যদি আপনারা উত্তরচীনের সিনচিয়াং উইঘুর জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ,অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইত্যাদি জায়গায় বেড়াতে যান তাহলে আপনারা দেখতে পাবেন ,আকাশ ও ভূপৃষ্ঠের মাঝখানে বিশাল শূন্যে কিছু সাদা থাম সুশৃংখল ও সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ,থামগুলোর উপরের বায়ু-চালিত ভেন হুয়ীলগুলো নীলাকাশে সাদা মেঘের মধ্যে বাতাসে ঘুরছে , দৃশ্যটা খুবই সুন্দর । আসলে স্থানীয় অধিবাসীরা বায়ুশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুত উত্পাদন করছেন । আজকের "বিজ্ঞান বিচিত্রা" অনুষ্ঠানে চীনে বায়ুশক্তি ব্যবহারের অবস্থা সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি চৌ চিন ছাও ।
এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণপূবাংশে ,প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম তীরে অবস্থিত চীনে মওসুমী বায়ু প্রবল । বায়ুশক্তিসম্পদের বাষির্ক মোট মজুদের পরিমাণ একশো ষাট কোটি কিলোওয়াট । এগুলো প্রধানত: চীনের উত্তরপূব, উত্তর ও উত্তরপশ্চিমাংশের তৃণভূমি ও গোবি মরুভূমি এবং দক্ষিণপূবাংশের উপকূল ও দ্বীপ ইত্যাদি জায়গায় বিন্যস্ত । বায়ুর শক্তি বিরাট , ব্যবহার সহজ , দূষণহীন , পুনজর্ন্মক্ষম ইত্যাদির সত্গুণ আছে । বুদ্ধিমান চীনারা অনেক আগেই বায়ুশক্তি ব্যবহার করে নিজেদের সেবা করতে শিখেছেন ।
এক হাজার সাতশো বছরেরও বেশী সময় আগেই চীনারা কাঠের তৈরী বায়ু-চালিত কল ব্যবহার করে পানিসম্পদ উত্তোলণ করতে জেনেছেন । কিছু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এপযর্ন্ত এইধরণের প্রাচীন বায়ু-চালিত কল সংরক্ষিত আছে । এগুলো ইতিহাসের সাক্ষ্যে পরিণত হয়েছে । যুগের অগ্রগতির সংগে সংগে এখন চীনে পানি উত্তোলণ , বিদ্যুত উত্পাদন , নৌচলাচল ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে বায়ুশক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে । প্রথমে বায়ুশক্তি ব্যবহার করে পানি উত্তোলণের কথাই ধরা যাক । বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের পর চীনে পানি উত্তোলণে বায়ুশক্তি ব্যবহারের প্রযুক্তির বেশ বিরাট উন্নতি হয়েছে ।
এখন চীনে দু'ধরণের বায়ু-চালিত পানি উত্তোলণ যন্ত্রসরঞ্জাম আছে । এক ধরণের যন্ত্রসরঞ্জাম হচ্ছে লো-লিফ্ট ও বিরাট প্রবাহের । এগুলো প্রধানত: উপকূল ও দ্বীপ অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের পানি উত্তোলণ করে লবণ তৈরী , জলজ দ্রব্য লালনপালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় । আরেক ধরণের যন্ত্রসরঞ্জাম হচ্ছে হাই-লিফ্ট ও ছোটো প্রবাহের । এগুলো প্রধানত: উত্তরচীনে ভূগর্ভে পানিসম্পদ-সমৃদ্ধ অঞ্চলে ভূগর্ভের পানি উত্তোলণ করে মানুষ ও গবাদীপশুর পানীয় জলের চাহিদা মেটানো , কৃষিজমিতে জলসেচ ও তৃণভূমির সংস্কার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় । ডিজেল-চালিত যন্ত্রসরঞ্জামের তুলনায় এগুলোর খরচ কম , তাছাড়া দূষণহীন , অথর্নৈতিক ও সামাজিক ফলপ্রসূতাও অপেক্ষাকৃত ভালো ।
বায়ুশক্তির আরেকটি বিরাট ভূমিকা হচ্ছে বিদ্যুত উত্পাদন । বিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে এপযর্ন্ত চীনে একশোটিরও বেশী ধরণের বায়ু-চালিত বিদ্যুত উত্পাদন যন্ত্রসরঞ্জাম উদ্ভাবিত হয়েছে । বায়ু-চালিত বিদ্যূত উত্পাদন যন্ত্র নিমার্ন শিল্প প্রাথমিকভাবে গড়ে উঠেছে ।
উত্তরপশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইঘুর জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দাবান শহর , উত্তরচীনের অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী হোহ্হট এবং দক্ষিণপূব চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের কিছু কিছু এলাকায় বৃহত্ ও মাঝারী ধরণের বায়ুশক্তি-চালিত বিদ্যুত উত্পাদন যন্ত্রসরঞ্জাম নিয়ে বিদ্যুত উত্পাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে । এই সব যন্ত্রসরঞ্জাম দিয়ে কেন্দ্রীভূতভাবে উত্পাদিত বিদ্যুত কাযর্করভাবে স্থানীয় অধিবাসীদের উত্পাদন ও জীবনযাত্রায় বিদ্যুতের অভাবের সমস্যা সমাধান করেছে । চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্ষুদ্রাকারের বায়ু-চালিত বিদ্যূত উত্পাদন যন্ত্রসরঞ্জামের ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলা হচ্ছে । বায়ুশক্তিসম্পদে সমৃদ্ধ অন্তর্মংগোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল , ছিনহাই প্রদেশ ও সিংচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রত্যন্ত কৃষি ও পশুচারণ এলাকায় ক্ষুদ্রাকারের বায়ু-চালিত বিদ্যুত উত্পাদন যন্ত্রসরঞ্জাম ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে । এই সব অঞ্চলে বিদ্যুত থাকার দরুণ কৃষক ও পশুপালকরা আলোর ব্যবস্থা করতে পারেন এবং টেলিভিশনও দেখতে পারেন । জীবনযাত্রার অনেক সুবিধা হয়েছে ।
জানা গেছে , এখন চীনের বাষির্ক ক্ষুদ্রাকারের বায়ু-চালিত বিদ্যুত উত্পাদন যন্ত্রসরঞ্জাম উত্পাদনের পরিমাণ দশ হাজারের বেশী । চীনের অভ্যন্তরের চাহিদা মেটানো ছাড়া বিদেশেও এগুলো রফতানি করা হচ্ছে । ডেনমার্ক , যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি উন্নত দেশের তুলনায় চীনের বৃহদাকারের বায়ু-চালিত বিদ্যুত উত্পাদন যন্ত্রসরঞ্জাম গবেষণা ও তৈরীর মান এখনো অপেক্ষাকৃতভাবে পশ্চাত্পদ । কিছু কিছু দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
তাছাড়া পূবর্চীনের উপকূলীয় অঞ্চলে নৌচলাচল ও তাপ আহরণের ক্ষেত্রেও বায়ুশক্তিসম্পদ ব্যবহার করা হচ্ছে ।
|