চীন হচ্ছে এমন একটি দেশ যে দেশে ঘনঘন আবহাওয়া দুযোর্গ ঘটে । ঐতিহ্যিক চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রাচীন সমাজে চীনারা তাদের উত্পাদন ও জীবনযাত্রার উপর সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুযোর্গের প্রভাব এড়ানোর জন্য প্রায়ই দেবতার কাছে প্রাথর্না করতেন । কিন্তু এখন চীনারা ক্রমে ক্রমে উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে তাদের উত্পাদন ও জীবনযাত্রার উপর প্রতিকূল আবহাওয়ার সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব লাঘবের প্রচেষ্টা চালাতে শিখেছেন ।
কৃত্রিম উপায়ে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার অর্থ হচ্ছে উপযুক্ত আবহাওয়ার শর্তে কৃত্রিম হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আবহাওয়ার পরিবতর্নকে মানবজাতির আশা আকাংক্ষার সংগে খাপ খাওয়ানো । উনিশশো ছেচল্লিশ সালে মাকির্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেন যে,ড্রাই আইস ও সিলভার আইওডাইডকে প্রভাবক (catalysator ) হিসেবে ব্যবহার করে মেঘের মধ্যেকার আইস ক্রিস্ট্যালের সংখ্যা বাড়ানো যায় , তারপর বৃষ্টির ফোটার সংখ্যা ও তার ব্যাস বাড়ানো যায় এবং মেঘের স্তরকে বৃষ্টিতে রূপান্তরের হার বাড়ানো যায় । এই আবিষ্কার কৃত্রিম উপায়ে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার নতুন যুগের সূচনা করেছে । এরপর মানবজাতি ক্রমে ক্রমে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উপায়ে আংশিক বায়ুর পদার্থবিদ্যাগত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে কৃত্রিমভাবে প্রভাবিত করে প্রাকৃতিক দুযোর্গ এড়াতে বা লাঘব করতে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহার করতে শিখেছে ।
এপযর্ন্ত পৃথিবীর একশো'রও বেশী দেশ ও অঞ্চলে কৃত্রিমভাবে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার পরীক্ষা চালানো হয়েছে । আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার আওতাও কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি বাড়ানো ও শিলাবৃষ্টি রোধ থেকে দ্রুত কৃত্রিমভাবে কুয়াশা দূরীকরণ ,মেঘ দূরীকরণ ,বৃষ্টি দূরীকরণ ,বিদ্যুত চমকানি দূরীকরণ ,তুষার রোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে ।
চীনে কৃত্রিমভাবে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার কাজ শুরু হয় গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে । উনিশশো আটান্ন সালে উত্তরপূব চীনের চিলিন প্রদেশে এমন খরা দেখা দেয় যা গত একশো বছরে হয় নি । চীনের আবহাওয়া ব্যুরো , চীনের বিজ্ঞান একাডেমী ও চিলিন প্রাদেশিক সরকার যৌথভাবে প্রথমবারের মতো বিমান ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি বাড়ানোর পরীক্ষা চালায় এবং সাফল্য অজর্ন করে । এরপর চীনের অধিকাংশ অঞ্চলে কৃত্রিমভাবে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার কাজ পরপর শুরু হয় ।
পানিসম্পদের গুরুতর অভাবের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পানিসম্পদ উন্নয়নের জন্য ক্রমেই আরো বেশী লোকের দৃষ্টি বিশাল আকাশের দিকে নিবদ্ধ হয় । চীনের অনেক অঞ্চলে কৃত্রিম উপায়ে মেঘের পানিসম্পদ উন্নয়নের কাজ প্রানবন্তভাবে শুরু হয় এবং স্পষ্ট সাফল্য অজির্ত হয় । যেমন ,দক্ষিণপূব চীনের ফুচিয়েন প্রদেশের কুথিয়েন জেলায় স্থানীয় আবহাওয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকমীরা একটানা দশাধিক বছর ধরে পুঞ্জীভূত মেঘস্তরে কামানের গোলা ছুঁড়ে কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি বাড়ানোর পরীক্ষা চালিয়েছেন । ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিরাটমাত্রায় বেড়েছে ।
দক্ষিণপশ্চিম চীনের কুয়েচৌ প্রদেশ মধ্য অক্ষাংশের মালভূমিতে অবস্থিত । ভৌগলিক ও ভূগঠনের প্রভাবে বিভিন্ন ধরণের আবহাওয়া দুযোর্গ খুবই ঘনঘন ঘটে । বিশেষ করে শিলাবৃষ্টির দুযোর্গ খুবই গুরুতর । সম্ভাব্য শিলাবৃষ্টি ও খরা-জনিত ক্ষয়ক্ষতি লাঘবের জন্য চীনের আবহাওয়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের একীভূত সংগঠনে কুয়েচৌ প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরপর কৃত্রিম উপায়ে শিলাবৃষ্টি রোধ ও বৃষ্টি বৃদ্ধির কাজ চালানো হয় । গত চল্লিশাধিক বছরে এই কাজ চালনাকারী শহর ,বিভাগ ও জেলার সংখ্যা হয়েছে আশিটিরও বেশী । সমগ্র প্রদেশে এই কাজে ব্যবহারের জন্য মোট তিনশো নব্বইটি বিমান-বিধ্বংসী কামান ও সত্তরটিরও বেশী রকেট কামান এবং দুই হাজারেরও বেশী লোকের একটি কর্মী বাহিনী রয়েছে । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কুয়েচৌ প্রদেশ কৃত্রিম উপায়ে আবহাওয়াকে প্রভাবিত করার সাবির্ক প্রযুক্তি ব্যবস্থা ও কাজ পরিচালনা ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছে , এই কাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপাদান বাড়িয়েছে এবং কাযর্করভাবে স্থানীয় জনসাধারণের জানমাল , ফসল ও অথর্করী বনাঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষা করেছে আর শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি দুযোর্গ – জনিত ক্ষয়ক্ষতি লাঘব করেছে ।
এখন স্থানীয় কৃষকরা আবেগের সংগে বলেন , অতীতে শিলাবৃষ্টির দিনে দেবতার কাছে প্রাথর্না করে কোনো ফল হতো না , এখন কামানের গজর্নেই সমস্যার সমাধান হয় , হাইটেকই ফসলের আসল রক্ষা দেবতা ।
|