কারিগরী শিল্পের অগ্রগতি ব্যবসা-বাণিজ্যকে প্রাণবন্ত করে তোলে। রাজধানী ছাংআন তখন ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র নগরে পরিণত হয়। ছাংআন ছাড়া লুওইয়াং (বর্তমানকালের হোনান প্রদেশের অন্তর্গত), ছেংতু (সিছুয়ান প্রদেশে), হানতান (হোপেই প্রদেশে), লিনজি ( শানতোং প্রধেশে) এবং নানইয়াং (হোনান প্রদেশে) কর্মমুখর এবং সমৃদ্ধিশালী নগরে লিপ্ত থাকত। আর মাঝারি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজেদের মালিকানাধীন দোকান খুলে কম মূল্যে পণ্যদ্রব্য খরিদ করে বেশি দামে বিক্রয় করত। বহু সংখ্যক যানবাহন ও নৌকা দেশের এক অংশ থেকে অন্য অংশ পণ্যদ্রব্য বহন করে যাতায়াত করাতে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে নিবিড় অর্থনীতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
সবদিক থেকে সামাজিক আর্থনীতিক বিকাশের ফলে দেশের বিভিন্ন জাতিসত্তার মধ্যে আর্থনীতিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। উতি'র রাজত্বকালে পশ্চিম হান বর্তমান কালের কুয়াংতোং, ফুচিয়ান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে প্রিফেকচার স্থাপিত করে এবং এই সকল অঞ্চলের ওপর শাসন ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে দীর্ঘকাল ধরে সিয়োংনু জাতিগোষ্ঠীর হামলার প্রতিরোধে দীর্ঘস্থায়ী এবং বৃহত আকারের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
উ তি'র রাজত্বকালের শুরু (খৃঃ পূঃ ১৪০) থেকে স্যুয়ান তি'র রাজত্বের (খৃঃ পূঃ ৭৩-৪৯) শেষার্ধ এই নব্বুই বছর পর্যন্ত সিয়োংনুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলে। দুই জন খ্যাতিমান সেনাপতি ওয়েই ছিং (খৃঃ পূঃ?-১০৬) এবং ছাও ছ্যুপিং (খৃঃ পূঃ?-১১৭)-এর নেতৃত্বাধীন পশ্চিম হানের সেনাবাহিনী সিয়োংনুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে চূড়ান্ত জয়লাভ করে। খৃঃ পূঃ ৫১ সালে সুয়োংনু আত্মসমর্পণ করে পশ্চিম হানের বশ্যতা স্বীকার করে নেয় এবং উত্তর সীমান্তে হামলা করা থেকে বিরত থাকে।
ইতিপূর্বে সিয়োংনু চীন দেশের পশ্চিমাঞ্চলের (অর্থাত হান যুগের বর্তমান কানসু প্রদেশের ইয়ুমেনকুয়ান গিরিপথের পশ্চিম দিকে অবস্থিত সমগ্র অঞ্চল) বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য অধিকার করে নিয়েছিল। এই সকল রাজ্য নিজের অধিকারে আনার জন্য উ তি খৃঃ পূঃ ১৩৮ সালে চাং ছিয়ানকে (খৃঃ পূঃ?-১১৪) এই অঞ্চলে দূতালি করতে পাঠান। চাং ছিয়ান আবিষ্কার করেন যে এই সুদূর অঞ্চলে বহু পশ্চিমাঞ্চলে যাবার জন্য বর্তমানকালের কানসু প্রদেশের মধ্য দিয়ে সংযোগস্তাপক রাস্তা তৈরী করে এবং পরে, উ সুনবাসীদের সমর্থন লাভ করে পশ্চিম হান সেনাবাহিনী থিয়ানশান পর্বতমালার উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলে সিয়োংনুর শাসন ধ্বংস করে ঐ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোকে পশ্চিম হান বংশের অধীনস্থ সামন্তরাজ্যে পরিণত করে। তখন থেকে চীন এবং মধ্য-এশিয়ার বণিজেরা চীনা পণ্যদ্রব্যম, বিশেষ করে রেশম সুদূর পশ্চিমের দেশসমূহে যেমন তা ইউয়ান, খাং চ্যু, তা সিয়া, পারস্য, ভারতবর্ষ এবং রোম সাম্রাজ্যের প্রধান প্রধান রগরে রপ্তানি আর ঐ সকল দেশে উত্পাদিত পশ্চিম হানের শাসকদের ও মধ্যসমভূমির লোকেদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে থাকেন। সিয়োংনুদের পরাজিত করার পর এবং পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবার পর পশ্চিম হান রাজবংশ তার ক্ষমতার উচ্চ শিখরে উপনীত হয়।
|