v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-04-11 15:05:44    
চীনের বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়

cri
    বর্তমান চীনে ৬০ বছর ও তারও বেশী বয়সের বৃদ্ধবৃদ্ধার সংখ্যা ১৩ কোটির বেশী , এই সংখ্যা চীনের মোট লোক- সংখ্যার ১০ শতাংশ বেশী । এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় বয়োবৃদ্ধের সংখ্যা ৪০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে । লোকসংখ্যার মধ্যে বয়োবৃদ্ধের সংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি চীনের এক বড় সামাজিক সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে । বৃদ্ধবৃদ্ধার জীবন সমৃদ্ধ করার জন্য সরকারের সমর্থনে সমগ্র দেশে মোট ১৭ হাজারেরও বেশী বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এই সব বয়োবৃদ্ধবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বৃদ্ধবৃদ্ধার সংখ্যা ১৫ লক্ষেরও বেশী। । তারা বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়গুলোতে প্রধানতঃ হস্তলিপি , ছবি- আঁকা , বিদেশী ভাষা , কম্পিউটার ব্যবহার, ইতিহাস , স্বাস্থ্যরক্ষা, রান্না ও গৃহ শিক্ষা প্রভৃতি বিষয় শিখেন । সম্প্রতি বাংলা বিভাগের সংবাদদাতা সুয়ে ফেই ফেই চীনের রেলওয়ে মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ একটি বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়ে গিয়েছেন এবং সেখানকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর সংগে আলাপ করেছেন ।

    ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে চীনের রেলওয়ে মন্ত্রনালয়ের বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় । এই বিদ্যালয়ে হস্তলিপি , ছবি- আঁকা , সাহিত্য , অর্থনীতি , ইতিহাস , ইংরাজ ভাষা , গান , নাচ, ছবি- তোলা , খোদাই ও হস্তশিল্পকর্ম তৈরী , ঐতিহ্যিক চিকিত্সা বিদ্যা , স্বাস্থ্য রক্ষা ও কম্পিউটার ব্যবহার প্রভৃতি দশ-বারোটি শিক্ষা বিষয় আছে । প্রতিটি বিষয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ পর্যায়তিনটা স্তর বিভক্ত করা হয় । এই বিদ্যালয়ে প্রতিটি শিক্ষা বিষয়ের একটি গবেষণা সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় , যেমন তত্ব গবেষণা সমিতি , হস্তলিপি ও চিত্রশিল্প সমিতি , কবিতা সমিতি , ফটোগ্রাফার সমিতি প্রভৃতি । আমাদের সংবাদদাতা এই বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়ের ' ই ছিন ' হস্তশিল্প সমিতির সদস্যদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন । ই ছিন হস্তশিল্প সমিতি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় , এই বছর তার দশম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । এই সমিতি সম্বন্ধে সমিতির সবচেয়ে বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি লি ফোং লিন বলেছেন , অবসর নেয়ার পর বাসায় বসে কোনো কাজ না করা আমার খুব খারাপ লাগে। সরকার অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধবৃদ্ধাদের নিজের শখ অনুসারে কিছু শেখার ও কিছু হিত্যকর কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে । তাই আমি বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। । আমাদের বিদ্যালয়ে বৃদ্ধবৃদ্ধাদের উত্সাহ বেশী , তারা সাধারণতঃ একাধিক বিষয় শিখছেন , ক্লাসে তারা হস্তশিল্প কর্ম তৈরীর কৌশল শিখেছেন এবং পারস্পরিক আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে আনন্দও পেয়েছে , বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়ে ভর্তির পর বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জীবন আরো সমৃদ্ধ হয়েছে , বৃদ্ধা লি ফোং লিং নিজের আবাসিক এলাকায় আগ্রহী বয়োবৃদ্ধদের সংগঠন করে একটি গ্রুপ গঠন করেছেন । তিনি এই গ্রুপে বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়ে যা শিখেছেন , তা' প্রতিবেশীদের শিক্ষান , তার পক্ষে এটা এক আনন্দের ব্যাপার ।

    বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়ের শিক্ষা সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো নয় । বৃদ্ধবৃদ্ধারা চাকরী ও ডিগ্রির জন্য আসেন নি , তারা অধ্যয়ন থেকে আনন্দ পাওয়ার জন্য এবং নিজের বার্ধক্য জীবনের গুনমান উন্নত করার জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন , আমাদের সংবাদদাতা লক্ষ্য করেছেন , বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়ের সর্বত্রই আনন্দের পরিবেশ বিরাজ করে । ' ই ছিন ' হস্তশিল্প সমিতির নিয়ম অনুসারে মাসে একবার হস্পশিল্প কর্ম উপভোগ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় , অনুষ্ঠানে সমিতির সদস্যরা নিজের তৈরী হস্তশিল্প কর্ম নিয়ে আসেন , সবাই এক সংগে হস্তশিল্প কর্ম উপভোগ করেন এবং নিজের মতামত প্রকাশ করেন। এখন প্রতি মাসের অনুষ্ঠান সদস্যদের জীবনের এক পরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে । বৃদ্ধা লি কুই সিউ বলেছেন , এই সমিতির অনুষ্ঠানে আমরা পরস্পরকে শিখি এবং নিস্বার্থভাবে অন্য সদস্যকে সাহায্য করি , আমার মনে হয় , আমাদের হস্তশিল্প সমিতি এক বড় পরিবারের মতো , সমিতির সদস্যদের সম্পর্ক আপন ভাই-বোনের মতো ঘনিষ্ঠ । সমিতির প্রত্যেক সদস্যের নিজস্ব প্রাধান্য আছে , কোনো কোনো লোকের সূচিকর্ম ভালো , কোনো কোনো লোকের আঁকা ছবি চমত্কার ,এই সব সুন্দর সুন্দর শিল্পকর্ম দেখে আপনি কল্পনা করতে পারেন না যে সত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধবৃদ্ধারা এই সব শিল্পকর্ম তৈরী করেছেন । এই সমিতির প্রায় প্রত্যেক সদস্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার পেয়েছেন । বৃদ্ধা সুই হুই সিউ যুক্ত রাষ্ট্রে একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন এবং আমন্ত্রনক্রমে এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় চীনের নিজের তৈরী শিল্পকর্মগুলো বিদেশী বন্ধুদের প্রদর্শিত করেছেন ।

    এই হস্তশিল্প কর্ম সমিতির সভায় আমাদের সংবাদদাতা পেইচিং ব্রডকাস্টিং ইন্সটিটিউট অর্থাত চীনের সম্প্রচার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা বিভাগের শিক্ষক লিউ আই হাউয়ের সংগেও দেখা করেছেন , বাংলা বিভাগের আটজন নতুন সদস্য মাদাম লিউর ছাত্রী । শিক্ষক লিউ আই হাউ বলেছেন , সাত বছর আগে আমি অবসর নিয়েছি । অবসর নেয়ার পর আমি বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি । আমি হস্তশিল্প কর্ম তৈরী করতে পছন্দ করি , কিন্তু অবসর নেয়ার আগে কাজে ব্যস্ত বলে এই সব কৌশল শিখার সুযোগ পেতাম না , বয়োবৃদ্ধ বিদ্যালয়ে আমার হস্তশিল্পকর্ম তৈরীর কৌশল শিক্ষার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে ।

    আমাদের বাংলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ মহিউদ্দিন তাহের সাহেবের স্ত্রী রাশিদা তাহের এই সমিতির সদস্যদের তৈরী শিল্পকর্ম দেখে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন , আমি মনে এই সমিতির সদস্যরা স্বার্থের জন্য এই সব হস্তশিল্পকর্ম তৈরী করেন নি , মানসিক আনন্দ ও তৃপ্তির পাওয়ার জন্য তারা নিজের শখ অনুসারে এই সব চমত্কার শিল্পকর্ম তৈরী করেছেন , আমি আশা করি বাংলা দেশের শ্রোতাবন্ধরা এই অনুষ্ঠান শুনে নিজের জীবন সমৃদ্ধ করার জন্য চীনা বৃদ্ধবৃদ্ধার কাছ থেকে শিখবেন । মানুষের জীবনে সুখ ও দুঃখ দুটোই আছে , সাধ্যমতো তাত্পর্যময় কাজ করলে আমাদের জীবন আরো সমৃদ্ধ হবে ।

  ছবিগুলো