v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-22 14:20:46    
চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পী চিয়ান উন

cri

 

    বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পী চিয়ান উন চীনের চলচ্চিত্র মহলের এক কালো ঘোড়া , তিনি ছায়াছবি ' ফু রোং মহকুমা ' , ' লাল সরগম ' আর ' আপন রাশির বছর ' প্রভৃতি ছবিতে অভিনয়ের চমত্কার নৈপুণ্য দেখিয়ে যে প্রাণবন্ত চরিত্র সৃষ্টি করেছেন , তা' দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে , তার পরিচালিত ' রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনগুলো' নামক ছায়াছবি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে । চীনের ছায়াছবি ও টেলিভিশন জগতের সুনামধন্য অভিনেতা চিয়ান উনের অভিনয় নৈপুন্য সবার মুখে মুখে । তিনি ছায়াছবিতে মোট কয়েক ডজন পেশা ও চরিত্রের ভুমিকায় অভিনয় করেছেন । ১৯৮৬ সালে চিয়ান উন ছায়াছবি ' ফু রোন মহকুমায়' এক মধ্যবয়সী বুদ্ধিজীবীর ভুমিকায় অভিনয় করেছেন , তার চমত্কার অভিনয়ের জন্য তিনি চীনের চলচ্চিত্র মহলের সর্বোচ্চ পুরস্কার --- শতফুল পুরষ্কারের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন । ১৯৮৮ সালে ' লাল সরগম ' ছবিতে চিয়ান উন উত্তর-পশ্চিম চীনের পল্লী অঞ্চলের এক দৃঢ় চেতা পুরুষের ভুমাকায় অভিনয় করেছেন , এই ছবি দেশে-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । এই ছবির পরিচালক ও আলোকচিত্র শিল্পী ৩৮তমো বার্লিন চলচ্চিত্র উত্সবে সোনালী ভল্লুক পুরষ্কার জয় করেছেন । তা ছাড়া চিয়ান উন ' শেষ রানী ' নামক ছায়াছবিতে চীনের শেষ রাজার ভুমিকায় অভিনয় করেছেন , ' খোজা পুরুষ লি লিয়েন ইন ' নামক ছবিতে তিনি খোজা পুরুষ লি লিয়েন ইনের ভুমিকা , ছায়াছবি ' ছুন থাও ' তে পুরোন যুগের এক পরিবারে স্বামীর ভুমিকায় , ছায়াছবি ' ভালো করে কথা বলো '- তে সমাজের এক বেকার যুবক চাও সিয়াও সুয়াইয়ের ভুমিকায় আর ' নিউইয়র্কের পেইচিং নাগরিক ' নামক ছায়াছবিতে তিনি যুক্ত রাষ্ট্রে বেশ কয়েক বছর অবস্থানকারী এক চীনা নাগরিকের ভুমিকায় অভিনয় করেছেন । নিজের অভিনয় আর দেশবিদেশের পুরষ্কার পাওয়া সম্বন্ধে চিয়ান উন বলেছেন , পুরষ্কার পাওয়া অবশ্য আনন্দের ব্যাপার , তবে আমার ধারনা , ছায়াছবিতে চরিত্র সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য পুরষ্কার পাওয়া নয় , আমি লক্ষ্য করেছি কোনো কোনো ছায়াছবি যদিও পুরষ্কার পেয়েছে , কিন্তু দর্শকরা পছন্দ করেন না , কোনো কোনো ছবি দর্শকরা পছন্দ করেন , তবে ছবি পুরষ্কার পায় নি , এটা সত্যিই এক অদ্ভুত ব্যাপার ।

   

এই বছর চিয়ান উনের বয়স ৪০ বছর , ছোট বেলা থেকেই চিয়ান উন ছায়াছবি দেখতে পছন্দ করেন । সেই সময় চীনের ছায়াছবির সংখ্যা সীমিত ছিল , ছায়াছবি দেখার সুযোগও কম , একবার ছায়াছবি দেখার সুযোগ পেলে দিনরাত তিনি অপেক্ষা করতেন । সেই সময় তার সবচেয়ে প্রিয় ছবি হলো আলবেনিয়ার একটি সাদা-কালো ছবি , ছবিটির নাম হলো ' মৃত্যু হলেও নতজানু হবো না ' । সেই ছবিতে দুজন নারী সৈনিকের শত্রুর সামনে লম্বা চুল উড়ার আর হাতে বাদ্যযন্ত্র বাজানোর দৃশ্য আর ছবিটির সংগীত এখনও তার মনে আছে ।

    ১৯৮০ সালে চিয়ান উন পরীক্ষার মাধ্যমে চীনের কেন্দ্রীয় নাট্য শিল্প ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন । চীনের অনেক নামকরা চলচ্চিত্র অভিনেতা-অভিনেত্রী এই ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা করেছেন । চিয়ান উনের ভর্তি পরীক্ষার ফল তত ভালো ছিল না , ইন্সটিটিউটের অনেক শিক্ষক তাকে গ্রহন করতে রাজি হন নি , কিন্তু চান রেন লি নামে একজন শিক্ষক চিয়ান উনের অভিনয় প্রতিভা লক্ষ্য করেছেন এবং তাকে নিতে জেদ ধরেছিলেন । আজ পর্যন্ত চিয়ান উন এই শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞ রয়েছেন । তিনি বলেছেন , শিক্ষক চানের সাহায্য ও সমর্থন না থাকলে আমার শিল্পী হওয়ার পথ আরো এবড়ো-থেবড়ো হতো । কেন্দ্রী নাট্যশিল্প ইন্সটিটিউটে পড়াশুনা আর পেশাদার শিল্পী হিসেবে অভিনয় করার সময় চিয়ান উনের ছায়াছবি পরিচালনার প্রতিভাও দেখিয়ে দিয়েছেন । তিনি অভিনয়ের সময় চরিত্রের কথাবার্তা পরিবর্তন করতে এবং পরিচালকের কাছে নিজের মতামত প্রকাশ করতে পছন্দ করেন । ১৯৯৩ সালে চিয়ান উন প্রথমবার ' রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনগুলো' নামক ছায়াছবিতে সাফল্যের সংগে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন ।

    ছায়াছবি ' রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনগুলোতে' গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে চীনের কয়েকজন পনের-ষোলো বছর বয়সের ছেলের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয়েছে । ছবিটিতে চীনের দশ বছর স্থায়ী তথাকথিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময়ে তাদের মনের অশান্তি , মেয়েদের প্রতি আকর্ষন , পড়াশুনার বয়স হলেও পড়াশুনা না করে প্রায়ই মারামারি করার অস্বাভাবিক জীবন বর্ণনার মাধ্যমে তখনকার চরম বামপন্থী যুবসম্প্রদায়েরমানসিক বিশৃঙ্খলা উন্মোচনকরা হয়েছে । এই ছবি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে এবং সমাজে তর্কবিতর্কসৃষ্টি করেছে । এই ছবি পরিচালনার জন্য ১৯৯৬ সালে চিয়ান উন চীনের তাইওয়ানের সোনালী ঘোড়া পুরষ্কারেরআওতায় শ্রেষ্ঠপরিচালক পুরষ্কার পেয়েছেন ।

    এই ছায়াছবি পরিচালনার পর চিয়ান উন আবার অভিনেতা হিসেবে ছায়াছবিতে নানা ধরনের চরিত্র সৃষ্টি করার প্রয়াস করেন । তিনি বলেছেন , পরিচালকের তুলনায় অভিনেতার কাজ বেশী কঠিন , কেননা তোমার অভিনয় ভালো না হলে দর্শকরা স্পষ্টভাবে অনুভব করতে পারেন । তিনি বলেছেন তুলনামূলকভাবে বলতে গেলে তিনি অভিনেতার কাজ বেশি পছন্দ করেন । তিনি বলেছেন , একটি ভালো কাহিনী পেয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তা প্রকাশ করা অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ ও মজার ব্যাপার । ভালো অভিনেতা -অভিনেত্রী পেলে আমি পরিচালকের কাজ করতে চাই , ভালো পরিচালক পেলে আমি অভিনেতার কাজ করতে বেশী আগ্রহী ।

    চিয়ান উন চীনের রূপালী পর্দার জগতে একজন বিখ্যাত অভিনেতা , কিন্তু তার মনে ঈর্ষা বা অভিমান কম , এটা তার একটা বড় গুন । তিনি সবার সংগে সহযোগিতা করতে পারেন । ২০০২ সালে চিয়ান উন চীনের যুব-পরিচালক লু ছুয়ানের পরিচালিত ' বন্দুক সন্ধ্যান ' নামক ছবিতে প্রধান অভিনেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন , ছবিটিতে একজন পুলিসের বন্দুক হারিয়ে যাবার পর বন্দুক সন্ধ্যানের প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে , আসলে বন্দুক সন্ধ্যানের প্রক্রিয়া তার মানসিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়াও বটে । ছবিতে চিয়ান উন অভিনয়ের চমত্কার নৈপুন্য দেখিয়ে চরিত্রের সুক্ষ্ম মানসিক পরিবর্তন দেখানোর প্রয়াস করেছেন , ছবি দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে চিয়ান উনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন । তার একজন অনুরাগী তাকে জিজ্ঞেস করেছেন , আপনি একজন নামকরা অভিনেতা , কেন এক যুব-পরিচালকের পরিচালিত প্রথম ছবিতে অভিনয় করেছেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে চিয়ান উন বলেছেন , যুব পরিচালকের সংগে বিখ্যাত অভিনেতার সহযোগিতা না করার কোনো নিয়ম নেই , আমার ধারনা পৃথিবীতে চিরকালের বিখ্যাত পরিচালক নেই , একটি ছবিতে পরিচালক ভালো কাজ করেছেন বলে সবার শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা জয় করেন , কিন্তু ভালো কাজ করতে না পারলে তথাকথিত বিখ্যাত পরিচালকের উপাধি কোনো কাজে আসে না । চিয়ান উনের প্রচুর অনুরাগী আছেন , তারা শুধু তার অভিনয়ই পছন্দ করেন না , তার অকপট স্বভাব, শিল্পের প্রতি ভক্তি আর স্বাধীনতা অন্বেষনের প্রয়াস দর্শকরা পছন্দ করেন । আশা করি চিয়ান উন ভবিষ্যতে দর্শকদের জন্য আরো বেশী মর্মস্পর্শী ও প্রানবন্ত চরিত্র সৃষ্টি করবেন ।