v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-04-07 15:54:06    
বাতাস ও বৃষ্টি ডেকে আনা আর মানুষের অসাধ্য নয় – চীনে কৃত্রিম উপায়ে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করা

cri
    চীন হচ্ছে এমন একটি দেশ যে দেশে ঘনঘন আবহাওয়া দুযোর্গ ঘটে । ঐতিহ্যিক চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রাচীন সমাজে চীনারা তাদের উত্পাদন ও জীবনযাত্রার উপর সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুযোর্গের প্রভাব এড়ানোর জন্য প্রায়ই দেবতার কাছে প্রাথর্না করতেন । কিন্তু এখন চীনারা ক্রমে ক্রমে উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে তাদের উত্পাদন ও জীবনযাত্রার উপর প্রতিকূল আবহাওয়ার সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব লাঘবের প্রচেষ্টা চালাতে শিখেছেন ।

    কৃত্রিম উপায়ে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার অর্থ হচ্ছে উপযুক্ত আবহাওয়ার শর্তে কৃত্রিম হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আবহাওয়ার পরিবতর্নকে মানবজাতির আশা আকাংক্ষার সংগে খাপ খাওয়ানো । উনিশশো ছেচল্লিশ সালে মাকির্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেন যে,ড্রাই আইস ও সিলভার আইওডাইডকে প্রভাবক (catalysator ) হিসেবে ব্যবহার করে মেঘের মধ্যেকার আইস ক্রিস্ট্যালের সংখ্যা বাড়ানো যায় , তারপর বৃষ্টির ফোটার সংখ্যা ও তার ব্যাস বাড়ানো যায় এবং মেঘের স্তরকে বৃষ্টিতে রূপান্তরের হার বাড়ানো যায় । এই আবিষ্কার কৃত্রিম উপায়ে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার নতুন যুগের সূচনা করেছে । এরপর মানবজাতি ক্রমে ক্রমে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উপায়ে আংশিক বায়ুর পদার্থবিদ্যাগত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে কৃত্রিমভাবে প্রভাবিত করে প্রাকৃতিক দুযোর্গ এড়াতে বা লাঘব করতে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহার করতে শিখেছে ।

    এপযর্ন্ত পৃথিবীর একশো'রও বেশী দেশ ও অঞ্চলে কৃত্রিমভাবে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার পরীক্ষা চালানো হয়েছে । আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার আওতাও কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি বাড়ানো ও শিলাবৃষ্টি রোধ থেকে দ্রুত কৃত্রিমভাবে কুয়াশা দূরীকরণ ,মেঘ দূরীকরণ ,বৃষ্টি দূরীকরণ ,বিদ্যুত চমকানি দূরীকরণ ,তুষার রোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে ।

    চীনে কৃত্রিমভাবে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার কাজ শুরু হয় গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে । উনিশশো আটান্ন সালে উত্তরপূব চীনের চিলিন প্রদেশে এমন খরা দেখা দেয় যা গত একশো বছরে হয় নি । চীনের আবহাওয়া ব্যুরো , চীনের বিজ্ঞান একাডেমী ও চিলিন প্রাদেশিক সরকার যৌথভাবে প্রথমবারের মতো বিমান ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি বাড়ানোর পরীক্ষা চালায় এবং সাফল্য অজর্ন করে । এরপর চীনের অধিকাংশ অঞ্চলে কৃত্রিমভাবে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার কাজ পরপর শুরু হয় ।

    পানিসম্পদের গুরুতর অভাবের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পানিসম্পদ উন্নয়নের জন্য ক্রমেই আরো বেশী লোকের দৃষ্টি বিশাল আকাশের দিকে নিবদ্ধ হয় । চীনের অনেক অঞ্চলে কৃত্রিম উপায়ে মেঘের পানিসম্পদ উন্নয়নের কাজ প্রানবন্তভাবে শুরু হয় এবং স্পষ্ট সাফল্য অজির্ত হয় । যেমন ,দক্ষিণপূব চীনের ফুচিয়েন প্রদেশের কুথিয়েন জেলায় স্থানীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকমীরা একটানা দশাধিক বছর ধরে পুঞ্জীভূত মেঘস্তরে কামানের গোলা ছুঁড়ে কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি বাড়ানোর পরীক্ষা চালিয়েছেন । ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিরাটমাত্রায় বেড়েছে ।

    দক্ষিণপশ্চিম চীনের কুয়েচৌ প্রদেশ মধ্য অক্ষাংশের মালভূমিতে অবস্থিত । ভৌগলিক ও ভূগঠনের প্রভাবে বিভিন্ন ধরণের আবহাওয়া দুযোর্গ খুবই ঘনঘন ঘটে । বিশেষ করে শিলাবৃষ্টির দুযোর্গ খুবই গুরুতর । সম্ভাব্য শিলাবৃষ্টি ও খরা-জনিত ক্ষয়ক্ষতি লাঘবের জন্য চীনের আবহাওয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একীভূত সংগঠনে কুয়েচৌ প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরপর কৃত্রিম উপায়ে শিলাবৃষ্টি রোধ ও বৃষ্টি বৃদ্ধির কাজ চালানো হয় । গত চল্লিশাধিক বছরে এই কাজ চালনাকারী শহর ,বিভাগ ও জেলার সংখ্যা হয়েছে আশিটিরও বেশী । সমগ্র প্রদেশে এই কাজে ব্যবহারের জন্য মোট তিনশো নব্বইটি বিমান-বিধ্বংসী কামান ও সত্তরটিরও বেশী রকেট কামান এবং দুই হাজারেরও বেশী লোকের একটি কর্মী বাহিনী রয়েছে । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুয়েচৌ প্রদেশ কৃত্রিম উপায়ে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার সাবির্ক প্রযুক্তি ব্যবস্থা ও কাজ পরিচালনা ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছে , এই কাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপাদান বাড়িয়েছে এবং কাযর্করভাবে স্থানীয় জনসাধারণের জানমাল , ফসল ও অথর্করী বনাঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষা করেছে আর শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি দুযোর্গ – জনিত ক্ষয়ক্ষতি লাঘব করেছে ।

    এখন স্থানীয় কৃষকরা আবেগের সংগে বলেন , অতীতে শিলাবৃষ্টির দিনে দেবতার কাছে প্রাথর্না করে কোনো ফল হতো না , এখন কামানের গজর্নেই সমস্যার সমাধান হয় , হাইটেকই ফসলের আসল রক্ষা দেবতা ।