাশূণ্যের বিশালতা , গভীরতা আর রহস্যপূণর্তার বৈশিষ্ট্য গড়ে উঠে । এটিই সদ্য-উন্মুক্ত পেইচিং গ্রহায়তনের নতুন ভবন ।
লন্ডন থেকে আসা এন্ড্রু সেন্ডার্স্ হচ্ছেন একজন ডিজাইনার । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন,
"আমি চীনে ভ্রমণ করতে এসেছি । আমি আর আমার ভ্রমণসংগীরা গতকাল এই স্থাপত্যকর্মের সামনে দিয়ে যাই । এটি দেখে আমাদের কৌতূহল জন্মেছে । তাই আজ দেখতে এসেছি । এটি হচ্ছে একটি খুবই মহান খুবই সুন্দর স্থাপত্যকর্ম ।"
পেইচিং গ্রহায়তনের মধ্যে ডিজিটাল স্পেস থিয়েটারই সবচেয়ে বিখ্যাত । এই থিয়েটারে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ডিজিটাল প্রোজেক্ট ব্যবস্থা বসানো হয়েছে । পেইচিং গ্রহায়তনের প্রধান চু চিং সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
"এই ব্যবস্থা , তা কম্পিউটার ব্যবস্থাই হোক আর আলোকরশ্মি-প্রক্ষেপন ব্যবস্থাই হোক , কতর্মানের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তিমানের প্রতিনিধিত্ব করে । এই দুই ধরণের প্রযুক্তির সমন্বয়ে এমন একধরণের ফল পাওয়া যায় যা দশর্করা আগে অন্য কোনো জায়গায় দেখেন নি ।"
সেদিন দেখানো ছবির নাম "জীবন অন্বেষণ" । কৃত্রিম মহাশূণ্যের আওয়াজের মধ্য দিয়ে দশর্করা একবার মহাশূণ্য ভ্রমণ অনুকরণ করেন । গোলাকার থিয়েটারে গম্বুজ ও দেয়াল নিয়ে গঠিত একটি বিশাল পর্দায় দেখানো সুবিশাল মহাশূণ্যে যেনো তারকাগুলো দশর্কদের কাছে জ্বলজ্বল করছে , পৃথিবী যেনো তাদের চোখের সামনে ঘুরছে , তারা যেনো মহাশূণ্যে তারকাগুলোর মধ্যে ছুটছে , এমন কি মংগলগ্রহে আরোহণ করছে , অসংখ্য বালুকা আর পাথর যেনো তাদের সামনে ছুটে আসছে ।
বৃটেনের পযর্টক সেন্ডার্স্ ছবি দেখার পর বলেছেন ,
"যদিও আমি চীনাভাষা বুঝি না তবুও সেই সব চমত্কার চিত্রের মাধ্যমে আমি উপলব্ধি করতে পারি , সুবিশাল মহাশূণ্যে মানুষ কত ছোটো । এটি একটি নতুন গ্রহায়তন । তাই বিশ্বের অন্যান্য পুরানো গ্রহায়তনের চেয়ে এটি বেশী চমত্কার" ।
গ্রহায়তনের নতুন ভবনের মধ্যে থ্রি-ডাইমেন্শনাল ফিল্ম দেখানোর দুটো থিয়েটারও রয়েছে।
হাইটেক ব্যবহার করে দেখানো জ্যোতিবির্দ্যা অনুষ্ঠান দশর্কদের ব্যাপক সমাদর পেয়েছে । প্রতিটিবার উত্সব ও ছুটির দিনে পেইচিং গ্রহায়তনের টিকেট অফিসের সামনে দশর্কদের লম্বা লাইন দেখা যায় ।
থিয়েটারের ছবি ছাড়াও পেইচিং গ্রহায়তনের নতুন ভবনের প্রদশর্নীও অনুরূপভাবে আকষর্ণীয় । বতর্মানে সৌরজগত , গ্যালাক্সি ও চীনের জ্যোতিবির্দ্যার ইতিহাস ইত্যাদি ক্ষেত্রের যে প্রদশর্নী চলছে তাতে সূয সম্পকির্ত প্রদশর্নী কক্ষে দশর্কদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী ।
এই প্রদশর্নী কক্ষের পটভূমি হচ্ছে আকাশ । দশর্করা এই কক্ষে ঢুকলে এমন একটা অনুভূতি পান যে , তারা যেনো আকাশে ঢুকেছেন । একজন মানুষের সমান উঁচু কমলা রঙের সূযের মডেল প্রদশর্নীকক্ষের কেন্দ্রস্থলে দন্ডায়মান । দ্বিখন্ডিত সূযের মডেল থেকে দশর্করা সূযের গঠন পরিষ্কারভাবে জানতে পারেন । এই প্রদশর্নীকক্ষে বসানো সান ভ্যাকিউয়াম টেলিস্কোপের মাধ্যমে দশর্করা তাত্ক্ষণিকভাবে এক দশমিক আট মিটার ব্যাসের আসল সূযের চিত্র দেখতে পারেন । জানা গেছে , এটা হচ্ছে বতর্মানে বিশ্বের যাবতীয় গ্রহায়তনে দেখতে পারা বৃহত্তম সূযের চিত্র ।
পেইচিং গ্রহায়তনের পুরোনো ভবন নতুন ভবনের পশ্চিম পাশে অবস্থিত । প্রাচীন স্থাপত্যরীতির পুরোনো ভবন ও আধুনিক স্থাপত্যরীতির নতুন ভবন পরস্পরের পরিপূরকস্বরূপ । এ দুটোর সমন্বয়ে পেইচিং গ্রহায়তন আরো পূর্ণাংগ ,আরো সুন্দর হয়েছে ।
|