 চীনের ইতিহাস সূদীর্ঘকালের । খৃষ্টপূর্ব একবিংশ শতাব্দীর সঙ্গে চীনে শ্রেনী ও রাষ্ট্রায় গোষ্ঠীর শাসনাধীন দাসব্যবস্থা সম্পন্ন সিয়া রাজবংশের আর্বীভাব ঘটে । খৃষ্টপূর্ব ২২১ সালে চীনের ইতাহাসের প্রথম সামন্ততান্ত্রিক রাজকীয় বংশ--ছিন রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয় । এর পরের দু হাজার বছরে চীন সামন্ততান্ত্রিক রাজ-শাসনের অধীনে ছিল ।
চীনের ইতিহাসের প্রথম একীভূত সাম-অত্যন্ত্রিক রাজবংশ । ছিন রাজবংশের প্রথম রাজা ইনচেন ছয়টি ক্ষুদ্র রাজ্য দখল করে খৃষ্টপূর্ব ২২১ সালে চীনের প্রথম একীভূত সাম-ততান্ত্রিক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন । ছিন রাজবংশের রাজধানী হলো সিয়েন ইয়াং । ছিন রাজবংশের প্রথম রাজা ইনচেং চীনের একীভূত লিখিত ভাষা , মুদ্রা ও পরিমাপ ব্যবস্থা স্থির করে সে সময়কার সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য অনুকুল শর্ত সৃষ্টি করেন । ছিন রাজবংশের আমলে চীনের ঐতিহাসিক মহাপ্রাচীর নির্মিত হয় । কিন্তু ছিন রাজবংশের রাজারা বিপুল পরিমান জনশক্তি ও অর্থ যুদ্ধ ও নির্মানকাজে ব্যয় করেছেন বলে জনসাধারন অসন্তোষ প্রকাশ করেন । ছিন রাজবংশের শেষ দিকে প্রায়ই কৃষক -বিদ্রোহ ঘটে , খৃষ্টপূর্ব ২০৬ সালে কৃষক বিদ্রোহের নেতা লিউ পান ছিন রাজবংশের অবসান ঘটিয়ে হা রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন ।
হান রাজবংশের শাসনকাল দীর্ঘ চার শ'২৬ বছর স্থায়ী ছিল । হান রাজবংশ ছিল চীনের সামন্ততান্ত্রিক সমাজের প্রথম শক্তিশালী রাজবংশ । হান রাজবংশের অর্থনীতির দ্রুত প্রসার হয় ।লোহা দিয়ে তৈরী কৃষি-যন্ত্র জনপ্রিয় করা হয় । ধাতু ঢালাই ও লবন উত্পাদন প্রধান হস্সশিল্প ছিল । এই সময়পর্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হচ্ছে ছাই লুন উদ্ভিদের তন্ত্ত দিয়ে কাজ তৈরীর প্রযুক্তি আবিস্কাআ । এই সময়পর্বে বানিজ্যেরও অভুতপূর্ব বিকাশ হয়েছে , এবং ছাং আন অর্থাত্ বর্তমানের সিয়ান শহর আর লোইয়াং প্রভৃতি বৃহত শহর দেখা দিয়েছে । হান রাজবংশের রাজা লিউ ছের শাসনামলে পশ্চিম এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে হান রাজবংশের আদান-প্রদান ক্রমেই বাড়ে , বিখ্যাত রেশমী পথ সেই সময়ে চালু হয় ।
চীনের ইতিহাসে সামন্ততান্ত্রিক রাজবংশগুলোর শাসনের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল দীর্ঘকাল একীভূত শাসন চলার পর দেশ আবার খন্ডিত হয়ে যায় , আর বেশ কিছু দিন খন্ডিত হয়ে থাকার পর আবার একীভূত রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয় । ২২০ সাল থেকে ৫৮১ সাল পর্যন্ত সময়পর্বে ত্রিরাজ্য , পশ্চিম চিন ও পূর্ব চিন আর দক্ষিণ রাজবংশ ও উত্তর রাজবংশের শাসনামল । এই সময়পর্বে একই সময়ে একাধিক রাজ্যের অস্তিত্ব করেন । সুই রাজবংশের রাজধানী ছিল ছান আন । সুই রাজবংশে পেইচিং থেকে হানচৌ পর্যন্ত মহাখাল খনন করা হয় , এই মহাখাল পৃথিবীর দীর্ঘতমো খাল ।সুই রাজবংশ ৩৭ বছর স্থায়ী ছিল । এই সময়পর্বে অতিরিক্ত খাজনা আদায় ও একটানা যুদ্ধের দরুন সুই রাজবংশ ক্রমেই দুর্বল হয় । ৬১৮ সালে সুই রাজবংশের জেনারেল লি ইউয়ান রাজধানী ছানআনের উপর আক্রমন চালিয়েছেন এবং ৬১৯ সালে থাং রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন । থাং রাজবংশ চীনের সাম-ততান্ত্রিক রাজবংশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল । এই রাজবংশের দশ-বারোজন রাজা যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে জানতেন বিনয়ের সঙ্গে তাদের মতামত শুনতেন । এবং দুর্নীতির বিরোধীতা করতেন । ফলে থাং রাজবংশের আমলে চীনের সমাজের ও অর্থনীতির অভূতপূর্ব উন্নতি হয় । থাং রাজবংশের কবিতাগুলো এখনও লোকের মুখে মুখে । থাং রাজবংশের আমলে কাঠ খোদাই করে তক্ষর ঝনিয়ে ছাপার প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয় । এই প্রযুক্তি ও হান রাজবংশের আবিষ্কৃত কাগজ তৈরীর প্রযুক্তি সংস্কৃতির সম্প্রসারন তরান্বিত করেছে । তা ছাড়া ধান ও চার চাষ , চীনামাটির পাত্র তৈরী , কাগজ তৈরী আর জাহাজ তৈরী প্রভৃতি ক্ষেত্রে দ্রুত প্রসার হয় , রাজধানী ছান আন তখনকার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের আন্তর্জাতিক শহরে পরিনত হয় ।
|