চীনের বোহাই উপসাগরে আছে লিয়াও ডং উপদ্বীপ।তার বারো মাইল দূরে আছে একটি ছোট দ্বীপ। সে দ্বীপে অসংখ্যা গর্ত। আর সেই দ্বীপের অধিবাসীরা হলো ভয়ঙ্কর ভাইপার সাপ। এই ভয়ঙ্কর দ্বীপটির আয়তন এক বর্গ কিলোমিটারেরও কম। দ্বীপটির নাম জিয়া ও লংশান ,যার অর্থ ক্ষুদে ড্রাগনের পাহাড়। সেখানে সারাক্ষণ কিলবিল করছে কালো সাপ। দ্বীপের গাছপালা লতা-পাতায় ঝুলে আছে সাপ, মাটির ওপর দিয়ে হিসহিস শব্দে চলে যাচ্ছে সাপ।
প্রাচীন কাল থেকে এই দ্বীপ নিয়ে অনেক রহস্যময় গল্প চালু আছে। চীন সমুদ্রের নাবিকদের কাছে শোনা যায় সেসব গল্প। বড় বড় মাছের সাথে সাপের কিভাবে যুদ্ধ হয়, কিভাবে সাপ ডুবন্ত মানুষকে উদ্ধার করে ইত্যাদি। দ্বীপে আছে প্রায় ১৩ হাজার সাপ আর প্রতি বছর জম্ম হয় প্রায় ১ হাজার সাপ।
এই দ্বীপের পাশে আছে হাইমাও নামক ছোট্ট একটি দ্বীপ। এটি সাগর চিলদের আস্তানা।এটি পাখির দ্বীপ। বসন্ত আর গ্রীষ্ম অনেক যাযাবর পাখি এ দ্বীপে বাসা বাধতে আসে। সাপদের কাছে এসব পাখি খুবই প্রিয়। এক একটি সাপ পুরো একটি পাখিকেই গিলে খায়। আর খায় এ দ্বীপের অন্যতম বাসিন্দা ইঁদুরগুলোকে।
চীন দেশের কবিরাজদের কাছে এ দ্বীপ খুবই প্রিয়। কারণ তাদের ওষুধ তৈরির জন্য সাপের চামড়া ,বিষ ,পিত্তথলি এবং কখনো কখনো মাংস প্রয়োজন। আঠারো রকম প্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি হয় সাপের বিষ থেকে।
১৯৩০ সালের আগে দ্বীপে সাপের সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখ। তখন তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হতো না। এমনও দেখা যেত লোকজন সে দ্বীপে যেত সাপের পুজা করতে। কিন্তু ধীরে ধীরে চিকিত্সাশাস্ত্রের প্রয়োজনে সাপের ব্যবহার বাড়ে।অনেক সময় দেখা গেছে সাপের বিষের দাম সোনার চেয়েও বেশি। এই লোভে দলে দলে লোক সাপ ধরতে লাগল। ১৯৩৭ সালে জাপানিরা এই দ্বীপ থেকে ৭ হাজারের মত ভাইপার সংগ্রহ করে।
বর্তমানে চীন সরকার এ দ্বীপের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে। দ্বীপের সাপ সংরক্ষণে ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। এই দ্বীপে স্থাপিত হয়েছে গবেষণা কেন্দ্র। সেখানে নিরাপত্তা কর্মীরা সারা বছর দ্বীপ পাহারা দিচ্ছে। নিয়ম করা হয়েছে, একবারে একটি সাপ থেকে দুই ফোটার বেশি বিষ সংগ্রহ করা যাবে না। প্রতিবছর এই দ্বীপ থেকে হাজার হাজার কেজি সাগের মাংস রপ্তনি করা হয়।
|