বর্তমানে চীনের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মতো খরচ দেয়ার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হচ্ছে। প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের বার্ষিক টিউইশন ফি প্রায় ছয় হাজার রেনমিনপি, আর প্রতি বছরে তাদের সাধারণ দৈনিক খরচ চার হাজার রেনমিনপি। তা সাধারণ পরিবারের জন্য কোনো সমস্যা নয়, কিন্তু দরিদ্র পরিবারের জন্য বড় চাপ। তাহলে চীনের দরিদ্র পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীরা কিভাবে টিউইশন ফি মকাবেলা করে তা নিয়ে আমরা দরিদ্র ছাত্র সিয়াং শিউ ফেংয়ের অভিজ্ঞতা একটু দেখবো।
১৭ বছরের বয়স্ক সিয়াং সিউ ফেংয়ের বাড়ি মধ্যবর্তী চীনের হুপেই প্রদেশের পা তং জেলায় অবস্থিত। এখানে চারদিকে পাহাড় আছে, অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয়। সিয়াং সিউ ফেংয়ের বাবা একজন স্কুল শিক্ষক, তাঁর মাসিক আয় আট'শো রেনমিনপি। তার মা বাড়িতে কৃষি কাজ করেন। তার পরিবারের আয় তাদের প্রতিবেশীদের চেয়ে মন্দ নয়, কিন্তু সিয়াং সিউ ফেংয়ের বাবা মায়ের স্বাস্থ্য ভাল নয়, সব সময় হাস্পাতালে যায়; আর গত বছরে সিয়াং সিউ ফেংয়ের দু'জন বড় বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য বাড়িতের সব সঞ্চয়ী টাকা শেষ হওয়ার পর আবার অন্যকে অনেক টাকার ঋণ গ্রহন করেছে।
এই গ্রীষ্মকালে সিয়াং সিউ ফেং ভাল পরীক্ষার ফলে চীনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়-শাং হাই যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত চিঠি পেয়েছে। এই সুখবর শুনে বাড়িতের সকল সদস্যরা খুব খুশি হয়েছে, কিন্তু পরে তারা আবার চিন্তিত হয়ে বসেছে। কারণ তালিকাভুক্ততে লিখিত আছে যে বাষিক টিউইশন ফি সাত হাজার রেনমিনপি। তাছাড়া, প্রতি বছর আরো চার হাজার দৈনিক খরচ হবে। তাহলে প্রতি বছরের খরচ দশ হাজারেরও বেশী হবে। তা সিয়াং সিউ ফেংয়ের জন্য অসম্ভব বোঝা।
তারা টিউইশন ফি নিয়ে চিন্তা করার সংগে সংগে শাং হাই যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয় ফোন করে বলেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় দারিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশেষভাবে একটি টিউইশন ফি বিলম্বিত দেয়ার "সবুজ পথ" খুলেছে, তাতে তারা পরিবারের সত্যি অবস্থা একটি ফর্মে ফিল করে, তারা টিউইশন ফি না দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে। তারপরে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সংগে মিলিত প্রয়াস চালিয়ে টিউইশন ফি মোকাবেলা করবে। এই কথা শোনে সকল সদস্যদের মন স্থিল হয়েছে এবং সিয়াং সিউ ফেং আনন্দের সংগে তার শাং হাই যাওয়ার ভ্রমন শুরু করেছে।
শাং হাই যোগাগোগ বিশ্ববিদ্যালযে তিন বছরে পড়ার তু সিং স্টেশনে সিয়াং সিউ ফেংয়ের সংগে দেখার সময় বলেছেনঃ
"সবুজ পথ মানে টিউইশন ফি বিলম্বে দেয়, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় ব্যংকের সংগে আপনার ভাতা ব্যবস্থা করে। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউইশন ফি কমানো বা মুক্ত করার ব্যবস্থার নির্দিষ্ট আবেদন করা যায়।"
এই কথা শুনে সিয়াং সিউ ফেংয়ের মন স্থির হয়েছে।
চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবরূপতা ছাত্রদের জন্য হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে। বিশ্ববিদ্যালয় আসার পর সিয়াং সিউ ফেং তার তালিকাভূক্ত চিঠি আর পরিবারের অবস্থা ফোর্ম নিয়ে টাকামুক্তভাবে সংশ্লিষ্ট ক্রিয়াবিধি করেছে। হোস্টেলে চারজন এক ঘরে থাকে, নিজের নিজের ডেস্ক আর জিনিসপত্র আলমারি আছে এবং বিশেষভাবে দরিদ্র ছাত্রদের জন্য কাঁথা, তোয়ালে, পানিপাত্র ইত্যাদি আয়োজনীয় জিনিসপত্র যোগানো হয়েছে।
দিত্বীয় দিনে নতুন ছাত্রছাত্রীরা নিবন্ধিত করা এবং টিউইশন ফি জমা দেয়ার সময়ে সিয়াং সিউ ফেং সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সে প্রথম বিলম্বে টিউইশন দেয়ার ব্যবস্থা করবে তারপর দেশের ছাত্রদের জন্য মঞ্জুরিকৃত আবেদন করবে। সে বলেছেঃ
"আমি অন্যকে ঝামেলা দিতে চাই না। আমি চাই ছাত্রদের মঞ্জুরিকৃত আবেদন করে, পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর নিজের প্রয়াসে ঋণ পরিশোধ করবো।"
ছাত্রদের মঞ্জুরিকৃত ঋণ ব্যবস্থ হলো চীন সরকা দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য স্থাপিত বিশেষ ঋণ, তার সুদ সাধারণ ঋণের তুলনায় অনেক কম। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রতি ছাত্র বার্ষিক ছয় হাজার ইউয়ান রেনমিনপির ঋণ করতে পারে, পড়াশোনার সময় তার সুদ সরকার পরিশোধ করে, পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর দুইএক বছরে ছাত্র নিজেই ঋণ পরিশোধ করবে, ছয় বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ শেষ করতে হবে।
পড়াশোনা মঞ্জুরিকৃত পাওয়ার সংগে সিয়াং সিউ ফেং আবার টিউইশন কমানো বা মুক্তর ব্যবস্থায় অনুকূল হওয়ার সম্ভব আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাজ বিষয়ক বিভাগের শিক্ষক ওয়েই থিয়ান হুয়া বলেছেনঃ
"আমরা সব ছাত্রছাত্রীদের অবস্থা বিবেচনা করে তারপর সিয়াং সিউ ফেংয়ের মত দরিদ্র ছাত্রদের জন্য টিউইশন কমানো বা মুক্তর সিদ্ধান্ত নেবো। তাছাড়া, তাদের দৈনিক খরচ মোকাবেলা করার জন্য আমরা তাদেরকে ছাত্রবৃত্তি আবেদন করার উত্সাহিত করি।"
শিক্ষক ওয়েই আবার সিয়াং সিউ ফেংকে বলেছেন, তার অতিরিক্ত সময় থাকলে, দিত্বীয় পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ নিতে পারে। প্রশিক্ষণের সার্টিফিকিট পেলে সিয়াং সিউ ফেং কেম্পাসের পার্টটাইম-জোব করে তার দৈনিক খরচ যুগতে পারবে।
এমনভাবে কোনো খরচ না দেয়, সিয়াং সিউফেং তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শুরু করেছে। অবশ্যয় সে তার বাড়ি থেকে নিয়ে অল্প টাকা নিয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শুরু করেছে, প্রতিদিকের খরচ ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে। অবশ্যয় সেও ব্যক্তিগত শিক্ষক এমন পার্ট-টাইম কাজ করবে যাতে তার দৈনিক খরচ যুগাতে যায়।
সম্প্রতি চীনের এক কোটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মধ্যে সিয়াং সিউ ফেংয়ের মত দরিদ্র ছাত্র দশ শতাংশ। চীন সরকার অববাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে বলে অধিকাংশ দরিদ্র ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। চীনের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী চাং পাও ছিং বলেছেনঃ
"আমাদের দেশ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া সুনিশ্চিত করার সামর্থ্য ও উপায় আছে।"
|