v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-24 13:00:32    
শিশু অটিজম

cri
    শিশু-অটিজম শব্দটি হয়ত আপনারা শুনেছেন, হয়ত কখনো শুনোননি । তবে আমি জানিয়ে দিচ্ছি যে, এটি একটি ব্যাধির নাম, একে মনোবৈকল্যও বলা হয় । কারো সংগে মিশতে চায়না ও অদ্ভুত স্বভাবের বাচ্চাদের উদাসীনতা আর অটিজমের মধ্যে পার্থক্য আছে । কেউ কেউ বলেন, অটিজমভূগী বাচ্চারা আকাশের তারার মতো নিঃসংগ ও নিস্তেজভাবে মিটমিট করে । এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চীনদেশে প্রায় দশ লক্ষ অটিজভূগী শিশু আছে । অটিজম শিশু যদি বিশেষ-শিক্ষা লাভের সুযোগ না পায় তাহলে তারা চিরকালই মনোবৈল্য ভোগ করবে । আর যদি তারা যুক্তিযুক্ত শিক্ষা আর প্রশিক্ষন পায় তাহলে অধিকাংশ শিশু রোগীর অবস্থার ভিন্ন ভিন্ন মাদ্রার উন্নতি হতে পারে । এবং কিছু শিশু পুরোপুরি আরোগ্য লাভ করতে পারবে বা মোটামুটিভাবে অবাধে জীবনযাপন করতে, পড়াশোনা ও কাজ করতে পারবে ।

    এক এক শিশুর জন্ম এক এক পরিবারের জন্যে বয়ে আনে অসীম আনন্দ আর আশা । মাডাম থিয়েন কুইপিংও ব্যতিক্রম নন । তার এক ছেলে আছে । ছেলের দুটো চোখ বড় বড়, দেখতে সুন্দর । তাকে যেখানে নিয়ে যায় না কেন, সেখানকার সবার দৃষ্টি তার উপর পড়ে । এমন একটি আদুরে ও সুন্দর ছেলে আছে বলে থিয়েনকুইপিং অন্য বাবামার মতো গৌরবান্বিত । কিন্তু তিনি ভাবতেও পারেননি যে, তিন বছর বয়সে তার ছেলে অটিজম রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে চিন্হিত হবে । ছেলের রোগ তাকে বিরাট দুঃখ-দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে এবং তার প্রায় সব আশা আর অস্তিত্বের ভরসা চুর্নবিচুর্ণ করে দিয়েছে । থিয়েনকুইপিং আর সব অটিজম-শিশুর অভিভাবকরা পরিবার আর সমাজের চাপের সম্মুখীন হয়েছেন । তাদের বাচ্চা ভাষা নিজের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে না, অন্য লোকের সংগে আদান-প্রদান করতে জানে না, আত্মনিযন্ত্রন করতে পারে না এবং তাদের কোনো বিপদবোধও নেই । এই সব অটিজম-শিশুর পথ কোথায়? এদের জন্যে অভিভাবকদের কি করতে হবে ? বিষয়টির উপর সবাই অত্যন্ত মনোযোগ দিচ্ছে ।

    অটিজম রোগটির কারণটা কি ? সহজাত না অন্যভাবে প্রাপ্ত? সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বলেছেন: পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে , এক ধরনের অজানা মস্টিস্কের ক্ষতিসাধন অটিজমের উত্স । এর বংশগত কারণের অনুপাত খুব কম ।

    অন্য রোগের তুলনায় পরিবারের উপর অটিজমের প্রভাব বেশি আর দীর্ঘস্থায়ী । অভিভাবকরা অটিজম-শিশুর জন্যে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন । বাচ্চাদের জন্যে তারা প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং এ জন্যে তাদের নিজেদের জীবনযাপনের পরিবর্তনও হয়েছে ।

    বাচ্চাদের অসুখ মানসিক, শারিরিক আর অর্থনৈতিক দিক থেকে তাদের পরিবারের উপর বিরাট চাপ সুষ্টি করেছে । তাহলে এই রোগের বয়ে আনা ক্ষতিকে কিভাবে সর্বনিম্নস্তরে আনা যায়? এ সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বলেছেন: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল এই যে, অভিভাবকদের উচিত নিজেদের মানাসিকতা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত করা বাচ্চাদের সামনে নিজের চিন্তা, নিজের দুঃখ বা ভয় প্রকাশ না করা । এমনি করলেই কেবল নিজের বাচ্চাকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষন দিতে পারেন। সিংসিং ইয়ু অর্থাত্ তারকা-বৃষ্টি নামে এক শিক্ষা-গবেষনালয় তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণরা করে বলেছে যে, অটিজম-রোগটির গোড়ার দিকে এতে হস্তক্ষেপ করা অত্যন্ত কার্যকর। অভিভাবকরা কয়েকটি কৌশল আয়ত্ত করতে পারলে এবং ভাল মানসিকতা নিয়ে নিজের বাচ্চার সম্মুখীন হতে পারলে বলা যায়, শিশু রোগীরা অটিজম থেকে যে মুক্তি পাবে তা অসম্ভব নয় ।

     এখন চীন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ধরনের সংস্থা আছে । সংস্থাগুলোতে অটিজম-শিশুর জন্যে পূর্বকালীন হস্তক্ষেপ, শিক্ষা আর পারিবারিক প্রশিক্ষন দেয়া হয় । প্রশিক্ষন নেয়া একমাত্র কার্যকর পদক্ষেপ, যখন বাচ্চাকে অটিজম বলে চিন্হিত করা হয় তখন তাকে বিশেষ সংস্থায় প্রশিক্ষন নিতে পাঠাতে হবে । যতশিঘ্র প্রশিক্ষন শুরু হয় ততই ভাল হয় ।

    অটিজম কি এড়ানো যায়? এক অজানা মস্তিস্কের ক্ষতিসাধনের কারনে অটিজম হয় বলে এখন কোনো বিশেষ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেই । কিন্তু যারা মা হবেন তাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, গর্ভধারণকালে তাদের সবসময় নিজেদের অত্যন্ত যত্ন নিতে হবে । তরুন মায়েদেরকে অত্যন্ত মনোযোগ দিতে হবে যে, অল্প বয়সে অর্থাত্ তিন-চার বছর বয়সে অন্যলোকের সংগে নিজের বাচ্চার আদান-প্রদানের দৃষ্টিকোন আর তাদের আচরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে হবে ।

বিশ্বাস করা যায়, সামনের পথ দিনদিন প্রশস্ত হবে । সমাজ দিনদিন উন্নত হবে । বিশেষ রোগীদের উপর সমাজের যত্ন আর নিশ্চয়তাবিধান দিনদিন ভাল হবে।

    সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বলেছেন, অধ্যবসায়ের সংগে প্রশিক্ষন নেয়ার পর অটিজম-শিশুর অবস্থা ভিন্নমাত্রায় ভালো হতে পারবে ।

    ছেলেটির নাম ছেনথাও, অটিজমরোগে আক্রান্ত হয়েছিল । সে বিশেষ প্রশিক্ষন নেয়ার পর আরোগ্য লাভ করেছে এবং প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে । সে এখন প্রথম শ্রেনির ছাত্র, তার লেখাপড়া ভাল । সে আবৃতি করতে পারে ক্ষুদ্র নদী ক্ষুদ্র নদী তুমি কোথায় যাছ? আমি বড় নদীর সংগে মিশতে যাচ্ছি । বড় নদী বড় নদী, তোমরা কোথায় যাছ? আমরা সবাই সমুদ্রে যাচ্ছি ।

    এই সব বাচ্চাদের কাছে আমরা আশা উপলব্ধি করেছি । তাদের পথ দেখেছি ।