v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-29 21:23:04    
চীনের ইয়াংসি নদীর ওপর প্রথম সেতু

cri
    সুদীর্ঘ এবং সুবিশাল ইয়াংসি নদী হলো চীনের বৃহত্তম মহানদী। অতীতে সুদীর্ঘকাল যাবত ইয়াংসি নদী ছিল উত্তর চীন থেকে দক্ষিণ চীন যাওয়ার স্থলপথে এক অনতিকম্য প্রাকৃতিক বাধা। নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হবার আগে ইয়াংসি নদীর ওপর কোনো সেতু তৈরী করা হয় নি। ১৯৪৯ সালে চীন গণ প্রজাতে প্রতিষ্ঠিত হবার প্রায় অব্যবহিত পরেই অর্থাত্ ১৯৫০ সালে কেন্দ্রীয় গণ সরকারের নির্দেশ অনুসারে চীনের রেলপথ-মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইয়াংসি নদীর মধ্য অববাহিকার উহান শহরে নদীটির ওপর প্রথম সেতু তৈরী করার জন্যে জরিপ আর সেতুটির প্রাথমিক গঠনপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। ১৯৫৩ সালের মে মাসে প্রাথমিক গঠন পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়। সরকারের অনুমোদনে গুরুত্বের সঙ্গে গঠনপরিকল্পনাটির সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্যে তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঠানো হয়। ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে উহান শহরে ইয়াংসি নদীর ওপর মহাসেতু নির্মাণ প্রকল্প বিষয়ক ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়।

    এই প্রকল্পে প্রযুক্তিগত সাহায্য দেয়ার জন্যে আমন্ত্রণক্রমে সৌভিয়েত সরকারের পাঠানো একটি বিশেষজ্ঞ-গ্রুপ ১৯৫৪ সালের জুলাই মাসে চীনে আসে। সেই বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রথম ইয়াংসিসেতু প্রকল্পটির একটি অগ্রণী অংশ হিসেবে ইয়াংসির শাখানদী-হানশুই নদীর ওপর একটি লৌহসেতু নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৫৫ সালের জুলাই মাসে কঠিন আর জটিল পরীক্ষানিরিক্ষা চালানোর পর প্রধান সেতুটির প্রযুক্তিগত গঠনপরিকল্পনা প্রণয়ন পুরোপুরি সম্পন্ন হয়। একই বছরের পয়লা সেপ্টেম্বর মেতুটি নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ১৯৫৭ সালের মার্চ মাসে নদীতে সেতুটির খামগুলো নির্মাণের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়। মে মাসেই থামগুলোর ওপর ইস্পাতনির্মিত বীম বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়। ১৯৫৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মহাসেতুটি নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়। একই বছরের অক্টোবর মাসে রাস্ট্রীয় যাচাই কমিটি সেতুটির গুণগত মান যাচাই করার পর সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। সেতু নির্মাণ প্রকল্পটিতে সব মিলিয়ে অর্থ খরচ হয়েছে ৯ কোটি ৮০ লক্ষ ১৪ হাজার ইউয়ান। এবং সেতুটি নির্মাণ করতে মোট৪২৮৪২৮৪টি শ্রম-দিন লেগেছে। শ্রম-দিন বলতে এখানে একজন লোকের একদিনের কাজ বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া, বিনা পারিশ্রমিকে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী-হুপেই প্রদেশের আর উহান শহরের স্থানীয় সামরিক ব্যক্তি আর বিভিন্ন স্তরের ক্যাডার-মোট ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক সেতু নির্মাণের পর নির্মাণ-স্থল আর তার আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার রিচ্ছন্ন করার কাজে সাহায্য করেছেন।

    সেতুটির প্রযুক্তিগত গঠনপরিকল্পনা প্রণয়নে তখনকার বিশ্ব সেতু নির্মাণ-ইতিহাসে নজির-বিহীন পদ্ধতি অবলম্ভন করা হয়েছে, অর্থাত্ নদীর ওপর থেকে নদীর তলদেশ পর্যন্ত অতি বিশাল (প্রকান্ড)পাইপ-থামগুলো বসিয়ে তার মধ্যেই ভিত্তিস্থাপন আর ড্রলি প্রভৃতি নির্মাণ কাজ চালানোর নতুন কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে, ইয়াংসি নদীর সুগভীর পানিতে গতানুগতিক পদ্ধতি(কাইসন) পদ্ধতি ব্যবহার করা খুব মুশকিল। কাইসন পদ্ধতি হলো পানির তলায় কাজ করার জন্য জলনিরোধক বড় বাক্স বা চ্যাম্বার বসানো। কিন্তু ইয়াসি নদীর গভীর পানিতে এ রকম বাক্স বসানো সম্ভব ছিল না।নতুন পদ্ধতিতে অপেক্ষাকৃতভাবে সহজেই গভীর পানিতে কাজ করা যায় এবং সেতু নির্মাণের কর্মমেয়াদ আর খরচও কমানো সম্ভব হয়েছে। সুবিশাল পাইপ-থাম বসানোর পদ্ধতিতে শ্রমিকেরা প্রায় খোলা আকাশের নিচেই কাজ করতে পারেন, তাতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় না। আর বাক্স গভীর পানির নিচে বসানোর পুরনো পদ্ধতিতে শ্রমিকদের সেই বাক্স অস্বাভাবিক বায়ুর চাপে কাজ করতে হতো, তাতে অসুখবিসুখ আর ঝুঁকি বেশী হতো। আর নতুন পদ্ধতিতে গভীর পানিতে সেতুর থাম নির্মাণ করার অনেক সুবিধা হয়।