সিনহুয়া বার্তাসংস্থা ২৭শে মার্চ কাঠমণ্ডু থেকে জানিয়েছে, নেপালে বিলোপের সম্মুখীন বিরল বন্য প্রাণী সংরক্ষণে লক্ষণীয় সাফল্য পাওয়া গেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপাল সরকার জাতিসংঘ ও বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিল সংস্থা ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্যে সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশের করিডর গড়ে তোলার মাধ্যমে মানুষের আবাসিক কমিউনিটি এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এলাকা সমন্বিত করা হয়েছে । ফলে কার্যকরভাবে বিরল বাঘ ও গণ্ডার প্রভৃতি বন্য প্রাণী সুরক্ষা করা হয়েছে , তাতে প্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্যের টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়িত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজ তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং প্রশংসা করেছে ।
হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত নেপালের বিশেষ অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থা ও আবহাওয়া আছে। তার প্রাণী ও উদ্ভিদ খুবই বৈচিত্র্যময় । দক্ষিণ নেপালের সমতলভূমির আয়তন ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার , এটা নেপালের প্রধান কৃষি অঞ্চল, একই সময়ে এখানে থাকে বিশ্বের অতি-বিরল বন্য পশু, যেমন রয়েল বেংগল টাইগার, এক শিঙ-বিশিষ্ট গণ্ডার এবং হাতি ইত্যাদি ।
জাতিসংঘ আর বিশ্বের বন্য প্রাণী তহবিল ইত্যাদি অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা ও আর্থিক সাহায্যে নেপাল সরকার বিগত দশ বছরেরও বেশী সময়ে এই অঞ্চলে বন্য পশু সংরক্ষনের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের গবেষণা চালিয়েছে এবং প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছে, বিশেষ করে বাঘ সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশ্বে উন্নত মানের সাফল্য অর্জন করেছে । দক্ষিণ নেপালের সমতলভূমিতে প্রবেশ করলে আপনার চোখে পড়বে এক সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশের করিডর , এটা বন্য প্রাণী সংরক্ষণে নেপালী সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা । তার বাস্তব বিষয়বস্তু হলো: কয়েকটি জাতীয় পর্যায়ের ফরেস্ট পার্ক আর কতকগুলো আবাসিক এলাকাকে সমন্বিত ও সংযুক্ত করা হয়, তাতে এক বিরাট প্রাকৃতিক অঞ্চলে থাকে বন, কৃষিক্ষেত, নদনদী ও জনপদ। এইভাবে বন্য পশুরা অবাধে চলাফেরা করতে পারে , স্থানান্তরিত হতে পারে , বিরাট আওতায় খাবার সন্ধান করতে পারে এবং তাঁদের বংশবৃদ্ধি করতে পারে ।
এর সংগে সংগে , আবাসিক এলাকা ও বন্য প্রাণীদের থাকা ও চলাফেরার এলাকার মধ্যে একটি সুবিশাল মধ্যবর্তী এলাকাও আছে। অর্থাত্ আবাসিক এলাকার চার দিকে উদ্ভিদ --গাছ-গাছড়ার সবুজ বেড়া তৈরী করা হয়, বৃক্ষরোপন করা হয় , এমন কি কিছু ফসল চাষ করা হয়, সাধারনত এগুলোর তেমন যত্ন নিতে হয় না, আপনা-আপনিই গাছ ও ফসল ক্রমেই বড় হয়ে উঠতে পারে । অবশ্য এখানে কতকগুলো প্রতিরক্ষা-খাদ ও পর্যবেক্ষণটাওয়ার তৈরী করা হয়, যাতে হিংস্র বুনো পশু সহজে আবাসিক এলাকায় ঢুকতে না পারে । যদিও কোনো কোনো সময়ে বাঘ মানুষকে আহত করেছে --এমন খবর পাওয়া যায় , তবুও বাসিন্দারা সাধারনত বাঘ শিকার করেন না । কেউ অবৈধভাবে পশু শিকার করতে সংরক্ষণ এলাকায় প্রবেশ করলে , স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের বাধা দেন ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেপালের এই অঞ্চলে রয়েল বেংগল বাঘের সংখ্যা সুস্পষ্টভাবেই বেড়েছে, সত্তরের দশকের ১৯৭টি থেকে বেড়ে বর্তমানে ৩৫০টি হয়েছে । স্থানীয় বিশেষ (এক শিঙ্-বিশিষ্ট) গণ্ডারের সংখ্যা বেড়ে ৬১২ হয়েছে , হাতির সংখ্যা ১২০টি হয়েছে।
আগামী জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে । নতুন অর্থ-বছরে নেপাল সরকার মোট আয়তন ১৭৪৫.৫১ হেক্টর বন্যাঞ্চল দেখার দায়িত্ব ৩১টি আবাসিক এলাকা বা কমিউনিটির কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করছে, তখন বন্য প্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থার আরও উন্নতি হতে পারে ।
|