প্রশ্নকর্তাঃ বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার চকশিয়ালের মোঃ আমিনুল ইসলাম ।
উত্তরঃ পাকিস্তান হচ্ছে সবার আগে চীনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের অন্যতম। ১৯৫১ সালের ২১ মে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর দু'দেশ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতির ভিত্তিতে সুপ্রতিবেশীসূলভ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং পারস্পরিক উপকারিতামূলক সম্পর্ক সুষ্ঠূভাবে উন্নতি হয়েছে।
১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সময় হচ্ছে চীন-পাক সম্পর্কের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এই সময় দু'দেশের সম্পর্কে ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে, পাকিস্তান চীনের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন দেশের পরিবর্তে চীনের প্রতি বন্ধুভাবান্ন দেশে পরিণত হয়েছে, চীন-পাক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদের প্রতিটি অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপিত দেশ হিসেবে জাতি সংঘে চীনের বৈধ অধিকার পুনরুদ্ধার সমর্থন করেছে। বিংশ শতাব্দীর ৯০'র দশকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, কিন্তু চীন-পাক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের প্রভাব এড়িয়ে অব্যাহতভাবে সামনে এগিয়ে গিয়েছে। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট চিয়াং ছে মিন আমন্ত্রণক্রমে পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন। আর এবার চীনের প্রধানমন্ত্রী সফর হলো চীন-পাক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দু'দেশের নেতারা একবিংশ শতাব্দীর সম্মূখীন চীন-পাক সার্বিক সহযোগিতামূলক অংশীদারী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একবিংশ শতাব্দীতে প্রবেশের পর চীন-পাক সার্বিক সহযোগিতামূলক অংশীদারী সম্পর্ক আরও গীরভাবে বিকশিত হয়েছে। দু'পক্ষের উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ আরও ঘন ঘন হয়েছে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক আস্থা নিরন্তরভাবে জোরদার হয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর ৫০'র দশকের প্রথম দিকে চীন ও পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৩ সালের জানুয়ারীতে, দু'দেশের প্রথম বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৮২ সালের অক্টোবরে চীন -পাকিস্তান অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতা সংক্রান্ত সংযুক্ত কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দু'পক্ষের মিলিত প্রচেষ্টায় দু'দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বিশেষ করে ৯০'র দশকের পর চীন ও পাকিস্তানের আমদানি ও রপ্তানি মূল্য অপেক্ষাকৃতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৩ সালে দু'দেশের বাণিজ্যিক মূল্য ২৪০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যা ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
চীন আর পাকিস্তানের মধ্যে বরাবরই ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বজায় রয়েছে। ১৯৬৫ সালের মার্চ মাসে দু'দেশে সরকারী প্রতিনিধিরা রাওয়ালপিন্ডিতে সাংস্কৃতিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, এবং একই বছর প্রথমবার বার্ষিক সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যকরী পরিকল্পনা স্বাক্ষর করেছেন। এই পর্যন্ত মোট দশটি কার্যকরী পরিকল্পণা স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চীন আর পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের আদান-প্রদান শুরু হয়েছে ৬০'র দশক থেকে। বহু বছর ধরে চীন ও পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সহযোগিতা সুষ্ঠু এবং ফলপ্রসূ। ১৯৭৬ সালে চীন ও পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর দু'পক্ষ মোট ৪১৭টি সরকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতা প্রকল্প স্বাক্ষর করেছে।
|