এখন থেকে ১ হাজার ৭ শো বছরেরও বেশি সময় আগে সিয়েনপেই জাতির একটি শাখা পূর্ব চীন থেকে পশ্চিম চীনের হোয়ানহো নদী ও হোয়ানস্যুই নদীর অববাহিকার হোহোয়ান উপত্যকায় স্থানান্তরিত হয়ে একটি শক্তিশালী রাজ্য গড়ে তুলে। তিন শো বছরেরও বেশি সময়ের পর অন্য জাতির হাতে এই রাজ্যের পতন হয়। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত সিয়েনপেই জাতি তাদের পরাজয় স্বীকার করে নি। অন্যান্য জাতির কাছ থেকে আচার-ব্যবহার ও সংস্কৃতি শিখে নিয়ে তারা একটি নতুন জাতি- থু জাতিতে পরিণত হয়েছে।
থুজাতি পশ্চিম চীনের ছিংহাই প্রদেশের অন্যতম সংখ্যালঘুজাতি। এই জাতির লোকসংখ্যা ১ লক্ষ ৮০ হাজার। তারা প্রধানতঃ এই প্রদেশের উত্তর পূর্বাংশের হুজু থু জাতির স্বায়ত্ত শাসিত জেলায় বাস করেন।
থু জাতির লোকেরা মেয়েদের "আকু" ডাকেন। মেয়েদের পোষাক রংবেরঙের, জামার হাতা লাল, হলুদ, নীল, সবুজ, সাদা প্রভৃতি রঙ দিয়ে বানানো হয়। এটা দেখতে মনে হয় আকাশ থেকে কাটা রামধনুর একটি অংশ। সুতরাং লোকেরা হুজু জেলাকে রামধনুর উদয়ের স্থান বলে ডাকেন।
থু জাতির লোকেরা অতিথি পরায়ন। তারা অতিথিদের সুখের প্রতীক বলে মুন করেন। সংবাদদাতা দরজার কাছে পৌঁছলে মেয়েরা থু জাতির ভাষায় দূর থেকে আসা অতিথিদের স্বাগত জানালেন। "থু জাতির বাসায় আগমনের জন্য মাননীয় অতিথিদের স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা সবচেয়ে সুস্বাদু ব্যঞ্জন ও আপনাদের খেতে দেবো এবং আপনাদের জন্য সবচেয়ে সুন্দর গান গাইবো। আশা করি আমাদের আতিথেয়তা আপনাদের মনে একটি অবিস্মরনীয় স্মৃতি রেখে দেবে।
থু জাতির লোকেরা " তিন" অংককে শুভ সংখ্যা এবং অতিথিদের যবের মদ খেতে দেয়া আতিথেয়তার উত্তম পানীয় বলে মনে করেন। তারা সুন্দর গানের সুরের মাধ্যমে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
থু জাতির লোকেরা ভাল নাচ গান করতে পারেন। গরমকাল কিংবা শীতকাল যাই হোক না কেন, উত্সব বা উতযাপনী তত্পরতা উপলক্ষে " আনচাও" ও "রেনচিছুও" নামে নাচের অভিনয় অপরিহার্য।
হুজু থু জাতির স্বায়ত্ত শাসিত জেলা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। জোরালো ধর্মীয় পরিবেশ ও আচার-ব্যবহার ওখানকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক শর্ত যুগিয়েছে। এই প্রসংগে জেলার উপ-প্রশাসক ওয়াং তে হাই বলেছেন, সমুদ্র-পৃষ্ঠ থেকে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি অনেক উঁচু বলে এবং বিশেষ আবহাওয়ার কারণে এখানকার প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ছিংহাই প্রদেশের সবচেয়ে ভাল অবস্থায় সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চলে প্রানী ও উদ্ভিদের প্রজাতি বৈচিত্র্যময়।
থু জাতির লোকেরা তিব্বতী বৌদ্ধধর্ম বিশ্বাস করেন। প্রচুর মন্দির এই জেলায় ধর্মীয় পর্যটনের সমৃদ্ধ সম্পদে পরিণত হয়েছে। ১ হাজার ৩ শো বছর পুরানো ইউ নিন মন্দির, উ ফুং মন্দির, থিয়ানমেন মন্দির আর পাইমা মন্দির যার যার অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী ও সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশের দরুণ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
তা ছাড়া থু জাতির আচার ব্যবহার, পোষাক, সূচীকর্ম আর নাচ গানও জেলার পর্যটনশিল্প উন্নয়নের একটি প্রাধান্য। তুঙ শি মিন নামে স্থানীয় একজন কৃষক বলেছেন, পার্শ্বজাত শিল্প আর পর্যটন শিল্পে নিয়োজিত হওয়ার ফলে আমাদের আয় বিপুলমাত্রায় বেড়ে গেছে। এখন আমাদের খাওয়া, পরা ও থাকার অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।
সুন্দর গানের সুর শোনা আর মিষ্টি যবের মদ খাওয়ার সংগে সংগে আমরা থু জাতির লোকদের আন্তরিক আতিথেয়তায় সুগ্ধ হয়েছি। এটা আমাদের সারা জীবনে একটি অবিস্মরনীয় স্মৃতি হয়ে থাকবে।
ছবিগুলিঃ
থু জাতির জামা-পোষাক
থু জাতির রীতিনীতি
থু জাতির প্রাকৃতিক দৃশ্য
থৃ জাতির মেয়ে
|