v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-28 10:53:07    
ঝিঁ ঝিঁ পোকার উপকথা

cri
    অনেক দিন আগেকার কথা । এক লোকের মারাত্মক রকমের জুয়োর নেশা ছিল । কোনো কাজই সে করতো না , দিনরাত কেবল জুয়ো নিয়ে মেতে থাকতো । তার স্ত্রী কাপড়ের জুতো তৈরী করে সেগুলো বাজারে বিক্রি করে যা পেতো , তাই দিয়ে কোনো রকমে তাদের ভরণপোষণ চলতো । একদিন লোকটা জুয়ো খেলে একেবারেই সর্বস্বান্ত হয়ে গেলো । এ কথা জান্তে পেরে তার স্ত্রী রাগে ক্ষোভে অস্থির হযে তাকে অনেক বকাবকি করল । তবু লোকটার জুয়োর নেশা গেল না ।

    গ্রীষ্মকালের একদিন । বাজারে পাট উঠেছে । সেকালে পাটের সুতো দিয়ে কাপড়ের জুতো সেলাই করা হোতো । সে জন্য লোকটার স্ত্রী তার বহু কষ্টে জমানো কিছু পয়সা তার স্বামীকে দিয়ে বাজার থেকে কয়েক সের কোষ্টা কিনে আনতে বললো । লোটা পয়সা নিয়ে বাজারে গিয়ে দ্যাখে রাস্তার পাশেই জুয়োর আড্ডা বসেছে । গুড়ের গন্ধ পেলে মাছির যে অবস্থা হয় , তারও সেই অবস্থা হোলো । কোষ্টা কেনার কথা সে একেবারেই ভুলে গেল , কোষ্টা কেনার পয়সা নিয়ে সে গুটিগুটি জুয়োর আড্ডায় গিয়ে বসলো । কিছুক্ষণের মধ্যেই সে সব পয়সা খুইয়ে ফেললো । জুয়োর আড্ডা থেকে উঠে আসার পর তার কোষ্টা কেনার কথা মনে পড়লো । কিন্তু এখন তো আর হাতে একটি পয়সাও নেই । লোকটা ভারী চিন্তিত হয়ে পড়লো । তার মনে পড়ে গেল জুয়াবীদের একটি কথা : সত্যি কথা বলা মানে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনা । সে ভাবল : বাড়ি গিয়ে আমি যদি সত্যিকথা বলি তাহলে তো স্ত্রী একটা তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে বসবে । কিন্তু আমি হলাম পুরুষ মানুষ , একটা মেয়ে মানুষকে ভয় করতে যার কেন ? বাড়ি ফিরে বরং বুক ফুলিয়ে একটা মিথো কথা বলে দেব , ধরবে আর কী করে ?

    লোকটা মনে মনে নিজেকে সাহস দিতে দিতে বাড়ি ফিরে গেল । তার স্ত্রী উনুনের পাশে বসে রান্না করছিল । স্বামীকে ফিরতে দেখে সে রান্না ছেড়ে উঠে এসে উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করল : "কই , কোষ্টা কই ? কোষ্টা কিনে আনো নি যে ।" স্ত্রীর প্রশ্ন শুনে লোকটার সমস্ত সাহস উবে গেল , আগে থেকে বনিয়ে রাখা মিথ্যে কথাটা সে মোনোমতে টেনে টেনে বলল : বা-জা-রে পা-ট উ-ঠে-নি । স্বামীর কথা বলার ধরণ দেখেই স্ত্রীর আর বুঝতে বাকি রইল না কোষ্টার পয়সা কোথায় গেছে । মুহুর্তের মধ্যে হুলস্থুল শুরু হয়ে গেল । স্ত্রী তারস্বরে ক্রমাগত বলতে লাগলো : " তুমি জুয়ো খেলে সব পয়সা খুইয়ে এসেছো।" স্বামীও গোঁ ধরে অনবরত বলে চললো : " বাজারে পাট উঠে নি । বাজারে পাট উঠে নি ।" বেশ কিছুক্ষণ ধরে দুজনের মধ্যে এমনি চেচামোটি চলতে লাগলো । শেষে আর কোনো মোক্ষম যাক্তি না পেয়ে স্বামী রাগের মাথায় উনুন থেকে একটা জ্বলন্ত চ্যালাকাঠ তুলে স্ত্রীর মাথায় এক মোক্ষম ঘা বসিয়ে দিল । স্ত্রীর মাথা খূলি দু ফাঁক হয়ে গেলে , সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাণ বেরিয়ে গেল । স্ত্রী খুন হয়ে গিয়ে রক্তের মধ্যে পড়ে আছে দেখে লোকটা ভয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল , তার বোধশক্তি লোপ গেল । পালাবার জন্যে বেসামালভাবে এক লাফ দিয়ে সে পিছু হটতে গেল , কিন্তু সেই দিশেহারা লাফে তার মাথা প্রচন্ডভাবে পেছনের দেয়ালে ঠুকে গেল । মাথা ফেটে গিয়ে রক্ত ছুটলো । কিছুক্ষণের মধ্যে তারও মৃত্যু হোলো।

    ঘরের মধ্যে স্বামস্ত্রীর দেহ নিস্পন্দ হয়ে পড়ে রইল , কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে ছোট বড় দুটো ঝিঁ ঝিঁ পোকা বেরিয়ে এসে উঠোনের একটি গাছের ডালের ওপর উড়ে গিয়ে বসলো । সেই থেকে প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে বাজারে পাট উঠলে গাছ থেকে দুটো ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শোনা যায় । ছোট ঝিঁঝিঁ পোকা যেন এই বলে ক্রমাগত ডাকতে থাকে : "সব পয়সা তুমি খুইয়ে এসেছো , সব পয়সা তুমি খুইয়ে এসেছো" । আর বড় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের মধ্যে যেন এই উত্তর শোনা যেতে থাকে : " বাজারে পাট ওঠে নি । বাজারে পাট ওঠে নি ।" তাই লোকেরা বলাবলি করতো--পুরনো কালের সেই স্বামী স্ত্রী বুঝি দুই ঝিঁঝিঁ পোকার রূপ ধরেছে ।