অতীতের বেশ দীর্ঘ একটি সময়পর্বে চীনে যুবকযবতী ও কিশোরকিশোরীদের মধ্যে যৌন শিক্ষ বরাবরই গোপনে গোপনে চলতো। এটা প্রাচ্যের রক্ষণশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। হাজার বছরের সামন্ততান্ত্রিক ইতিহাসের দরুন চীনারা যৌনতা সম্পর্কে আলাপ করতে লজ্জা পান। এই ধরণের আচরণের অনেক ত্রূটি আছে। বিশেষ করে এটা যুবকযুবতী ও কিশোরকিশোরীদের মধ্যে সুষ্ঠু যৌন ধারণা গড়ে তোলার প্রতিকূল। গত দু'বছরে চীনাদের ধারণা ত্রমেই উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পেইচিং, শাংহাই ইত্যাদি অনেক শহরে ইতিমধ্যেই যৌন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শিক্ষাকে মাধ্যমিক ও প্রাইমারী স্কুলের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এখন চীনে ত্রিশ কোটিরও বেশী দশ থেকে আঠারো বছর বয়সের যুবকযুবতী ও কিশোরকিশোরী আছে। তাদের বয়ঃসন্ধি ঘটে সাধারণতঃ বারো থেকে তেরো বছর বয়সে। এটা দশ বছর আগেকার তুলনায় এক থেকে দুই বছর কমেছে। কিন্তু চীনে এই ধরণের যৌন অকালপক্কতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে পশ্চাদপদ। অনেক স্কুল ও অভিভাবক ছাত্রছাত্রীদের যৌন শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে এখনো রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করছে। ফলে বয়ঃপ্রাপ্ত হবার সময় অনেক ছেলেমেয়ে এ ব্যাপারে অসহায় হয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে কিছু মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা দেখা দেয়। আরো উদ্বেগের ব্যাপার হচ্চে এই যে, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীনের যুবকযুবতী ও কিশোরকিশোরীদের মধ্যে অপরাধীদের সংখ্যান ক্রমেই বাড়ছে। এদের মধ্যে যৌন অপরাধীদের অনুপাত খুবই বেশী।
এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্যে ২০০২ সাল থেকে চীন আংশিক শহর ও অঞ্চলের মাধ্যমিক ও প্রাইমারী স্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষাকে আনুষ্ঠানিক পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে এবং ছাত্রছাত্রীদের যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষার বিশেষ পাঠ্যপুস্তক দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে চীনে যুবকযুবতী ও কিশোরকিশোরীদের জন্যে প্রণীত যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষায় শুধু শারীরবৃত্তই নয়, যৌন নৈতিকতা, যৌন নন্দনত্ত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রের বিষয়বস্তুও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্চে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে যুবকযুবতী ও কিশোরকিশোরীদের ছোটবেলা থেকে ক্রমবর্ধমানভাবে শারীরবৃত্ত ও মনস্তত্ত্ব ক্ষেত্রের বিষয়বস্তু জানতে দেয়া এবং তাদেরকে নির্ভুল যৌন ধারণা গঠনে ও আত্মরক্ষায় সাহায্য করা, যাতে তারা যৌন ক্ষতি ও যৌন হয়রানি ঠেকাতে এবং একই সময় পাপি লাভ, বিয়ের আগে অন্তঃসত্বা হওয়া, এমন কি যৌন অপরাধ ইত্যাদি প্রবণতা এড়াতেও সক্ষম হয়।
ম্যাদাম লু চুও ফিং হচ্চেন দীর্ঘকাল ধরে শিশু, কিশোরকিশোরী ও যুবকযুবতীদের শিক্ষার গবেষণায় নিয়োজিত একজন বিশেষজ্ঞ এবং চীনে নতুন একাশিত মাধ্যমিক ও প্রাইমারী স্কুলের যৌন শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকের অন্যতম রচয়িতা। তিনি মনে করেন, যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষায় স্কুলের উচিত প্রধান ভূমিকা পালন করা। স্কুলের শিক্ষায় যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করে দেয়া উচিত। শুধু যৌন শারীরবৃত্তম, যৌন মনস্তত্ব আর যৌন রোগ নিবারণ, বালিকা অন্তঃসত্ত্বা এড়ানো ইত্যাদি মৌলিক জ্ঞানই নয়, লিংগ ধারণা, স্ত্রী পুরুষ সমতা, স্ত্রী পুরুষ মেলামেশা আর প্রেম, বিবাহ ইত্যাদি আরো সদৃদ্দ বিষয়বস্তুও শেখানো উচিত।
সংবাদদাতা সদ্য-প্রকাশিত "যুবকবযুবতী ও কিশোরকিশোরীদের যৌন শিক্ষার" পাঠ্যপুস্তক খুলে দেখলেন, এতে প্রধানতঃ যৌন নৈতিকতা, যৌন নন্দনতত্ব এবং মেয়ে আর ছেলেদের কিভাবে নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়বস্তু লেখা রয়েছে। প্রতিটি পৃষ্ঠায় সহজে বোধগম্য কার্টুন ছবিও রয়েছে। শুধু তাই নয়, পাঠ্যপুস্তকে এইডস রোগ নিবারণ, বিয়ের আগে যৌন তত্পরতা প্রত্যাখ্যান ইত্যাদি স্পর্শকাতর বিষয়বস্তুও লেখা রয়েছে।
স্কুলে প্রবর্তিত যৌন স্বাস্থ্য শিক্ষাকে স্কুলে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছে। তারা অতীতে যে সব বিষয় জানতে চাইতো অথচ জিজ্ঞাসা করতে লজ্জা পেতো, এখন পাঠ্যপুস্তকে এ সবের উত্তর পায়।
|