থাং রাজবংশের শেষ পর্যায়ে মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে পাঁচ রাজবংশ ও দশ রাজ্যের খন্ডিত অবস্থা দেখা দেয় । ৯৬০ সালে জেনারেল চাও খুয়াং ইন সুং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন , সুং রাজবংশের রাজধানী ছিল খাইফোং । সুং রাজবংশ তিন শ' বছর স্থায়ী ছিল । সুং রাজবংশে যদিও ওয়াং আন সি সংস্কার অভিযান চালিয়েছেন তবুও জমি গ্রাম ও আমলাদের দুর্নীতির দুরুন সুং রাজবংশ থাং রাজবংশের মতো শক্তিশালী ছিল না । এই সময়পর্বে বিজ্ঞান ক্ষেত্রের সাফল্য হলো দিকনির্দেশক যন্ত্র , মুদ্রন কৌশল আর বারুদের আবিস্কার ও ব্যবস্থার , এর মধ্যে উত্তর সুং রাজবংশের পি সেন আবিস্কার ইউরোপের চেয়ে চার শ' বছর আগে মুদ্রন কৌশল করেছেন । সুং রাজবংশের বৈজ্ঞানিক সেন খো প্রাচীনকালের একটি বৈজ্ঞানিক রচনা লিখেছেন , এটির নাম হচ্ছে "মুনসি পিথান" ।
সুং রাজবংশের শেষ দিকে চীনের উত্তরাংশের মঙ্গলিয় জাতি ক্রমেই শক্তিশালী হয় । ১২০৬ সালে মঙ্গলিয় জাতির প্রধান থিয়েমুচেন মঙ্গলিয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন । ১২৭১ সালে হুপিলিয়ে ইউয়ান রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১২৭৬ সালে সুং রাজবংশের পতন ঘাটিয়ে উত্তর দক্ষিণ চীনকে একীভুত করেন । ইউয়ান রাজবংশের রাজধানী ছিল তা তু , অর্থাত্ আজকের পেইচিং শহর । ইউয়ান রাজবংশের আসলের প্রথম রাজা কৃষিকে গুরুত্ব দেন , হলুদ নদী সংস্কার করেন ফরে কৃষি উত্পাদন ও বস্ত্রশিল্পের দ্রুত প্রসার হয় ।
ইউয়ান রাজবংশের শেষ আমলে মঙ্গলিয় শাসকরা হান জাতির লোকদের উপর অত্যাচার করেন । ১৩৬৮ সালে কৃষক-বিদ্রোহের প্রধান চু ইউয়ান চাং ইউয়ান রাজবংশের শাসন উচ্ছেদ করে মিং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন । মিং রাজবংশের রাজধানী প্রথমে নানচিং আর পরে পেইচিংয়ে স্থানান্তরিত হয় । মিং রাজবংশের আমলে কৃষি ও হস্তশিল্প উন্নত ছিল , পন্য-অর্থনীতিরও দ্রুত প্রসার হয় । মিং রাজবংশের প্রথম দিকে চীনের নৌচলচল শিল্প পৃথিবীর শীর্ষস্থানে ছিল , বিখ্যাত নৌ-পরিব্রাজক চেন হো সাত বার নৌবহর নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া , ভারত , আরব-জগত্ ও পূর্ব-আফ্রিকা প্রদক্ষিণ করেন , তার সমুদ্র যাত্রা বিদেশের সঙ্গে মিং রাজবংশের আদান-প্রদান প্রসারে সহায়তা করেছে ।
১৬৬৯ সাল থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত সময় ছিল ছিং রাজবংশের আমল , ছিং রাজবংশের রাজধানী ছিল পেইচিং । অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও উন্নতির জন্য ছিং রাজকীয় সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছিল । ফলে কয়লা খনন , লোহা ঢালাই , লবন উত্পাদন , কাগজ তৈরী ইত্যাদি হস্ত-শিল্পের যথেষ্ট প্রসার হয় । ছিং রাজবংশের শেষ দিকে রাজকীয় সরকার রুদ্ধদ্বার নীতি কার্যকরী করে , ফলে ছিং রাজবংশ ক্রমেই দুর্বল হয়ে যায় । ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ছিং রাজবংশ পশ্চিমাদেশগুলোর আক্রমনের সম্মুখীন হয় , তারা ছিং রাজবংশের রাষ্ট্রীয় ভুভাগ গ্রাম করে আর সার্বভৌমত্ব পদদলিত করে । ১৯১২ সালের পয়লা জানুয়ারী চীনের গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথিকৃত্ সেন ইয়াত সেন নানচিংয়ে চীন প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন । সেই বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ছিং রাজবংশের শেষ রাজা সুয়েন থুং পদত্যাগ করেন । ফলে ছিং রাজবংশের ঘটে এবং পতন চীনের দু হাজার বছর স্থায়ী সামন্ততান্ত্রিক রাজকীয় শাসনের অবসান ঘটে ।
|