v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-04-18 14:47:32    
তিব্বতী চা চ্যু গ্রাম

cri
    চা চ্যু তিব্বতী জাতির একটি গ্রাম । তা দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সি ছুয়াং প্রদেশের কান চি তিব্বতী জাতির স্বায়ত্ত শাসিত বিভাগে অবস্থিত । গ্রামটি বড় নয় , তা পাহাড়ের মাঝখানের সবুজ গাছপালার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে । গ্রামের তিরিশাধিক কৃষক পরিবার দুর্গের মতো একটির পর একটি সাদা দালানে বাস করে । দালানের উপরে রঙবেরংয়ের বৌদ্ধসুত্রসম্পন্ন পতাকা পত পত করছে, শাদা শাদা মেঘ পতাকাগুলোর মধ্যে ভেসে উঠলো আর গোটা গ্রাম দেখতে যেন একটি তৈল চিত্র ।

    চা চ্যু তিব্বতী গ্রামে যাওয়ার জন্য একটি দীর্ঘ পাহাড়ী পথ চলতে হয় । নদীতে পানির শব্দ লাইট মিউজিকের মতো হাওয়ার মধ্যে ভেসে উঠলো । পথের দু'পাশে সর্বত্রই ফল গাছ দেখা যায় , তা থেকে জোরালো সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তিব্বতী গ্রামের নিকটে গেলে চোখে পড়ল , পাথর ও মাটি দিয়ে নির্মিত তিব্বতী দালানগুলো সুশৃংখলভাবে বিন্যস্ত, দালানের ছাদের চার কোণের প্রত্যেক কোণের দিকে একটি ছোট প্যাগোডা আছে । তার উপরে একটি বৌদ্ধসুত্রসম্পন্ন পতাকা ঝুলানো । দালানের ছাদের উপরে সোনালী ভুট্টা আর লাল রঙের মরিচ সূর্য আলোতে ঝকঝকে উজ্জ্বলতা ছড়ালো । তিব্বতী গাইড মিঃ চেন পা সংবাদদাতাকে বলেছেন , তিব্বতী দালান যেমন সুন্দর , তেমনি ব্যবহারযোগ্য ।

    তিব্বতী দালানের তিন তলা ও চার তলা দুই ধরনের আছে । নীচ তলায় ভান্ডার খানা। ওখানে খাদ্য আর নানা রকমের বস্তু সংরক্ষিত। দু'তলায় স্বাগতিকের বৈঠক , রান্না ঘর , বেড রুম আর বৌদ্ধমূর্তি উপাসনা কক্ষ আছে । ওখানে স্বাগতিকরা প্রতিদিন বৌদ্ধসুত্র পাঠ করেন । তিন তলার কক্ষগুলো সাধারণতঃ অতিথিদের জন্য বন্দোবস্ত করা হয় । তিব্বতী দালান প্রধানতঃ পাথর , মাটি আর কাঠ দিয়ে নির্মান করা হয় । ওটা শক্তিশালী , ব্যবহারযোগ্য এবং শীতকালে গরম আর গ্রীষ্মকালে আরামদায়ক ।

    আমরা তিব্বতী দালানে প্রবেশ করে দেখলাম, লাল রংভিত্তিক কক্ষ খুব পরিপাটি । চার দেয়াল , কক্ষের দরজা আর খুঁটির উপরে প্রাকৃতিক দৃশ্য বা ধর্মীয় কাহিনীভিত্তিক ভাস্কর্যে সজ্জিত দেয়াল চিত্র আছে । সরু কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দু'তলায় উঠে দেখা যায় স্বাগতিকের রান্না ঘর আর শয্যাকক্ষ । কক্ষের কেন্দ্রস্থলে একটি উনুন আছে । তার পাশে কাঠ দিয়ে তৈরী একটির পর একটি টেবিল রাখা হয় , টেবিলের নিকটে একটি সৌন্দর্যময় তিব্বতী শয্যা আছে । পরিবার পরিজন শয্যার উপরে বসে খেতে পারেন । খাওয়ার সংগে সংগে নাচ গান করতে পারেন এবং ক্লান্ত হলে তারা শয্যায় শয়ন করতে পারেন ।

    নাচ গানে পারদর্শী তিব্বতী জাতি কুওজুয়াং নামে এক ধরনের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নাচ সৃষ্টি করেছে । এটা এমন এক ধরনের দলগত নৃত্য , যাতে আনন্দের অনুভুতি ব্যক্ত করা যায় । এই ধরনের নাচ যেমন সপরিবার, তেমনি কয়েক শো জনের সমাবেশের জন্য উপযোগী । নাচের সময়ে খুব জাঁকজমক আছে । চা চ্যু তিব্বতী গ্রামবাসীরা নিপুনভাবে এই রকম নাচ করতে পারেন । বাড়িঘর নির্মান , বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন আর অতিথিদের আগমন প্রভৃতি কাজ থাকলে গ্রামবাসীদের মধ্যে পরস্পরকে সাহায্য করা যায় । কাজ শেষে উদযাপন উপলক্ষে সবাই কুও জুয়াং নাচ করেন । সংবাদদাতার স্বাগতিক চাইয়াংরামের বাসায় বহু প্রতিবেশী এসেছেন । আমি তাদের সংগে কুওজুয়াং নাচ করেছি।

    তিব্বতীরা জামা- পোষাকের উপর খুব গুরুত্ব দেন । চা চ্যু তিব্বতী গ্রামবাসীরা যে এত সুন্দর পোষাক পরেন , তা সংবাদদাতার কল্পনাও ছাড়িয়ে গেছে । নারীরা শাদা ও লাল রংয়ের তিব্বতী লম্বা পোষাক পরেন , তাদের বুকের সামনে আর মাথার উপরে এক গুচ্ছ লীল ও লাল রংয়ের হীরা সজ্জিত আছে । পুরুষরা গাঢ় রঙের তিব্বতী লম্বা পোষাক পরেন , তাদের কোমর আর বুকে রূপার অলংকার আর মুক্তায় সজ্জিত ।

    চা চ্যু গ্রামে প্রাচুর্যময় পর্যটন সম্পদে সমৃদ্ধশালী । যেমন আমাদের স্বাগতিক চাইয়াংরামের তিন সন্তান আছে । আগে তারা কৃষিকর্ম করতেন । জীবনযাপন তো মোটামুটি চলতো , খাওয়ার সমস্যাও ছিল না , কিন্তু কোনো মতেই ধনী বলা যেতো না । গ্রামে দুর্গের মতো তিব্বতী দালান সংরক্ষিত আছে । গত কয়েক বছরে অধিক থেকে অধিকতর পর্যটক ওখানে আসেন । চাইয়াংরামের বাড়ি বড় , দিনে তিরিশাধিক অতিথির থাকার জন্য ব্যবস্থা করা যায় ।

    বিপুল পর্যটকের আগমন স্থানীয় গ্রামবাসীদের জন্য প্রচূর আয় বয়ে এনেছে । এতে তাদের নিজেদের জীবনযাপনও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে । পড়াশুনার জন্য চাইয়াংরাম তার তিন সন্তানকে গ্রাম থেকে দূরের একটি স্কুলে পাঠিয়েছেন । এই স্কুলের শিক্ষার মান উঁচু , তবু শিক্ষার ফিও বেশী । বাইরের সংগে আদান প্রদান বেড়ে যাওয়ার সংগে সংগে গ্রামবাসীদের জ্ঞানও উন্নত হয়েছে । তাদের বেশী ভাগই হান ভাষা বলতে পারেন , কেউ কেউ ইংরেজীতে কিছু কিছু কথাবার্তাও বলতে পারেন । চাইয়াংরাম আমাকে বলেছেন , পর্যটন কাজ চালাবার ফলে আয় বৃদ্ধি পেয়েছে আর জ্ঞানও ব্যাপক হয়েছে । নানা অঞ্চলের পর্যটকরা এই গ্রামে আসেন । তাদের খাওয়া-দাওয়া আর রীতি-নীতিও ভিন্ন । তাদের মধ্যে কিছু লোক রান্না ঘরে এসে আমাদের ওদের স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যঞ্জন রান্না করতে শেখান । হংকংয়ের অতিথিরা হাল্কা তেল ও লবণ সহ ব্যঞ্জন খেতে পছন্দ করেন । ধীরে ধীরে আমরা অতিথিদের চালচলন কিছুটা জানতে পেরেছি ।

    চা চ্যু তিব্বতী গ্রামবাসীরা মন খোলা , দয়ালু আর দীর্ঘায়ু । গ্রামের বেশ কিছু সত্তর-আশি বছর বয়স্ক প্রবীণরাও কৃষি ক্ষেতে চাষ করেন । তাদের মুখে হাসি আছে । অতিথিকে দেখে তারা 'জেসিতেলা' বলেন , তিব্বতী ভাষায় তার অর্থ শুভেচ্ছা ও প্রীতি । এতে দূর থেকে আসা অতিথিরা আন্তরিকতা বোধ করেন।

    চৌ সিয়াও লিন আর তার স্ত্রী এই জায়গা পছন্দ করার জন্য এই গ্রামে বাস করেন । তিনি বলেছেন , তেন বা জেলায় অবস্থিত চা চ্যু গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোরম । তারা বহুবার এই জেলায় বেড়াতে এসেছিলেন । এখানকার দৃশ্য ঋতু বদলের সাথে বদলে যায়। ধীরে ধীরে এই দর্শনীয় স্থান তাদের মনের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে । চৌ সিয়াও লিন বলেছেন , আমরা এই গ্রামে ঘুরে ঘুরে বহু ছবি তুলেছি । এসব ছবি নেটেও প্রকাশিত হয়েছে । যাতে আরো বেশী পর্যটককে আকৃষ্ট করা যায় ।

    ছবিগুলোঃ   ২