
চীনের হানজাতির বিয়ের রূপের উপর সামন্ত তান্কত্রি ঐতিহ্যের বেশ বিরা ট প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । চীনের প্রাচীকালের বিবাহ অনুষ্ঠানের ছয়টি প্রক্রিয়া ছিল ।
এক , কণেপক্ষ বরপক্ষের পাঠানো উপহার গ্রহণ করার মানে , বরপক্ষ কণেপক্ষকে পছন্দ করেছে । দুই , বরপক্ষ কণেপক্ষের কাছে বিয়ের প্রস্তাব উত্থাপন করার পর কণেপক্ষের নাম এবং জন্মের সাল , মাস ও তারিখ জিজ্ঞাসা করা । তিন , একটি শুভ দিন বেছে এক ধরণের সহজ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা । এতে প্রমানিত হয় যে , বর এবং কণে দুপক্ষই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । চার , বরের পক্ষ থেকে কণেপক্ষকে বিয়ের সময়ে ব্যবহার্য কিছু জিনিসপত্র পাঠানো । পাঁচ , একটি শুভদিন বেছে বরপক্ষের বধুবরণের প্রস্তুতি নেয়া । ছয় , বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা । শত শত বছর ধরে বিচিত্র বিয়ে অনুষ্ঠান গড়ে উঠেছে । নব্বধূকে বয়ে আনার বাহনও বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম ।
সমাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে হানজাতির বিয়ে অনুষ্ঠানেরও পরিবর্তন ঘটছে । এখন ১৯৮৯ সালে নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে চীনাদের বিয়ে অনুষ্ঠানের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাক :
গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক ছিল চীনের অর্থনৈতিক নির্মান জোরদার করার সময়পর্ব । তখনকার যুবক যুবতীরা উত্সাহের সঙ্গে নয়াচীনের নির্মাণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন । তারা সামন্ততান্ত্রিক চিন্তাধারার গন্ডি ত্যাগ করে ঐতিহ্যিক বিয়ের রূপ আর তেমন মেনে চলেন নি । তাছাড়া , তখন জনগণের জীবনযাত্রা তেমন সচছল ছিল না । তাই বিয়ের অনুষ্ঠান সাধারণ ছিল । বাসরঘর সাজানোও অপেক্ষাকৃত সহজ সরল । আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কয়েকটা মিষ্টি খাইয়েই জীবনের গরুত্বপূর্ণ বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হতো ।
গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে চীনাদের বিয়ে অনুষ্ঠান পঞ।চাশের দশক থেকে আলাদা হয়েছে । অনুষ্ঠা নেও নতুন বৈচিত্র্য দেখা দিয়েছে ।কোনো কোনো বর সাইকেল , কেউ আবার ট্রাকটর এবং কেইবা দেশে তৈরী মোটরগাড়ী চালিয়ে নব্বধূকে নিয়ে আসেন । আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে পাওয়া বরকণের বেশীর ভাগ উপহার হলো তোয়ালে , থার্মোস প্রভৃতি নিত্য-ব্যবহার্য সামগ্রি । অনুষ্ঠানে বরকণে অভিন্নদন জানাতে আসা অতিথিদের মিষ্টি উপহার দেন , সিগারেটে আগুন ধরিয়ে দেন ও মদ পান করান । অতিথিরাও সুন্দর সুন্দর কথা বলে বরকণের আজীবন সুখী জীবন কামনা করেন ।
চীনে সংস্কার ও উন্মুক্ত নীতির কল্যাণে জনগণ সচছল জীবনযাপন করতে পেরেছেন । আর রাষ্ট্রের দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার পর বিদেশের কিছু আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তাধারা চীনাদের বিয়ে অনুষ্ঠানকে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে । এখন চীনের তরুণতরুণীরা বিয়ের সময়ে বিয়ের সুন্দর পোশাক পরে ফটো তুলতে খুবই পছন্দ করেন । কোনো কোনো প্রেমিক-প্রেমিকা পাদ্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দামী সাদা পোশাক পরে গির্জায় গিয়েও বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন ।
নতুন শতাব্দীতে প্রবেশের পর চীনাদের বিয়ে অনুষ্ঠান আরো বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে । নতুন ও পুরোনো শতাব্দীর সন্ধিক্ষণে অনেকে জোট বেঁধে বিয়ে অনুষ্ঠান করার পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন । গত দুই বছরে চীনের তরুণতরুণীরা আর বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন না । কিছু মিষ্টি ও ফলমূল কিনে আত্মীয়দের খাইয়ে , একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বন্ধুবান্ধুবদের জানিয়ে বিয়ের সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে একটি ফটো তুলীয়েই বিয়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে । কিংবা দেশের অভ্যন্তর বা বিদেশের পর্যটন এলাকায় বেড়িয়ে এসেও বিয়ে সম্পন্ন হয় ।
|