v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-04-04 18:26:02    
লু বানের গল্প

cri
    বিশ্বসত্যতার বিকাশ যে সব দেশে সবচাইতে আগে হয়েছিল চীন সেই সব দেশের অন্যতম । চীনের সুদীর্ঘ ইতিহাসে বহু আবিষ্কারক আর শ্রেষ্ঠ কারিগরের উদ্ভব হয়েছিল । তাদের সম্পর্কে বহু কিংবদন্তী জনসাধারনের মধ্যে বংশপরম্পরায় চলে আসছে ।

    চীনে একটি প্ররচন আছে : বান মেন নুং ফু । এর অর্থ্য: এমন দুঃসাহসী কে যে লু বাং-এর সামনে নিজের ছুতোরগিরি জাহির করবে । পুরনো চীনে সমস্ত কাঠমিষ্ত্রী আর রাজমিষ্ত্রী লু বানকে তাদের আদিগুরু মনে করতো । লু বান ছিল দক্ষতা আর কলাকৌসলে শ্রেষ্ঠতার প্রতীক ।

    খৃষ্টজন্মেরচার শো বছর আগে ছিল লু বানয়ের জন্মকাল । সে সময়টা চীনের ইতিহাসের বসন্ত-শরত্ যুগ আর যুধ্যমান রাজ্যসমূহের যুগের সন্ধিকাল । লু বানের পারিবারিক পদবী কোংসু , নাম বান । তিনি ছিলেন লু রাজ্যের বাসিন্দা , তাই সবাই তাঁকে লু বান বলে উল্লেখ করতো । তাঁর পরিবার ছিল বংশানুক্রমে কাঠমিষ্ত্রী । নিজের মেহনতি পরিবারেই তিনি ছোটবেলা থেকে নানা রকম কারিগরি-কাজ শিখেছেন । ঘর তোলা , , সেতু তৈরী করা , হাতিয়ার-সরঞ্জাম উদ্ভাবন করা , পাথর খোদাই করা ইত্যাদি নানা ব্যাপারে তাঁর দক্ষতা ছিল । কিন্তু কাঠের কাজেই সবচেয়ে তার সবচেয়ে বেশি প্রতিভার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল ।

    বলা হয়ে থাকে , চীনে কাঠমিষ্ত্রীরা যে তাজ-করা মাপকাঠি , ঘিষষ্কাপ আর করাত ব্যবহার করে থাকে তা লু বানই উদ্ভাবন করেছিলেন ।

    একবার লু বান একটি রাজপ্রাসাদ তৈরী করার কাজ নিয়েছিলেন । প্রধান উপকরণ হিসেবে প্রচুর কাঠ দরকার ছিল । কাঠের জোগাড়ে লু বান তার সহকারীদের নিয়ে দক্ষিণ পর্বতে গেলেন । কুড়াল দিয়ে গাছ কাটতে যেমন পরিশ্রম হয় তেমনি সময় নেয় । ওদিকে প্রাসাদ তৈরীর কাজ আরম্ভ করার সময় ঘনিয়ে আসছে । লু বান খুব চিন্তিত হয়ে পড়লেন । একদিন তিনি গাছ কাটতে একটা খাড়া পাহাড়ে চড়ছিলেন , কষ্টেস্থষ্টে ধরে ধরে তাকে উপরে উঠতে হচ্ছিল । এক সময়ে ঘাসে বেধে তার আসুল কেটে রক্ত পড়তে লাগলো । তিনি চিন্তা করতে লাগলেন নরম ঘাঁস এত ধারালো হয় কী করে ? ব্যথা ভুলে তিনি গভীর মনোযোগে ঘাসগুলো দেখতে লাগলেন । তার চোখে পড়লো ঘাসের কিনারা জুড়ে সূক্ষ্ম-সূক্ষ্ণ দাঁত সারি বাঁধা রয়েছে । সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হোলো , কোনো লোহার পাতের পাশ -জুড়ে যদি এমনি ছোট-ছোট ধারালো দাঁত থাকে তবে তা দিয়ে শক্ত জিনিষ তাড়াতাড়ি করে কাটা যাবে না কেন । যেমনি ভাবা অমনি কাজ । কামার শালায় গিয়ে তিনি দাঁত ওয়ালো লোহার পাত পিটিয়ে তৈরী করিয়ে নিলেন । দেখা গেল তা দিয়ে চেরা-ফাড়ার কাজ যেমন কম পরিশ্রমে আর মসৃনভাবে হয় , তেমনি সময়ও লাগে কম । অল্পদিনেই প্রাসাদ তৈরীর জন্য যতো কাঠ দরকার ছিল সবই জড়ো করা হয়ে গেল । আজ যে করাত সর্বত্র ব্যবহার করা হয় তার মূলে ছিল লু বানের উদ্ভাবিত এই ছোট-ছোট খাঁজ কাটা লোহার পাত ।

    কাঠ কাটার পর , কাঠ মসৃন করার উপায় কী ? দা জাতীয় অস্ত্র দিয়ে তা করা যেতে পারে , কিন্তু তাতে সময় লাগে বেশি । কুড়াল দিয়ে চাছা যেতে পারে কিন্তু তাতে ভালো মতো মসৃন হয় না । দা আর কুড়ালের সুবিধাগুলো একত্র করে লু বান বারবার পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন । শেষ পর্যন্ত এই সব পরীক্ষা -নিরীক্ষার ফল দাঁড়িয়েছিল -ঘিষ্কাপ যন্ত্র । ঘিষ্কাপ উদ্ভাবনের ফলে সমস্ত রকম দারুশিল্প প্রক্রিয়অয় বিরাট উন্নতি হয়েছিলো ।

    পূর্ত বিদ্যায়ও লু বানের উল্লেখযোগ্য অবদান আছে । উত্তর চীনে হয়েন নামে একটি নদী আছে । এই নদীর উপর দীর্ঘকাল যাবত একটা অসমাপ্ত সেতু ছিল । গল্প আছে , এই সেতু নাকি লু বানই তৈরী করছিলেন । একটা নির্দিষ্ট তারিখে লু বানের আর একটা বড় কাজে হাত দেয়ার কথা ছিল । সেই তারিখের আগের রাত্রে লু বান না ঘুমিয়ে খুবই পরিশ্রম করছিলেন , যাতে ভোরবেলা মোরগের ডাকের আগেই সেতুর কাজ শেষ করে ফেলা যায় । কিন্তু লু বানের বড় বোন লু বানকে এতো খাটতে দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন । লু বান যাতে কাজ থামিয়ে দেয় সে জন্য লু বানের বড় বোন শেষে ভোর হবার অনেক আগেই নিজে মোরগের ডাক নকল করে ডাকতে লাগলেন । ডাক শুনে লু বান ভাবলেন ভোর হয়ে গেছে , সেতুর বাকি কাজ থেকে অগত্যা তিনি নিরস্ত হলেন । এই অসম্পূর্ণ সেতুটা বহুকাল যাবত যথাস্থানে ছিল । শুধু এই সেতুটাই নয় , লু বান খুব ভালো সেতু তৈরী করতে পারতেন বলে যেখানে যতো সুন্দর গড়নের মজবুত সেতু ছিল সবগুলোকেই লু বানের তৈরী বলে মনে করা হোতো । যেমন হোপে প্রদেশের চাওচৌ জেলায় পাথরের একটা বিরাট সেতুর খুব নাম ছিল । সেতুটা লু বানেরই তৈরী বলে উত্তর চীনে একটা ছড়া আছে । আসলে সেতুটা অনেক পরে , খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দিতে লি ছুন নামে একজন স্থপতি তৈরী করেছিলেন ।

    প্রাচীন বই থেকে জানা যায় যে , মধ্য চীনের লোইয়াং শহরের সিপাও পাহাড়ে লু বান চিও চৌ নামে একটি প্রিমাত্রিক মানচিত্র খোদাই করেছিলেন । এটাই চীনের সব চাইতে প্রাচীন পাথরের মানচিত্র । এ ছাড়া তিনি পাথর ফুঁদে ফিনিক্স পাখিও তৈরী করেছিলেন । পাথরের ফিলিক্স পাখিটা সূক্ষ্ম শিল্পকৌশলে প্রাণবস্তু করে তৈরী করা হয়েছিল , এমন কি পালকন্ডলোকে পর্যন্ত মনে হোতো হাওয়ায় অল্প অল্প নড়ছে ।