শিয়েচৌ শহর চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত।এই শহরকে প্রবাসী চীনাদের জম্মভূমি বলে আখ্যায়িত করা হয়।সেখানকার পর্যটনের সম্পদ সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ চমত্কার ।সেখানে তাও ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম , ইমলাম ধর্ম এবং খৃষ্টান ধর্ম প্রভৃতি ধর্ম প্রচলিত হয় বলে এই শহরকে বিশ্বের ধর্ম জাদুঘর বলে গণ্য করা হয়।তা ছাড়া, চীনের অন্যান্য জায়গার তুলনায় ওখানকার মহিলাদের বৈশিষ্ট্যসম্পন কাপড় পরার রীতিনীতি আছে বলে তারা ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষনের পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে ।ওখানবার মহিলাদের গায়ে পরা বৈচিত্রময় কাপড়-চোপড়, ঐতিহ্যিক পরিণয়ের রীতি দেশ-বিদেশে বিখ্যাত।আজকের এই আসরে আপনাদের শিয়েচোর হুওয়াআন জেলার মাহিলাদের কাছে নিয়ে যাবো। আপনারা স্বচোখে সেখানে বসবাসরত হুওয়াআন মহিলাদের আসল জীবন দেখতে পারবেন।
শিয়েচৌ শহরের উপকন্ঠে হুওয়াআন নামে একটি জেলা আছে।এই জেলা সমুদ্রেরপাশে অবস্থিত।যাঁরা ওখানে ভ্রমণ করতে যান তারা মাঝে মাঝে অদ্ভুদ পোশাক পরা দলে দলে গ্রামীণ মহিলাদের দেখতে পারেন।তাদের মাথায় সব সময় রংগী তোয়ালে আর একটি বড় আকারের বাঁশের তৈরী টুপি পরে থাকে।টুপিটা প্রায় অর্ধেক মুখ আবৃত করে থাকে ।তাদের সোর্ট এত খাট যা মাত্র নাভি পর্যন্ত আবৃত করতে পারে।তারা সাধারনত কালো রংয়ের প্যান্ট পরে, প্যান্ট টিলেটালা ।কিন্তু যেটা পর্যটকদের দৃষ্টি বিশেষভাবে আকর্ষণ করে থাকে সেটা হলো তাদের কোমলে বাঁধা চওড়া অথবা সংকীর্ণ রংগী বেলট । কোনো কোনো বেলট রৌপ্যের তৈরী।তারা নিজেই ঠাট্রা করে তোয়ালে, খাট সার্ট, রৌপ্যের তৈরী বেলট এবং টিলেটালা প্যান্টকে যথাক্রমে সমান্ত মাথা, ক্লিপন সার্ট, গণতন্ত্র নাভি এবং শৌখিন প্যান্ট বলে আখ্যয়িত করে।তাদের অদ্ভুত পোষাক পরার শৈলী দেশ-বিদেশের অনেক পন্ডিতের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তাদের ভাবমুর্তি চলচ্চিত্রকারদের শিকার হয়েছে। বই এবং পত্রপত্রিকায় তাদের কাহিনী আর ছবি ছাপানো হয়েছে।এখন হুয়াআন মহিলা শিয়েচো শহরের একটি সাংস্কৃতিক আকর্ষণে পরিণত হয়েছে ।যারা শিয়েচো ভ্রমণ করতে আসে তারা অবশ্যই হুওয়াআনা মহিলাকে দেখতে উত্সুক।সংবাদদাতার কৌতুহল দেখে গাইডার জান ছন পিন বললেন, শতাধিক বছর আগে , হুওয়াআন মহিলারা বাঁশের টুপি পরতেন না।যারা নব বিবাহিত অথবা ছেলামেয়ের মা হওয়ার আগে যখন বাইরে যাওয়ার সময়ে তাদের কালো রংয়ের কাপড় মুখ আবৃত করতে হবে , যাতে অপরিচিত লোক বিশেষ করে পুরুষরা যেন তাদের মুখ দেখতে না পারে।রাত্রে পিছানায় শুয়ে যাওয়ার সময়ে ঘরের বাতি নাভিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তারা এই কালো রংয়ের কাপড় মুখ থেকে খুলে ফেলে না।সামাজিক উন্নয়নের সংগে সংগে হুওয়াআন মহিলাদের বিভিন্ন কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগও বেড়েছে বলে তারা চীনের অন্যান্য অঞ্চলের মহিলার মতো এই কালো কাপড়ের বদলে বাঁশের টুপি পরে রৌদ এড়ানোর জন্য।তখন থেকে সমুদ্রের তীরে মাথায় বাঁশের টুপি পরা মহিলারা সহজেই লোকেদের নজরে পড়ে ।আরো রহস্যময় ব্যাপর হলো, তাদের সংগে সব সময় থাকা এই বাঁশের টুপিতে হুওয়াআন মেয়েদের অনেক গোপনীয় কাহিনী আছে ।গাইড জান ছন পিন সংবাদদাতাকে বললেন,
এই বাঁশের তৈরী টুপিতে অনেক কিছু আছে।যেমন, ছোট আয়না, ছোট চিরুনি , ফোটো ইত্যাদি ইত্যাদি।কারণ আমাদের কাপড়ে কোনোপকেট নেই।সুতরাং সমস্ত জিনিসপত্র এই বাঁশের তৈরী টুপিতে ঢুকে দেওয়া হয় ।তাদের কাছে কোনো মানি-ব্যাগ থাকে না । তাই টুপির ভিতরে টাকা-পয়সাও রাখা হয়।আসলে শুধু বাঁশের তৈরী টুপি নয় হুওয়আন মহিলার গায়ে পরা কাপড়-চোপড়ের উন্নয়ন আর পরিবর্তনে তাদের কর্মঠ প্রকৃতি প্রতিফলিত হয়।অতীতে তাদের সার্ট অত্যন্ত টিলেটালা এবং হাঁটু পর্যন্ত পড়ত।পরে পুরুষদের সংগে সমুদ্রের তীরে কাজ করতে হবে বলে তাদের পোশাকে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে।কাজ করার সময় যেন বেশী সুবিধা হয় তাদের সার্টের নীচের অংশ অধিক থেকে অধিকতর খাট হয়েছে।জান উয়েন উয়ে হুওয়আনের জম্ম এবং বড় হয়েছেন। হুওয়আন মহিলার পোশাকের পরিবর্তন প্রসংগে তিনি বললেন,
হুওয়আন মহিলারা সমুদ্রের পাশে সব সময় কাজ করে বলে তাদের কাপড়-চোপড় খাট করে বানানো হয়েছে ।প্যান্টের চুড়ি সাধারনত চওড়া , কারণ কাজ করার সময় তারা প্যান্ডের চুড়ি সহজেই উপরে মুড়াতে পারে।পোশাকের রং ভিন্ন অর্থের প্রতিনিধিত্ব করে।হলুদ রং সৈকতের প্রতিনিধিত্ব করে, সৌনালি রং রৌদ্রের আলোর প্রতিনিধিত্ব করে , নীল রং নীল আকাশ আর সমুদ্রের নীল পানির প্রতিনিধিত্ব করে এবং সাদা রং সমুদ্রের টেউয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।যদি পর্যটকরা হুওয়আন মেয়েদের বিয়ে অনুষ্ঠান একবার দেখার সুযোগ পান তাহলে তাদের ভাগ্য খুব ভাল।কারণ হুওয়আন মেয়েদের বিবাহ রীতি অত্যন্ত বৈশিস্ট্যসম্পন্ন। অতীতে বাবা-মা মেয়ের বিবাহ ঠিক করতেন। বিয়ে করার আগে ভাবী স্বামীদের সংগে তাদের কোনো দেখাদেখি ছিল না।এমন কি ভাবী স্বামীদের বসতি স্থান কোথায় তাও জানতেন না।আরো আশ্চর্য ব্যাপার হলো , বিয়ে হওয়ার পর চতুর্থ দিন থেকে সন্তার মা না হওয়া পর্যন্ত তাদের বাবা মায়ের বাসায় থাকতে হবে ।বছরে মাত্র কয়েক দিন স্বামীর সংগে থাকে।উপরন্তু রাতবেলায় স্বামীর বাসায় গিয়ে খুব ভোরবেলায় আবার বাবা-মায়ের বাসায় ফিরে আসতে হত। ছেলে-মেয়ের মা হওয়ার পর কেবলমাত্র তারা দীর্ঘকালের জন্য স্বামীদের বাসায় থাতে পারে । শুধু তখন থেকে তারা প্রকৃত সংসার স্থাপন করতে শুরু করে।উ সু ছিন যার বয়স সাটের বেশী হয়েছে তিনি স্মরণ করে বলেছেন,
২০ বছর বয়সে আমি বিয়ে করি, ২১ বছর বয়সে আমি প্রসব করি। মা হওয়ার পর আমি স্বামীর বাসায় থাকতে পারি।বিয়ের পর যদি কারোর বাচ্চা নেই তাহলে সে স্বামীর বাসায় থাকতে পারে না।স্বামীর বাসায় থাকার পর কেবল সংসার স্থাপন করতে শুরু করা হয়।এই রীতি এখন অতীত হয়ে গেছে।দর্শনের বিশ্বাস। যদি আপনারা হুওয়আন মহিলাদের আসল জীবন দেখতে যান তাহলে স্বশরীরে ওখানে এক বার দেখতে যাবেন ।
|