লাসা শহরের পূর্বাংশের একটি আবাসিক এলাকায় জনাব সিয়া ইউ পিন্ছুছিরেনের বাস। তাঁর বাসা ও প্রাঙ্গঁন পরিপাটি। পথের দুই পাশে শাদা ও লাল ফুল ফুটো আফে। পরিবেশ শান্ত আর আরাসদায়ক।শহরাঞ্চলে এই ধরনের পরিবেশ দেখা যায় না।
জনাব সিয়াইউ পিন্ছু ছিরেন প্রাঙ্গঁনে বসে বই পড়ছিলেন। তিনি আমাদের তাঁর ঘরে নিয়ে আসলেন এবং আমাদের ঘাখন চা খেতে দিলেন। তিনি তাঁর পড়াশুনা ও অধ্যয়নের অভিজ্ঞতা বলতে লাগলেন।
পিন্ছু ছিরেনের বয়স সত্তর। যখন তাঁর বয়স সাত, তখন তিনি তিব্বতের একটি প্রাইভেট স্কুলে তিব্বতী ভাষা শিখতে শুরু করেন। তার পর তিনি তিব্বতী মেডিক্যাল কলেজে তিব্বতী চিকিত্সা পদ্ধতি, তিব্বতী জাতির ইতিহাস ও বৌদ্ধ তত্ত্বত্ত অধ্যয়ন করেছেন। গত তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিশ্রমী লেখা পড়া ও অধ্যয়নের জীবন তাঁর শেখার আগ্রহ আর অধ্যয়নের অদ্বিতীয় বুদ্ধি ও প্রতিভা দেখা দিয়েছে। তিনি পন্তিতদের মর্যাদা ও উত্সাহ পেয়েছেন।
পিন্ছু ছিরেন আমাদের বলেছেন, কলেজ থেকে স্মাতক হবার পর তিনি পরিশ্রম করে লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন। তিনি খুব সকালে উঠেন এবং অফিসে যাবার আগে চার ঘন্টা ধরে পড়েন। যখন কাজের বিরতি, তখন তিনি পড়েন। তিনি আমাদের বলেছেন, তাঁর তিব্বতের ইতিহাস অধ্যয়নের আগ্রহ বেশি। যখন কাজের বিরতি, তখন তিনি এই ধরনের বই পড়েন।
পিন্ছু ছিরেন তিব্বতের ইতিহাস অধ্যয়নের কাজ খুব পছন্দ করেন।দুঃখের বিষয় তিনি এই অধ্যয়েন বাজে নিয়োজিত হন নি।
১৯৯৮ সালে পিন্ছু ছিরেনের বয়স ষাট। চীনে এই বয়সে অবসর নেয়ার কথা। তিনি খুব খুশি। তখন থেকে তিনি মন দিয়ে তিব্বত বিষয়ক তত্ত্ব অধ্যয়নের কাজে ঝাপিয়ে পড়লেন। তিনি বলেছেন, অবসর নেয়া তাঁর জীবনকে অধ্যয়নের দ্বিতীয় বসন্ত এনে দিয়েছে। তিনি যা যা অধ্যয়ন করেছেন, তিনি ছাত্রদের সে সব কিছু, শিখিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সেজন্য তিনি তিব্বতে ৫০ টিরও বেশি জেলায় তিব্বতের প্রায় সকল প্রাচীন ধর্ম--বেন ধর্ম মন্দির পরিদর্শন করেছেন। তিনি এ নিয়ে তিব্বতের বেন ধর্ম মন্দিরের অতীত ও বর্তমান নামে একটি বই রচনা করেছেন। বইটিতে বিভিন্ন বেন ধর্ম মন্দিরের ভৌগলিক অবস্থান আর পরিবেশ বর্ণনা করা হয়েছে। বইটি জাপানী ও ইংরেজী ভাষায়ও অনুদিত হয়েছে।
এ পর্যন্ত তিব্বতের ইতিহাস ও তিব্বতের ধর্ম বিষয়ক ইতিহাস সহ তার অটিটি বই প্রকাশিত হয়েছে।তিব্বতের সংস্কার বিষয়িক তাঁর অন্য একটি বইও প্রকাশিত হবে। এ সব বই তিব্বত নিয়ে অধ্যয়নের জন্য পুঙখানুপঙখ তথ্য যোহাবে। ও প্রসংগে তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার তেনবাইটতেন বলেছেন, পিন্ছু ছিরেনের রচিত তিব্বতের বৌদ্ধধর্ম ও তিব্বতের ইতিহাস বিষয়িক বইগুলো ইতিহাস বিভাগের ছাত্রদের লেখাপড়া ও অধ্যয়নের জন্য খুব উপকারী।
পিন্ছু ছিরেনের প্রভাব তাঁর পাঁচজন মাস্টার্স ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাত্র তিব্বত বিষয়িক তত্ত্ব, ইতিহাস ও বৌদ্ধ ধর্ম সহ নানা ক্ষেত্রে অধ্যয়নের সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁর ছাত্রদের প্রসংগে পিন্ছু ছিরেন আনন্দের সঙ্গে বলেছেন, আমান ছাত্রদের শেখা আর অধ্যয়নের কৃতিত্ব খুব শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। এদের মধ্যে বেন ধর্ম আর তুঙবা মধ্যে পাথর্ক্যের যে গবেষণা করেছেন, তা আমি নিজেও সম্পন্ন করি নি এবং এ নিয়ে তিনি একটি বই প্রকাশ করেছেন।
তত্ত্ব অধ্যয়নের ক্ষেত্রে পিন্ছু ছিরেন যেমন একজন কৃতি পন্ডিত, জীবনযাপনে তার কৌত হলও বৈচিত্রময়। তিনি নানা জাতের চিত্রাংকনকর্ম সংগ্রহ করতে আর ছবি তুলতেও পছন্দ করেন। তাঁর তোলা বহু ছবি ভাল ভাবে সংরক্ষন করা হচ্ছে। কথাটা কলার সময় এক ধরনের তৃপ্তি, সন্তোষ আর গৌরবের অনুভূতি তাঁর মুখে বিরাজ করল। এথেকে আমরা স্পষ্টভাবে সারা জীবনে তত্ত্ব অধ্যয়ন ও গবেষণায় ব্রতী হওয়া এই তিব্বতী পন্ডিতের অভিজ্ঞ ও পরিশ্রম অনুভব করেছি।
|