মোবাইলফোনে যোগাযোগ মানুষের স্বাস্থ্যের অনুকূল না প্রতিকূল এই প্রশ্ন নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে তর্কবিতর্ক চলছে। সুইডেনের বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিকতম গবেষণা থেকে দেখা গেছে, মোবাইলফোনের ইলেক্ট্রব্যাগ্নেটিক ওয়েভ মানুষের দেহের কোষগুলোর মধ্যকার ক্রিয়াশক্তি বাড়াতে পারে। যদিও স্বস্থ্যাএর প্রতি এই কর্মফলের প্রভাব আরো পর্যবেক্ষণসাপেক্ষ, তবুও এটা নতুন চিন্তার পথ উন্মোচন করেছে।
বিজ্ঞানীরা কোষগুলোর প্রতি ইলেক্ট্রম্যাগ্নেটিক ওয়েভের প্রভাব গবেষণার সময়ে সাধারণতঃ ইলেক্ট্রম্যাগ্নেটিক ওয়েভের বহন করা শক্তির পরিমানের দিক বিবেচনা করে থাকেন। যেমন কেমিক্যাল বন্ড নষ্ট করার যথেষ্ট শক্তি কিংবা মাইক্রোওয়েভ চুল্লীর মতো মানুষের দেহ উষ্নো করার শক্তি ইলেক্ট্রম্যাগ্নেটিক ওয়েভের আছে কিনা। কিন্তু মোবাইলফোনের ইলেক্ট্রম্যাগ্নেটিক ওয়েভের বিকিরণ খুবই ক্ষীণ। সে এই কর্মফল দিতে পারে না। সুইডেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পদার্থবিদ আবিষ্কার করেছেন যে, ইলেক্ট্রম্যাগ্নেটিক ওয়েভ মানুষের দেহের কোষগুলোর অপরিবাহীতা পরিবর্তন করতে পারে।
"নিউ সাইয়েন্টিস্ট" পত্রিকার ইন্টারনেট সংস্করণের খবরে প্রকাশ, কোষের ভেতরের পানির অনুগুলো খুবই সামান্য বিদ্যুতবাহী বলে খুবই সামান্য শক্তি উত্পাদন করতে পারে। ফলে কোষগুলোর মধ্যে আকর্ষণশক্তি দেখা দিয়েছে। এই পদার্থবিদ বলেছেন, এই আকর্ষণশক্তি সাধারণতঃ খুবই ক্ষীণ। এত ক্ষীণ যে, মাত্র বিলিয়ন বিলিয়ন ভাগের এই ভাগ নিউটন। কিন্তু মোবাইলফোনের ইলেক্টম্যাগ্নেটিক ফিল্ডের প্রভাবে তা দ্রুত বাড়ে।
তিনি গণিত মডেলের মাধ্যমে ইলেক্ট্রম্যাগ্নেটিক ফিল্ডের প্রতি দুটো লাল রক্তকণিকার কোষের প্রতিক্রিয়ার অনুকরণ করেছেন। ফলে দেখা গেছে, কোষের ভেতরের পানির অনুগুলো তাদের বাহিত ক্ষীণ বিদ্যুত অনুসারে শক্তির ম্যাগ্নেটিক লাইন বেয়ে সুশৃংখলভাবে বিন্যস্ত হয় এবং শক্তি লক্ষণীয়ভাবে বাড়ে। যখন ইলেক্টম্যগ্নেটিক ফিল্ডের প্রিকোয়েন্সি মোবাইলফোনের ফ্রিকোয়েন্সির কাছাকাছি হয় অর্থাত্ আটশো পঞ্চাশ মেগাওয়াট হয় তখন শক্তি মিলিয়ন ভাগের এ ভাগ নিউটনে পৌঁছুতে পারে অর্থাত্ কয়েকশো বিলিয়ন গুন বাড়তে পারে। গবেষকদের অনুমান, এর ফলে মানুষের দেহের গঠনগুলো ঘনীভূত হতে পারে বা রক্তনালী সংকুচিত হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকার সাম্প্রতিকতম সংখ্যায় এই নতুন আবিষ্কার প্রকাশিত হয়েছে। এই পত্রিকার সম্পাদক মনে করেন, এ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, মানুষের দেহের কোষগুলোর উপর ইলেক্টম্যাগ্নেটিক ফিল্ডের প্রভাব হয় ইলেক্টম্যাগ্নেটিক উষ্নকরণের মাধ্যমে নয়, বরং কোষগুলোর মধ্যকার আকর্ষণশক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে। কিন্তু এই আবিষ্কার নিছক তত্ত্বগত । তার উপর তার মডেল অতি সরল বলে আরো পরীক্ষার ফলাফলের সমর্থন সাপেক্ষ।
বর্তমানে গবেষকরা মোবাইলফোনের ইলেক্টম্যাগ্নেটিক ফিল্ডে বিভিন্ন প্রাণীর দেহের গঠনগুলোর অপরিবাহীতার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করেছেন।
|