চীন,মায়ানমার,লাওস, খাইল্যান্ড,কাস্পুটিয়া আর ভিয়েত্নাম ---এই ছ'টি দেশের সংগে সংলগ্ন মেকোং নদী একটি আন্তর্জাতিক নদী। ৪ হাজার ৮ শো কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর উত্পত্তিস্থল আছে চীনদেশে। নদীটির চীনা অংশের নাম লান্ছাংচিয়া নদী। হাজার হাজার বছর ধরে মায়ের মতো এই নদীর আদরে তার অববাহিকার ২০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার আওতায় ছ'টি দেশের জনগণ জীবনযাপন করে আসছে এবং অববাহিকার সংস্কৃতি প্রসারিত হয়েছে।
থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশের যুব সংগঠনের সাহায্যে নিখিল চীন যুব ফেডারেশনের উদ্যোগে লান্ছাং চিয়াং ---মেকোং নদীর যুব মৈত্রী জাহাজ পর পর মায়ানমারের থাইল্যান্ডের চিয়াং সেন, লাওসের লোয়া-প্রাবাং প্রভৃতি বন্দরে পৌঁছে এবারকার ছ'টি দেশের যুবক যুবতীদের মৈত্রী ভ্রমন সম্পন্ন করেছে। ভ্রমনের পথে পরিদর্শন, মৈত্রী গাছ লাগানো আর প্রীতি সম্মিলনীর আয়োজন ছাড়াও তারা মেকোং নদীর সুরক্ষা আর উন্নয়নের বিষয়ে যুব ফোরমের আয়োজন করেছেন।
লাওসীয় গণ বিপ্লবী যুব লীগের প্রথম সম্পাদক বুনপোন বুতানাভোং বলেছেন, মেকোং নদীর মৈত্রী জাহাজকে এই অঞ্চলের শান্তিও বন্ধুত্বের একটি প্রতীক বলা যায়। আমি লাওসের যুবক যুবতীদের পক্ষ থেকে এই তত্পরতার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। যুবকযুবতীদের যোগদানে এই নদীর অববাহিকা দর্শনীয় স্থলে পরিনত হবে, ফলে পরিবেশ আরো সুন্দর হবে। বিভিন্ন দেশের যুবক যুবতীরা এই সুযোগ পেয়ে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে আদানপ্রদান চালাতে পারবেন।
ভিয়েত্নামের যুবক বুই কুয়াক হুং বলেছেন, আমার প্রথম এ সব দেশ ভ্রমন নয়, তবে এই ভ্রমনের সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ দিক হলোঃ ছ'টি দেশের যুবক যুবতীরা প্রথম বারের মতো লান্ছাং চিয়াং মেকোং নদী বরাবর একটি সুন্দর ভ্রমন সম্পন্ন করেছেন। এবারকার ভ্রমন ছ'টি দেশের যুবক যুবতীদের মধ্যেকার পারস্পরিক সমঝোতা ও বন্ধুত্ব গভীরতর করতে সহায়তা করেছে।
চৌ সুন চীনের যুবতীদের একজন প্রতিনিধি। তিনি আবেগের সঙ্গে বলেছেন, তিনি যে সব দেশে গেছেন, সে সব দেশের যে বিষয়টি তার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে তা হলো এ সব দেশ নিজেদের জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সুরক্ষা করার উপর খুব গুরুত্ব দেয়। কতকগুলো আনুষ্ঠানিক পরিবেশনার সময় তাঁরা রংবেরত্তের জাতীয় পোষাক পরেন।
এবারকার তত্পরতা যেমন ছ'টি দেশের যুবক যুবতীদের প্রতিনিধিদের ভালবাসা তেমনি বিভিন্ন দেশের সরকারেরও সমর্থন পেয়েছে।
এই তত্পরতার শুরুতে লাওসের প্রধানমন্ত্রী বুংকাং ভরাচি এ উপলক্ষ একটি অভিনন্দন চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি তার অভিনন্দন চিঠিতে বলেছেন, মেকোং নদীর মৈত্রী জাহাজ-এর ভ্রমন প্রকল্প ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যুবক যুবতীদের আদান প্রদানের জন্য এমন একটি ভাল সুযোগ যুগিয়েছে, যার মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতা জোরদার হয়েছে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ভবনের মন্ত্রী ক্রেসে চীনা ওংসে বলেছেন, এই তত্পরতা আয়োজনের জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমি আমার আর প্রধানমন্ত্রী ভরনের যুব ব্যুরো পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে এই মৈত্রী তত্পরতাকে সমর্থন করবো। এবারকার জাহাজে ভ্রমন তত্পরতা আমাদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্যে নয়, চূড়ান্ত উদ্দেশ্য অনুযায়ী যুবক যুবতীরা তাদের যথাযোগ্য অ-তর্নিহিত শক্তি সম্প্রসারিত করবেন এবং ছ'টি দেশের মধ্যেকার সমাজ, রাজনীতি আর অর্থনীতির সহযোগিতা ও আদান প্রদানে যোগদান করবেন।
মায়ানমারের ঐক্য ও উন্নয়ন সমিতির ম্যান্ডলা প্রাদেশিক কার্যনির্বাহী সদস্য উ মংমং বলেছেন, মেকোং নদী উন্নয়নের জন্য কেবল একটি দেশ নয়, বরং নদী অববাহিকার সকল দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। মেকোং নদীর অববাহিকার দেশগুলোর যৌথ উন্নয়ন বিষয়ক কার্যক্রম ১৯৯২ সালে উত্থাপন করা হয়েছে। মেকোং নদী যেমন বিভিন্ন দেশের সীমাতরেখা, তেমনি তার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে পরষ্পর সংযুক্ত করেছে। মেকোং নদীর উন্নয়নের জন্য অববাহিকার দেশগুলো সম্মিলিত চ্যালেন্জ্ঞের সম্মুখীন হচ্ছে।
|