মোবাইলফোন এখন প্রায়ই চীনের জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত হয়েছে । এখন চীন নিজস্ব ধীসম্পত্তির স্বত্বাধিকারবিশিষ্ট মোবাইলফোন চিপের অধিকারী হয়েছে । চীনের বাজারে মোবাইলফোনের সবর্প্রথম প্রবেশ থেকে চীনাদের নিজেদের মোবাইলফোনের কেন্দ্রীয় অংশ চিপ তৈরী করে নিতে মাত্র দশ বছর সময় লেগেছে । মোবাইলফোন চিপ তৈরীর প্রধান ব্যক্তি হলেন চীনের মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স ও ফটোইলেক্ট্রন বিশেষজ্ঞ ডক্টর ওয়ান চি কং ।
ওয়ান চি কংয়ের বয়স এখন পঞ্চাশ বছর । তিনি চীনের চিয়াংসু প্রদেশের নানচিং শহরের তুংনান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন । উনিশশো চুরাশি সালে উচ্চতর শিক্ষা লাভের জন্য তাঁকে জামার্নির রুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয় । তিনি বিশ্ববিখ্যাত মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স বিশেষজ্ঞ , জামার্নির "মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্সের জনক" বলে পরিচিত অধ্যাপক রবার্ট বোশের ছাত্র হন ।ওয়ান চি কং জামার্নির বোহুম রুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই বিষয়ের গবেষণায় অংশ নেন এবং তিন মাস পর গবেষণার সাফল্য অজর্ন করে অধ্যাপক বোশের প্রশংসা পান ।
উনিশশো নব্বই সালের গ্রীষ্মকালে ওয়ান চি কং ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি পান । অধ্যাপক বোশের সুপারিশে তিনি জামার্নির দক্ষিণাংশের ফ্রেইবার্গ শহরের একটি ব্যবহারিক সলিড-স্টেট পদার্থবিদ্যা গবেষণাগারে এসে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণায় রত হন । এরপর ওয়ান চি কং পরপর জামার্নি সরকারের পরিচালিত পাঁচটি প্রকল্পের যৌথভাবে সমাধানের প্রচেষ্টায় সবচেয়ে সম্মুখফ্রন্টের বিষয়গুলোর গবেষণার ভার নেন । মাকির্ন যুক্তরাষ্ট্র , জামার্নি ইত্যাদি দেশের টেলিযোগাযোগ ও মহাশূন্য ব্যুরো ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ও বড় বড় কোম্পানি পরপর তাঁর ডিজাইনকৃত চিপ ব্যবহার করে । ওয়ান চি কংও তাই জামার্নির ব্যবহারিক সলিড-স্টেট পদার্থবিদ্যা গবেষণাগারের আজীবন গবেষকে পরিণত হন ।
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে জামার্নির গ্রিনকার্ড পাওয়া ওয়ান চি কং জামার্নির কাজ ও জীবনযাত্রার সুযোগ ছেড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বড় বড় কোম্পানির উচ্চ বেতনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে চীনে ফিরে আসেন । তিনি বলেছেন ,
"যদি আমি স্বদেশে ফিরে নিজের মাতৃভূমিতে ছাত্রছাত্রীদের গড়ে তুলতে পারি এবং তারাও এত উচ্চমানের সাফল্য অজর্ন করতে পারেন এবং শুধু দুয়েকজন নয় , বরং কয়েক ডজন বা কয়েকশোজন , এমন কি আরো বেশীজন , তাহলে এভাবে সৃষ্ট মূল্য আমার বিদেশে থেকে সৃষ্ট মূল্যের চেয়ে আরো বেশী , আরো গৌরবময় হবে ।"
এমন মনোভাব নিয়েই ওয়ান চি কং তাঁর মাতৃসদন তুংনান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে দুরূহ কাজ আরম্ভ করেন । তখন চীনের "ইনফোমের্শন হাইওয়ে"র মাত্র সূচনা । ইন্টেগ্রেড সাকির্টের চাহিদা বারো কোটিটিতে পৌঁচেছে । প্রয়োজনীয় ইন্টেগ্রেড সাকির্টের প্রকার-সংখ্যাও দশ হাজারের উপরে । কিন্তু চীন বাস্তবে শুধু তিনশোটির বেশী উত্পাদন করতে পারে । ওয়ান চি কংয়ের আরো চিন্তার বিষয় হলো এই যে , চীনের তথ্যশিল্পের স্তম্ভ হিসেবে গণ্য ইন্টেগ্রেড সাকির্ট , যেমন কম্পিউটার চিপ , ইন্টারনেটের নেটকার্ড ইত্যাদির প্রায় সমস্তই বিদেশ থেকে আমদানি করা । ওয়ান চি কং উপলব্ধি করেছেন যে , চীনের মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স ও ফটোইলেক্ট্রনের শিক্ষা , গবেষণা ও শিল্প উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তিকর্মী বাহিনী গড়ে তোলা দরকার , স্বাধীন ধীসম্পত্তির স্বত্বাধিকার সম্পন্ন ইন্টেগ্রেড সাকির্ট শিল্পের উন্নয়ন খুবই জরুরী । তিনি ছাত্রছাত্রীদের আন্তজার্তিক সাম্প্রতিকতম তথ্যপ্রযুক্তি পড়ানোর সংগে সংগে ইন্টেগ্রেড সাকির্ট গবেষণাগার গড়ার কাজ শুরু করেন । তিনি বলেছেন ,
"সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পক্ষের সমথর্নে আমরা সাজসরঞ্জাম ও পরিমাপক যন্ত্রাদি কিনেছি , তারপর আমাদের কমীর্দল গঠন করেছি । আমরা ইতিমধ্যে চীনের অভ্যন্তরের প্রথম শ্রেণীর পরীক্ষাগার গড়ে তুলেছি ।"
ওয়ান চি কংয়ের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অল্প সময় পরই "হাইস্পীড ইন্টেগ্রেড সাকির্ট অথার্ত্ কম্পিউটার চিপের প্রধান অংশ উদ্ভাবিত হয় । চীনের জাতীয় হাইটেক উন্নয়ন পরিকল্পনার ফটোইলেক্ট্রন বিশেষজ্ঞ গ্রুপ মনে করে , ওয়ান চি কংয়ের গবেষণালব্ধ সাফল্য বিশ্বের উন্নতমানে পৌঁচেছে । তুংনান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুয়াং চিয়েন বলেছেন ,
"চিপের হাইস্পীড ইন্টেগ্রেড সাকির্টের গবেষণা বতর্মানে আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে সীমিত ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ । ওয়ান চি কংয়ের চালানো পাঁচটি ধরণের গবেষণা আন্তজার্তিক পুরোভাগে রয়েছে । এর মধ্যে তিন ধরণের গবেষণালব্ধ সাফল্যের উদ্ভাবক হলেন ওয়ান চি কং নিজে ।"
কিন্তু এই সব সাফল্যে ওয়ান চি কং সন্তুষ্ট হন নি , তাঁর স্বদেশে প্রত্যাবতর্নের পাঁচ বছরে তিনি আটাশজন স্নাতকোত্তরডিগ্রিধারী ছাত্রছাত্রী ও ষোলোজন ডক্টরেটডিগ্রিপ্রার্থী ছাত্রছাত্রীকে পড়িয়েছেন । তার চারদিকে মাইক্রো –ইলেক্ট্রনিক্স ও ফটোইলেক্ট্রন ক্ষেত্রের একটি শক্তিশালী গবেষণাকর্মী বাহিনী গড়ে উঠেছে।
|