v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-04-22 10:43:06    
জননী দিবসে কমারী মায়ের কথা

cri

তেছিংজুগা এবং তাঁর বাচ্চারা

    বস্তের মৃদু বাতাস বইছে, ফুল ফুটেছে। ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে আবারও মে মাসের সুন্দর বসন্তকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো প্রতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের জননী দিবসও তিব্বতী জাতির সকল মায়ের উত্সব। মায়ের মূখ ও আনন্দ হিসেবে ঐদিন তারা সুন্দর ক্যারন্যাশন ফুল আর বাচ্চাদের শুভেচ্ছা পেতে পারেন। ন'টি বাঁচার তিব্বতী জাতির নারী তেছিংজুগা বাচ্চাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন পাওয়ার পর আরো উচ্ছ্বসিত। তার সুখে হাসি ফুটেছে।

  

শিশু পল্লীতে মাত্র একজন হান জাতির কুমারী মা

    তিব্বতের লাসা শহরের এস.ও.এস শিশু পল্লীতে তেছিংজুগা একজন কর্মী। তাঁর কর্তব্য গ্রামের শিশুদের জীবনযাপন দেখাশুনা করা। যদিও তিনি অবিবাহিত, কিন্তু তিনি ওখনকার ন'টি শিশুকে নিজের সন্তান বলে মনে করেন।

    লাসা শহরের এস.ও.এস শিশু পল্লী আন্তর্জাতিক এস.ও.এস শিশু পল্লী সংস্থা আর চীনের বেসামরিক প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চার বছর আগে তা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। বর্তমানে এই পল্লীতে তিব্বতের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ১৫৬জন অনাথ জীবনডযাপন করছে। অন্যান্য সাধারণ পরিবারের মতো এ সব শিশু যেমন কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের আদর পেয়েছে, তেমনি প্রথানুগ শিক্ষাও গ্রহণ করছে। পল্লীটির প্রধান তালভা বলেছেন, বর্তমানে পল্লীর ৫০জন শিশু প্রাথমিক স্কুলে পড়ছে। তা ছাড়া যাদের বয়স ছ'বছরের কম, তাঁরা কিন্ডারগ্যার্টেনে শিক্ষা গ্রহণ করছে। গ্রামে শিশুদের বৈশিষ্ট ও সখ অনুসারে কলাসের পর তাদের জন্য বহু সাংস্কৃতিক ও শরীর চর্চা তত্পরতা আয়োজন করা হয়।

 

অন্য একজন মা এবং তাঁর বাচ্চারা

    শিশু পল্লীতে বসবাসকারী শিশুরা যাতে পরিবারের মতো আদর ও দেখাশুনা ভোগ করতে পারে, সেজন্য গ্রামে এই একশো পঞ্চাশাধিক শিশুকে ১৭টি পরিবারের ভাগ করা হয়েছে। প্রতি পরিবারে একজন মা তাদের দেখাশুনার দায়িত্ব পালন করেন। এই সব মা মতো অল্পবয়সী মেয়ে। শিশুদের সর্বসাধ্য দিয়ে লালন পালন আর দেখাশুনা করার জন্য তাঁরা নিজেদের ভালবাসা ও বিয়ের জীবন পরিত্যাগ করেছেন। তেছিংজুগা তো এই পল্লীর একজন মা।

    তেছিংজুগা ও তাঁর ন'টি শিশু এই পল্লীর একটি বাড়িতে থাকেন। যখন আমি তাদের বাড়িতে প্রবেশ করলাম, তখন শিশুরা রুম পরিস্কার করছিল। তখন একটি নিবিড় ঘরোয়া পরিবেশ বিরাজ করছিল।

  

শিশু পল্লীর দৃশ্য

  তেছিংজুগা তিব্বতের দক্ষিণাংশের একটি মাধ্যমিক স্কুলের একজন কর্মী ছিলেন। তিনি সংবাদপত্রে শিশু পল্লীতে মা নিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞাপন দেখে ঐ কাজের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "হয়তো তার ভাগ্য অথবা এ সব শিশুর সঙ্গে তাঁর নিয়তির বন্ধনের টানে রেজিষ্ট্রেশনের শেষ দিন তিনি শিশু পল্লীতে "মা"এর চাকরির আবেদন জানিয়েছেন। নানা পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি পল্লীটির একজন অল্পবয়সী মা হয়েছেন।

লাসা শহরের মেয়র এবং বাচ্চারা

    অজ্ঞাত পরিচয় অনাথদের দেখাশুনার কাজ খুব সহজ নয়। প্রথম দিকে তাদের সঙ্গে আদান-প্রদান খুব কঠিন ছিল। হয়তো সহায়হীন আর নিরাশ্রয় বলে তারা অন্যদের সন্দেহোএ দৃষ্টিতে দেখতো এবং কোনো কোনো সময়ে অসহযোগিতা দেখাতো।

    অনাথদের সঙ্গে আদান-প্রদানের অসুবিধা দূর করার সঙ্গে সঙ্গে তেছিংজুগা ধীরে ধীরে শিশু পল্লীর কাজের তাত্পর্য আর মা হিসেবে কষ্ট ও পরিশ্রম অনুভব করেছেন। তিনি শিশুদের আদর-যত্ন করেছেন। ধাপে ধাপে তাঁর স্নেহ ও মায়া-মমতা সৃষ্টি হয়।

     চার বছর ধরে অধিক থেকে অধিকতর অনাথ শিশু এই পল্লীতে প্রবেশ করেছে। তেছিংজুগার বাড়িতেও আরো বেশি শিশু এসেছে। এখন তাঁর পরিবারে শিশুর সংখ্যা নয়।

    তেছিংজুগার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার সময়ে একটি ছেলে মাঝে মাঝে আমাদের চা খেতে দিচ্ছিল। ছেলেটি বড় হয়েছে এবং লম্বা হয়েছে। তার নাম রেনছিংতুজে। মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব ভাল। তেছিংতুজে বলেছেন, সে একটি খুব প্রিয় ছেলে, আমার প্রতি খুব যত্ন নেয়। যখন আমি অসুস্থ, তখন সে আমাকে পানি খেতে দেয় আর আমার কাপড়-চোপড় কাচে।

    জুগা বলেছেন, পল্লীর কাজে কষ্ট ও অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও তিনি খুব খুশি। শিশুরা দিন দিন বড় হচ্ছে দেখে তাঁর মন খুব ভাল।

    যখন তেছিংজুগার জন্মদিন, তখন শিশুরা তাকে অভিনন্দন কার্ড ও উপহার দেয়। তাঁর কনিষ্ঠ ছেলেও তাঁকে অভিনন্দন জানায়: "মা, তোমার জন্মদিনের সুখ কামনা করি।" কথা বলতে বলতেই গড়িয়ে পড়ে জুগার চোখ থেকে।

অল্পবয়সী এই মায়ের প্রতি তাদের ভালবাসা ব্যক্ত করা জন্য জননী দিবসে শিশুরা মায়ের জন্য কয়েকটি গান গায়।

    শিশুদের কণ্ঠে গান শুনে আমরা খুব সুগ্ধ হয়েছি। একটি অল্পবয়ী মা ন'টি অনাথকে লালন-পালন করেন এবং তাদের জীবনের সব কিছু শিখিয়ে দেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর সমস্ত স্নেহ ও প্রয়াস দিয়ে অমূল্য অবদান রেখেছেন। মা হিসেবে নিঃস্বার্থ মায়া-মমতা এবং অকৃত্রিম স্নেহের জবাবে এ সব অনাথ শিশুরাও কৃতজ্ঞ, তা স্পষ্ট বোঝা যায়।