২৫ বছর বয়স্ক আওলা মেইলান উত্তর চীনের অন্তঃমঙ্গলিয়া স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের দাউর জাতির একজন মেয়ে। গত কয়েক দিন তিনি খুব আনন্দিত। কারণ তিনি এইমাত্র ডক্টরেট ডিগ্রি কোর্স শুরু করার জন্য পেইচিং শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়েল একটি চিঠি পেয়েছেন। তাঁর আরো গৌরবের বিষয় এই যে, তিনি দাউর জাতির প্রথম ডক্টরেট ডিগ্রির ছাত্রীতে পরিণত হয়েছেন। চীনে দাউর জাতির মতো সংখ্যালঘু জাতির আরো বেশি মান্টার্স ডিগ্রি ও ডক্টরেট ডিগ্রির ছাত্রছাত্রী আছেন। তারা ছোট বেলা থেকে সংখ্যালঘুজাতির শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং দেশের সংখ্যালঘুজাতি বিষয়ক যোগ্য কর্মীতে পরিণত হয়েছেন।
সংখ্যালঘুজাতির শিক্ষা চীনের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ। শিক্ষার প্রধান পদ্ধতি হল বিভিন্ন জাতির যার যার ভাষা ও লিপি অনুসারে স্বজাতির ভাষা আর হান ভাষা-এই দুটো ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এই ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থার কল্যাণে সংখ্যালঘুজাতির ভাষা ও লিপি প্রসারিত হয়েছে, বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং বাইরের সংগে সংখ্যালঘুজাতির আদান-প্রদানের শক্তিও বাড়ানো হয়েছে।
আওলা মেইলান ছোট বেলা থেকেই এই দুটো ভাষার শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি প্রাথমিক স্কুলে হান ভাষা ও দাউর ভাষা-দুটো ভাষার শিক্ষা গ্রহণ করেছি। তার পর আমি দাউর জাতির মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করেছি। আমি পর পর অন্তঃমঙ্গোলিয়ার সংখ্যালঘুজাতির শিক্ষক প্রশিক্ষণ হনস্টিটিউট থেকে ব্যাচ্লর্স ডিগ্রি আর কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘুজাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ইনষস্টিটিউট থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি পেয়েছি। এখন সংখ্যালঘুজাতির শিক্ষা তত্ত্ব গবেষণা করার জন্য আমি একজন ডক্টরেট ডিগ্রির ছাত্রী হয়েছি।
চীনের ৫৫টি সংখ্যালঘুজাতির অন্যতম দাউর জাতির লোকসংখ্যা ১লক্ষ ৪০ হাজার। তারা প্রধানতঃ উত্তর-পূর্ব চীনে বাস করেন। ১৯৪৯ সালে নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হবার আগে দাউর জাতি আপাততঃ প্রাচীন পশু পালকের জীবনযাপন করতো। তাদের স্বজাতির শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। নয়া চীন প্রতিষ্ঠিত হবার পর চীন সরকার সংখ্যালঘুজাতির উন্নয়নের উপর খুব মনোযোগ দিচ্ছে, সংখ্যালঘুজাতির শিক্ষার উন্নয়নকে চীনের সংখ্যালঘুজাতি বিষয়ক নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধার্য করেছে এবং এই শিক্ষা ব্রতকে বিকশিত আর সহায়তা করার জন্য সুবিধাজনক নীতি অবলম্বন করেছে। ফলে সংখ্যালঘুজাতির শিক্ষা ব্রতের দ্রুত প্রসারিত হয়েছে।
চীনের সংখ্যালঘুজাতির শিক্ষা গবেষণাগারের প্রধান তেন্ সিং সংখ্যালঘু জাতির শিক্ষা ব্রতের উন্নয়নের বর্তমান অবস্থা প্রসংগে বলেছেন, গত ৫১ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিকশিত হবার মাধ্যমে চীনের বিভিন্ন ধরণের স্কুলে সংখ্যালঘুজাতির ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ১ কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি হয়েছে। এই সংখ্যা মোট ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার শতকরা ৭.৬ ভাগে দাঁড়িয়েছে। চীনে সীমান্ত এলাকাগুলোতে বসবাসকারী সংখ্যালঘুজাতির জন্য ফি-মুক্ত শিক্ষা এবং বিনামূল্যে পাঠ্যপুন্তক আর লেখাপড়ায় ব্যবহার্য সামগ্রি সরববাহের সুবিধাজনক নীতি প্রবর্তন করা হয়। এখন চীনের বিভিন্ন সংখ্যালঘুজাতি অবাধে স্বজাতির ভাষা ও লিপি ব্যবহার করতে পারে।
জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে সংখ্যালঘুজাতির শিক্ষা ব্রতের উন্নয়নের খাতে চীন সরকার ২.২ বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনবি অর্থবরাদ্দ করেছে। ভবিষ্যত পশ্চিম চীনের সংখ্যালঘুজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে সংখ্যালঘুজাতির প্রাথমিক স্কুল নির্মান করা হবে এবং ধাপে ধাপে প্রত্যেক স্কুলের জন্য কম্পিউটার, টেলিভিশন ইত্যাদি আধুনিক শিক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।
চীন সরকার সংখ্যালঘুজাতির শিক্ষক প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। শিক্ষকদের যেমন স্বজাতির ভাষা তেমনি হান ভাষাও জানতে হয়। তাদের শিক্ষার কর্তব্য সম্পন্ন করার সংগে সংগে ছাত্রদের নিজেদের জাতির সংস্কৃতি জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন।
জনাব চৌ লা কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘুজাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত বিষয়ক ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক। তিনি নিজের কাজ প্রসংগে বলেছেন, আমার কর্তব্য ছাত্রদের তিব্বতের ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি এবং হান ভাষা ও তিব্বতী ভাষার অনুবাদের তত্ত্ব ও অনুশীলন শেখানো। আমার ছাত্ররা প্রধানতঃ তিব্বত,ছিংহাই, কান্সু, সিছুয়াং প্রভৃতি প্রদেশ ও স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল থেকে এসেছে। ভবিষ্যতে তারা সংখ্যালঘুজাতির সংস্কৃতি সম্প্রচারের কাজে নিয়োজিত থাকবে।
ইতিহাস, সমাজ প্রভৃতির কারণে চীনে হান জাতির তুলনায় বেশির ভাগ সংখ্যালঘুজাতির সাংস্কৃতিক মান অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেখা যায়। সুতরাং সংখ্যালঘুজাতির অধিক থেকে অধিকতর ছাত্ররা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে, সেজন্য চীন সরকার কতগুলো ধারাবাহিক সুবিধাজনক নীতি প্রণয়ন করেছে। প্রফেসার তেন্ সিং বলেছেন, বিংশ শতাব্দির পঞ্চাশের দশক পর চীন সরকার সংখ্যালঘুজাতি ইনস্টিটিউট গঠন করেছে। তার উদ্দেশ্য সংখ্যালঘুজাতির ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেয়া। তা ছাড়া চীনের অন্যান্য সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও সংখ্যালঘুজাতির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়েছে।
চীনের সংখ্যালঘুজাতির শিক্ষা নীতির মূল লক্ষ্য সকল জাতির জন্য উন্নয়নের সমান সুযোগ যোগানো। এটা সংখ্যালঘুজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।
|