সেই ১৯৯৯ সালের কথা। এলাকার শিক্ষিত এবং তরুন টগবগে যুবকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করি আমাদের ক্লাব । স্থান হিসেবে বেছে নেই বাজারের বুক চিরে বেড়িয়ে যাওয়া রাস্তার পাশের জায়গা। আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষকের কাছে বায়না ধরি জমি দেওয়ার জন্য। স্যার আমাদের উদ্দেশ্যের কথা শুনেন এবং খুশি হয়ে আমাদের পছন্দের জায়গায় তিন শতক জমি ক্লাবের নামে লিখে দিতে রাজি হন। বলা যায়, স্যার ঐ দিন জমি দান না করলে আমাদের ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়তো হতো না। তারপর রীতি মত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাবের কমিটি গঠন করি। পহেলা মে ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু হয়, ক্লাবের অগ্রযাত্রা। ২০শে মে স্যার ক্লাবের নামে তিন শতক জমি লিখিতভাবে দান করলেন। ক্লাব খুজে পেল তার অস্তিত্ব তার নিজের জমিতেই। সেই থেকে ক্লাবের কার্যক্রম আজ পর্যন্ত চলছে, যার অগ্রগতি এক দিনের জন্যও থেমে থাকে নি।
ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমরা ক্লাব ঘরে সাউন্ত বক্সে অনুষ্ঠান শুনতাম। রাত ৯টায় সি আর আই এর বাংলা অনুষ্ঠান শুরু হতেই বাজারের মানুষ বা ক্লাবের সামনের রাস্তা দিয়ে হে টে যাওয়া পথিক ক্লাবের সাউন্ড বক্স থেকে বেরিয়ে আসা অপরিচিত ভংগিতে বাংলা উচ্চারণে খবর শুনতে পেয়ে থমকে দাড়াত এবং মনোযোগ দিয়ে খবর শুনত। এক পর্যায়ে শ্রোতারা একে অপরকে প্রশ্ন করতো কোন দেশের মানুষ এভাবে এত সুন্দর করে খবর পড়ছে। চীনের কথা বলতেই সবাই আরো বেশী উত্সাহ নিয়ে অনুষ্ঠান শুনতো। এই রকম যেন, চীনের অনুষ্ঠান বলে কথা শুনতেই হবে। এভাবে সি আর আই এর শ্রোতা সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে লাগল।
আমরা প্রথম অবস্থায় ক্লাব ঘরে ২০ জন শ্রোতা বসার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হই। তারপর বাজারের মানুষের অত্যাধিক সি আর আই ভক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে সবাইকে বসতে দিতে রীতিমত হিমসিম খেয়ে যাই। সমস্যা তুলে ধরি এবং আর্থিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করি। তারা আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। যা দিয়ে পরবর্তীকালে আমরা কয়েকটি বেঞ্চ, একটি স্টিলের আলমারী ও একটি লম্বা টেবিল তৈরি করতে সক্ষম হই। অবশ্য এ সব তৈরি করতে আমাদের ক্লাবের কয়েক জন সদস্য কাঠ দিয়ে সহযোগিতা করে। আজ আমাদের ক্লাবের একটি কান্ড গড়ে উঠেছে। যার সুবিধা এলাকার মানুষ ভোগ করতে পারছে। সি আর আই এর জনপ্রিয়তাই এনে দিয়েছে আমাদের এ সহযোগিতা। এ সব সহযোগিতার হাত আজও গুটিয়ে যায় নি। ক্লাবের মানবিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে তারা সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে। তাই সি আর আই এর মাধ্যমে সেই সব বন্ধুদের অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আরো ধন্যবাদ জানাচ্ছি স্থানীয় একটি এন জি ওকে , যারা আমাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে।
আমাদের ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন বেতার সংস্থা থেকে বেশ সহযোগিতা পেয়ে আসছি। অথচ যাকে ঘিরে আমাদের ক্লাবের এত উন্নতি, সেই সি আর আই এর কাছ থেকেই পেয়েছি মাত্র এক বার একটি প্যাকেট। তারপরও সান্তনা যে সি আর আই এর কারণে আমাদের ক্লাব খুব তাড়াতাড়ি উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে।
ক্লাবের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে সি আর আই সব সময় আমাদের পাশে থাকবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সি আর আই এর উত্তোরত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে বিদায় নিচ্ছি।
——বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার নিউট্র্যাল লিসনার্স ক্লাবের সভাপতি মোঃ মতিয়ার রহমান
|