গত দু'বছরে চীনের পূর্ব ছিংহাই প্রদেশের ফিং আন জেলার সিয়া হো থান গ্রামে গরু ও ভেড়া পালনের মাধ্যমে গ্রামবাসীরা অবস্থাপন হয়ে উঠেছেন।
তিরিশ বছর আগে সিয়া হো থান গ্রামে যখন মা ইয়ো মেইয়ের বিয়ে হয় তখন তিনি আজকের সুখী জীবনের কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন না। তিনি বলেছেন, তখন গোটা গ্রাম ছিল অনুন্নত। তাঁর গ্রামে বিদ্যুত ছিল না, পানি আনতে হতো অনেকদুর থেকে। তাঁর চারটে সন্তান, স্বামী নিয়ে তাদের পরিবারের ছয় জন সদস্য, তিন বেলা খাবার নিয়ে মাথা ঘামাতে হতো। মাঝামাঝে হাতে টান পড়তো।
তাঁর স্বামী ইয়ে ডিন সান গ্রামের একজন কেডার। কৃষকদের সঙ্গে সঙ্গে মিলে অভাব অনটনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি সংকল্পবদ্ধ। এ সম্পর্কে মা ইয়ে মেই বলেছেন,
"তিনি গ্রামের কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত এবং ক্লান্ত, তাঁর কাজে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য কখনো তাঁকে ঘরকন্না করতে দিই না আমি। আমার স্বামী বলেছেন, গ্রামের ভাইবোনদের অভাব যতদিন না মিটবে, ততদিন শুধু কাপড়ের জুতো পরবেন, চামড়ার জুতো পরবেন না।"
প্রায় বিশ বছর হলো ইয়ে ডিন শান এই গ্রামের কেডার হয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে গ্রামের একশোটিরও বেশী কৃষক পরিবার বছরের পর বছর নেড়া পাহাড় এখন হওয়ায় বাইরের গাড়ি এই গ্রামের ভেতরে চলে আসতে পারছে। প্রতিটি কৃষক পরিবারে এখন কলের পানি পাওয়া গেছে।
ক্রমে ক্রমে গ্রামবাসীদের জীবনের উন্নতি হয়েছে, তবে কৃষকদের হাতে উদ্বৃত্ত টাকা তেমন বেশী নয়, কৃষদের আয় কেমন করে বাড়বে তা নিয়ে ইয়ো ডিন শান চিন্তাভাবনা করতে লাগলেন।
এমন সময়ে ছিংহাই প্রাদেশিক সরকার অর্থনীতির কাঠামো ঢেলে সাজিয়ে এই প্রদেশের পুর্বাঞ্চলের উত্পাদিত জাব ব্যবহার করে পশ্চিমাঞ্চলে গরু ও ভেড়া পালন করে কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য নতুন নীতি প্রনয়ন করে। সিয়া হো থান গ্রাম পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত, সমুদ্রের উপরিতল থেকে সেখানকার উচ্চতা বেশী, তাপমাত্রা কম, অধিকংশ জমি রয়েছে পাহাড়ের গায়ে, একর প্রতি শস্য উত্পাদনের পরিমান খুবই কম। স্থনীয় সরকারের প্রস্তানে সিয়া হো থান গ্রামে পশু পালন শিল্প উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হলো। এই প্রসংগে ইয়ো ডিন শান বলেছেন,
"কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য গণ সরকার যে নীতি প্রনয়ন করেছে তা কার্যকরী করাই আমাদের ক্যাডারদের দায়িত্ব। আমরা প্রথমে বাইরে গিয়ে ভেড়া পালনের কলাকৌশল শিখি, তার পর গ্রামবাসীদের শিখাই। এই বছর আমার পরিবার তিনশো বিশটি ভেড়া পালন করেছে।"
ইয়ে ডিন শান জানিয়েছেন, তাঁর গ্রামে ইতিমধ্যে একশোটি গোয়াল ঘর তৈরী করা হয়েছে, চারভুমি থেকে শাবক ভেড়া কিনে পালন করতে প্রতিটি কৃষক পরিবার তিরিশ হাজার ইউয়ান ঋণ পেতে পারে। পশুরখাদ্যশস্যের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রায় একশো হেকটর জমিতে যব চাষ করা হয়েছে। অনেক কৃষক এখন ভেড়া জবাই আর মাংস বিক্রিও করছেন।
দু'বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। গতবছরে এই গ্রামের মাথাপিছু আয় প্রায় একহাজার সাতশো ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে। এই বছর মাথা পিছু আয় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার ইউয়ানে পৌঁছতে পারবে।
সিয়া হো থান গ্রামের মাথায় একটি ছোট নদীর ধারে একজন বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে গল্প করে জানা গেছে যে, গরু ও ভেড়া পালনের জন্য তাঁর পরিবারের লক্ষনীয় পরিবর্তন হয়েছে।
এখন অন্নবস্ত্র নিয়ে আমাদের কোনো চিন্তা নেই, আমাদের বিদ্যুত ব্যবহারের সুযোগ হয়েছে, আমার বাড়িতে টিভি সেটও আছে।
জীবন সচ্ছল হওয়ার পর জনমংগল সাধনের ইচ্ছা কৃষক ইয়ে ফু সিয়াং-এর মনে জন্মেছে। গত বছরে একটি দুতলা শিক্ষাভবন নির্মিত হয়েছে, এই শিক্ষাভবন নির্মানের সময়ে সাহায্যের দরকার হলে তিনি স্বেচ্ছায় কাজ করতে যেতেন। এই স্কুল এখন চালু হয়েছে। এই গ্রামের স্কুল বয়সী ছেলেমেয়েরা সবাই এই স্কুল ভর্তি হয়েছে। ছি ফিং নিয়ান নামে একটি ছাত্র আমাদের জন্য আবেগময় কন্ঠে সুং রাজবংশীয় আমলের একটি প্রাচীন কবিতা আবৃত্তি করেছে।
ছি ফিং নিয়ানের বাবা এই গ্রামের স্কুলের শিক্ষক, তাঁর বাবা এই গ্রামের স্কুলের শিক্ষক হতে পেরে নিজকে ধন্য মনে করেন, কারণ গ্রামবাসীরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেন এবং সম্ভাব্য সব সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করেছে যাতে ছেলেমেয়ে সুশিক্ষা পেতে পারে। ছি ফিং নিয়ানের স্বপ্ন, বড় হলে তার বাবার মত শিক্ষকতা করবে।
ছিং হাই প্রদেশের প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকায় সিয়া হো থানের কৃষকরা দৃপ্ত পদক্ষেপে সচ্ছলতার পথে এগিয়ে যাছেন।
|