সম্প্রতি চীনের ইউননান প্রদেশের সংখ্যালঘুজাতির নাচ গান সম্পকিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটি যেখানে আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে তা ব্যাপক দর্শকদের অভ্যর্থনা পেয়েছে। তাঁদের মধ্যে বহু লোক অনুষ্ঠানটি বহুবার দেখেছেন।
এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এমন একটি অনুষ্ঠান,যার মাধ্যমে ইউননান প্রদেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘুজাতির নাচ গান পরিবেশন করা হয়েছে। এই প্রদেশের দশ-বারোটি সংখ্যালঘুজাতির নিত্যকার জীবনযাত্রা ভিত্তিক নাচ গানের অনুষ্ঠানে সম্পূর্নভাবে তাঁদের জীবন ও জীবিকার খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে, যা ব্যাপক দর্শকদের আকৃষ্ট করেছে।
রঙ্গন মেঘের গ্রাম বলে পরিচিত ইউননান প্রদেশ একটি সংখ্যালঘুজাতি অধ্যুষিত এলাকা। ওখানে সবুজ পাহাড় আর স্বচ্ছ নদ-নদী আছে। নদীর ধার আর পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী প্রাচীন তাই জাতি, পাই জাতি আর ই জাতির যার যার অসাধারণ রীতিনীতি আছে।
নাচ গানে পারদর্শী এই সব সংখ্যালঘুজাতির প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা তাদের নাচ গানে রুপ পেয়েছে। এতে মানুষ ও প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখা দিয়েছে।
মঞ্চে নানা সংখ্যালঘু জাতির পোষাক পরা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাদের অসাধারণ পদ্ধতিতে প্রকৃতি, মানবজাতি আর জীবনযাপনের প্রতি তাদের অনুভূতি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাদের মধুর কণ্ঠ, সুন্দর নাচ আর আধুনিক মঞ্চের শিল্পকলা দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হয়েছেন। পরিবেশন শেষে এই প্রসংগে চাং চিয়েন কান নামে একজন দর্শক বলেছেন, দর্শকদের দৃষ্টিতে এই নাচ গানের বেশি আকর্ষণীয় শক্তি আছে। এই অনুষ্ঠানের নাচ গান, সংগীত আর মঞ্চের আলো থেকে বোঝা যায়। বহু দক্ষ ও কৃতী অভিনেতা-অভিনেত্রী এই অনুষ্ঠান পরিবেশনের কাজে যোগ দিয়েছেন। শিল্পী ইয়াং লি পিনের পরিবেশনের নৈপূণ্য একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
শিল্পী ইয়াং লি পিন ময়ুর নাচে পরিদর্শী। তিনি নাচের মাধ্যমে সাফল্যের সংগে ময়ুরের ভাবভংগী অনুকরণ করেছেন। তাই তাঁকে রূপসী ময়ুরী বলে অ্যাখ্যায়িত করা হয়েছে। ইয়াং লি পিন এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শিল্প নির্দেশক। তিনি ইউননান প্রদেশের পাই জাতির নাগরিক। এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তিনি গত কয়েক বছরে নিজের জন্মস্থলে গিয়ে সংখ্যালঘুজাতির নাচ গানের তথ্য, নৈপুণ্য ইত্যাদি নানা রকমের প্রস্তুতিমূলক কাজ করেছেন।
যখন তাঁর বয়স ১০, তখন তার নৃত্যশিল্পীর জীবন শুর হয়। তিনি একজন শ্রেষ্ঠ নৃত্যশিল্পী। গত তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি "দুই গাছ" চাঁদের আলো ইত্যাদি নামে বহু সুন্দর নাচ রচনা আর পরিবেশন করেছেন। এতে দর্শকরা নৃত্যের ভাষা ও তার সৌন্দর্য অনুভব করেছেন।
ইয়াং লি পিনের এবারকার নাচের অনুষ্ঠানে ভূমি, জন্মস্থল প্রভৃতি বিষয়কবস্তু অন্তর্ভূক্ত। এক শোরও বেশি অভিনেতা- অভিনেত্রীর মধ্যে মতকরা ৭০ জনেরও বেশি প্রথম বারের মতো অভিনয়ে যোগ দিয়েছেন। গ্রামীন পরিবেশে পরিপূর্ণ এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ গান ও আধুনিক মঞ্চ-কলা তুলে ধরা হয়েছে। ইয়াং লি পিন বলেছেন, তিনি শিল্পকলার পদ্ধতিতে তাঁর জন্মস্থলের জনসাধারণের প্রতিদিনকার বাস্তব জীবনযাত্রা দর্শকদের জানিয়ে দিতে চেয়েছেন।
শিল্পকলার দিক থেকে নাচ গান জীবনের অনুভূতির পরিচায়ক আমি নাচ গানের আসল বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি পছন্দ করি। "ইউননান প্রদেশের নাচ গান" নামক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি এই প্রদেশের সংখ্যালঘুজাতির জনসাধারণের জীবন ও প্রকৃতিভিত্তিক রচনা। আমরা নৃত্যের মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্য দেখিয়েছি।
সংখ্যালঘুজাতির নাচ গান দেখালে তাদের বাস্তব জীবনযাত্রীর রস অবশ্যই পুরোপুরিভাবে প্রতিফলিত করতে হবে। এর ভিত্তিতে পরিবেশনাও আরো সুন্দর হওয়া প্রয়োজন। সি তালি নামে একজন নৃত্যশিল্পী আমাদের অনুষ্ঠান চারবার দেখেছেন। দেখার পর তিনি খুব আনন্দিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, নৃত্য শিল্পীদের কাছে নৃত্য অনুষ্ঠান যেমন সংখ্যালঘু জাতি তেমনি এই যুগের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে।
আমার মনে হয় এই অনুষ্ঠান প্রকৃতি ও সংখ্যালঘুজাতির শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য সম্প্রসারিত করেছে। দীর্ঘকাল ধরে ইয়াং লি পিন তাঁর শিল্পকলা চর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে সাফল্যের সংগে এই শ্রেষ্ঠ নৃত্যকর্ম রচনা করেছেন। তাঁর চমত্কার পরিবেশনার মাধ্যমে মঞ্চে একটি সংখ্যালঘুজাতির জীবন্ত শিল্পকলা যাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা দর্শকদের জন্য তার রসাস্বাদনের একটা সুযোগ বয়ে এনেছে। অনুষ্ঠানে যেমন সরলতা তেমনি রচনার নতুন প্রণালীও আছে।
জানা গেছে, ইউননান প্রদেশের সংখ্যালঘুজাতির নাচ গান বিষয়ক এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অদূর ভবিষ্যত বিদেশেও পরিবেশিত হবে। সেজন্য তাকে শাংরিলার অনুসন্ধান নামে কবিতার রসে ভরপুর একটি নাম দেয়া হয়েছে।
ছবিগুলো দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুনঃ ১ ২
|