v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-25 13:26:43    
হোপেই প্রদেশের "চাঁদোয়া গ্রাম"

cri
    বসন্তকালের মৃদুমন্দ বাতাস বিশাল ভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই বায়ুর স্পর্শে লাল পিচ ফুল ফুটেছে, সাদা ম্যাগ্নোলিয়া ফুলও দোল খায় বাতাসে। এই বাতাস কৃষক ওয়াং শি ছুয়ানের শাকসবজীর চাঁদোয়ার ভেতরেও প্রবেশ করেছে। চাঁদোয়ায় শাকসবজি পালন করা ওয়াং শি ছুয়ানের সব চেয়ে পছন্দের কাজ। এই কয়েকদিন, তিনি চাঁদোয়ায় নতুন শাকসবজির চাষে ব্যস্ত রয়েছেন।

    "আমি এখন টমেটোর বপনে ব্যস্ত,কাজ কষ্টকর তো বটেই, কিন্তু এই কষ্টের ফলপ্রসূতা আছে, মূল্য আছে। আমাদের গ্রামের সবাই মনে করে যে, শাকসবজি চাষের পর আমাদের আয় আগের চেয়ে অনেকখানি বেড়েছে।"ওয়াং শি ছুয়ানের বাড়ি উত্তর চীনের হোপেই প্রদেশের থাংশান শহরের গোতাথুও গ্রামে অবস্থিত । এই গ্রামের অধিকাংশ অধিবাসীর নামের পদবী ওয়াং বলে গ্রামটি "ওয়াং পদবীর গ্রাম"নামেই পরিচিত । এখন এই গ্রাম তার অধিবাসীদের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্যই বিখ্যাত । গত বছর এই গ্রামের মাথাপিছু বার্ষিক গড়পড়তা আয় সাত হাজার রেনমিনপি হয়েছে।

    চাঁদোয়ায় শাকসবজি চাষ ছাড়া গোতাথুও গ্রামবাসীদের ধনী হওয়ার অন্য কোনো রহস্য নেই। এই গ্রামের অধিকাংশ লোক শাকসবজি চাষ করেন, তাই লোকেরা এই গ্রামকে "চাঁদোয়া গ্রাম"বলেই ডাকেন। সাংবাদদাতা সেখানে গিয়ে সাক্ষাত্কার নেয়ার সময়ে দেখেছেন, ক্ষেতে আর বাসার পেছনে সর্বত্রই এই প্লাস্টিক চাঁদোয়া। চাঁদোয়ার ভেতরে সবুজ শাকসবজি দেখা যায়। ওয়ং শি ছুয়ান সংবাদদাতাকে বলেছেন, বিশ বছর আগে, কৃষকরা এই ক্ষেতে শাকসব্জী চাষ করতেন না, গম আর ভূট্টা চাষ করতেন। ফলন সীমিত ছিল বলে গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি সম্ভব ছিল না। গ্রামের দু'জন ক্যাডার ওয়াং ছাং কুই ও ওয়ান ছিং সুয়াং'ই তাদের ধনী হওয়ার উপায় অন্বেষনে সাহায্য করলেন।

    গ্রামের মোড়ল ওয়াং ছাং কুই একজন ৫০ বছর বয়সের পুরুষ, তাঁর মুখ দেখেই বুঝা যায় লোকটি খুব সরল এবং সত্। তিনি বলেছেন, গ্রামবাসীদের আয় বাড়ানোর জন্য গ্রামীন ক্যাডাররা অনেক উপায় খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গোতাথুও গ্রাম সমতলভূমিতে অবস্থিত, পাঁচ শো একরের আবাদী জমি ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ নেই, শিল্পপরিচালনা যেমন কঠিন, ব্যবসা-বাণিজ্য চালানোও তেমনি মুশকিল। তাঁরা অনেক ভেবেচিন্তে মনে করলেন যে, এই গ্রামের ক্ষেত সমতল, মাটিও বেশ উর্বর এবং ক্ষেতের নীচে পানিও প্রচুর, শাকসবজি চাষ বোধহয় একটি ভাল সিদ্ধান্ত। এই ধারনার ভিত্তিতে ওয়াং ছাং কুই এবং আরেক জন ক্যাডার ওয়াং ছিং শুয়াং পরীক্ষামূলকভাবে চাঁদোয়া নির্মান করে তাতে শাকসবজির চাষ শুরু করলেন। কয়েক বছর পর, চাঁদোয়ার শাকসব্জীর ফলপ্রসূতা স্থিরভাবে বেড়েছে। এই সাফল্য দেখে, তাঁরা তাদের শাকসবজি চাষের অভিজ্ঞতা সবাইকে জানালেন:

    "চাঁদোয়ায় শাকসবজি চাষের ফলপ্রসূতা বেশি। হিসাব করে আর দশ বারো বছরের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, চাঁদোয়ায় এক একয় জমিতে শাকসব্জী চাষ-জনিত আয় ৪৫ একর জমিতে ভূট্টা ও গম চাষজনিত আয়ের সমান। অনেক বছরের অনুশীলনের পর গ্রামবাসীরা সত্যি সত্যিই তার মিষ্টি স্বাদ পেয়েছেন, উপকৃত হয়েছেন।"

    শাকসব্জী চাষের উপকারিতা দেখে, কিছু গ্রামবাসীও চাঁদোয়ায় শাকসবজির চাষ শুরু করলেন। ক্রমাগত, এই গ্রামের চাঁদোয়ার সংখ্যা হু হু করে বাড়লো। ২০০০ সাল পর্যন্ত, সারা গ্রামের চাঁদোয়ার সংখ্যা ১৪০০টি হলো,তাতে এই গ্রাম বিখ্যাত "চাঁদোয়া গ্রামে" পরিণত হলো। সারা বছর চাঁদোয়ার শাকসবজির চাষ ও বিক্রি নিয়ে চিন্তাশীল ওয়াং ছাং কুই দেখলেন যে, অনেক রকমের শাকসবজি চাষের চেয়ে শুধু এক রকমের শাকসবজি চাষ করাই ভালো।কারন এক রকমের শাকসবজি চাষ করলে তার পরিমান দ্রুত বেড়ে যেতে পারে, বাজারে এ প্রবেশ আরো সহজ হয়। তার পরামর্শ অনুসারে গ্রামের সব চাঁদোযায় টমেটোর চাষ হয়। দুই হাজার চার সালে, সারা গ্রামের টমেটোর উত্পাদনের পরিমান ১৫ হাজার টন হয়। তাদের টমেটো আকারে বড়, রংও ভাল। এতে মানবদেহের প্রয়োজনীয় প্রচুর ক্যালসিয়াম, লোহা, দস্তা ইত্যাদি আছে, যা স্বাস্থ্যের জন্যে খুব ভালো। বিভিন্ন জায়গার শাকসব্জীর ব্যবসায়ীরা সবাই তাদের টমেটোও কিনতে আসেন। এক রকমের শাকসবজি চাষ করার ফলেই গুতাথুও গ্রামের টোমেটো বিখ্যাত হয়েছে।

    টমেটোর দেদার বিক্রি প্রসংগে ওয়াং ছিং শুয়াং সন্তোষের সংগে বলেছেন:

    "আমাদের টমেটো পেইচিং, থিয়েন চিন আর উত্তর-পূর্ব চীনের ব্যবসায়ী আর পণ্যভোগীদের স্বীকৃতি পেয়েছে। সর্বাধিক বিক্রির মওসুমে রোজ ৫০ থেকে ৬০টি গাড়ী এখানে এসে টমেটো পরিবহন করে নিয়ে যায়, বিক্রির অবস্থা খুব ভালো।" ওয়াং ছিং শুয়াং বলেছেন, তাঁদের সব চেয়ে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, শাবসবজি চাষের ভাল ফলপ্রসূতা দেখে বাইরে মজুরি খাটতে যাওয়া লোকেরাও গ্রামে ফিরে এসেছেন। গ্রামের পরিস্থিতি আবার সতেজ হয়ে উঠেছে।

    গত তিন বছরে, গ্রামবাসীদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ২০ শতাংশ হারে বেড়ে চলেছে। গ্রামবাসী ওয়াং শু চেন সংবাদদাতাকে বলেছেন, তিনি দশ আরো বছর আগে চাঁদোয়ায় শাকসবজির চাষ শুরু করেন। অবস্থা ক্রমাগত আরো ভালো হয়ে চলেছে। আগে বাইরে মজুরি খাটতে যাওয়া স্বামীও এভন তাঁর সংগে চাঁদোয়ায় শাকসবজির চাষ করতে কয়েক বছর আগে বাড়ী ফিরে এসেছেন। তিনি বলেছেন, তার চাঁদোয়ায় শাকসবজি চাষের সিদ্ধান্ত সত্যিই ঠিকই হয়েছে, তার আয় অনেকখানি বেড়েছে। নিজের তিন জন সন্তানের স্কুলে পড়াশোনার খরচ চুকানো ছাড়াও, তারা নতুন বাড়ী ঘরও গড়ে তুলেছেন।ওয়াং শু চেন বলেছেন:

    "তার পরিবার ১৯৯২ সাল থেকে চাঁদোয়ায় শাকসবজির চাষ শুরু করে। এই দশ বারো বছরে চাষের ক্ষেতের আয়তন বেড়ে চলেছে।এ পর্যন্ত ঠান্ডা চাঁদোয়ার আয়তন এক দশমিক দুই পাঁচ একর হয়েছে,গরম চাঁদোয়ার আয়তন এক চতুর্থাংশ একর হয়েছে। অন্য কাজের চেয়ে এর ফলপ্রসূতা অনেক বেশী । ঠান্ডা চাঁদোয়ার এক মু' অর্থাত এক ষষ্ঠাংশ একর ক্ষেতের শাকসব্জী বেচে দশ হাজার রেমিনপি'রও বেশী অর্থ পাওয়া যায়।

    ওয়াং শু চেনের বাড়িতে সংবাদদাতা নিকটবর্তী গ্রাম থেকে আসা কয়েকজন নারীকেও দেখেছেন। তারা আনন্দের সংগে গল্প করতে করতে চাঁদোয়ায় শাকসবজির চাষ করছিলেন। তারা হচ্ছেন ওয়াং শু চেন পরিবারের ভাড়াটে শ্রমিক। লিউ চিউ ওয়েন নামে এক জন প্রৌঢ়া শ্রমিক বললেন, এখানে কাজ করে বেশ আয় করা যায়, তাছাড়া সহ-মজুররাও রয়েছেন, তাদের গ্রামের সবাই এখানে কাজ করতে আসতে ইচ্ছুক।লিউ চিউ ওয়েন বললেন:

    "বাড়িতে বেশী কাজ নেই, এখানে কাজ জুটলে, এখানেই কাজ করতে আসি, রোজ দশ বারো ইউয়ান রেনমিনপি পাই। কাজটা তেমন ক্লান্তিকরও নয়। দুপুরবেলায় বাড়ি ফিরে গবাদী পশুকে খাওয়াতেও পারি, বাড়িতে শুধু শুধু বসে থাকার চেয়ে অবসরকালে কিছু কাজ করে কিছু উপার্জন করা অনেক ভাল।" ওয়াং শু চেনের পরিবারের মতো, কাজ বেড়ে যাওয়ার সময়ে শ্রমশক্তির অভাব দেখা দেয়, এমন পরিবার গুতাথুও গ্রামে আরো অনেক রয়েছে। তাই অন্যান্য গ্রাম ও জেলার মানুষরা এখানে মজুরি খাটতে আসেন।এখানে মজুরি খাটার অর্থই শাকসব্জীর চাষ করা। এ কাজটা কৃষকরা সবাই পারেন। বাড়ি থেকে বেশি দূর নয়, নিজের বাড়ির কাজের ক্ষতিও হয় না, এক মাসে কয়েক'শ রেনমিনপি আয়ও করা যায়। এ পর্যন্ত গোতাথুও গ্রামে মজুরি খাটতে আসা বাইরের লোকসংখ্যা আট'শো ছাড়িয়ে গিয়েছে। গোতাথুও গ্রামের চাঁদোয়ার শাকসবজির চাষ শুধু এই গ্রামের অধিবাসীদের স্বচ্ছল করেই তোলে নি, অন্যান্য গ্রামের অধিবাসীদের আয়ও বাড়িয়েছে। গ্রামের মোড়ল ওয়াং ছাং কুই বলেছেন, তাদের চাঁদোয়ার শাকসব্জীর চাষ আরো বেড়ে যাবে।তাদের লক্ষ্য, ২০০৫ সালে গ্রামবাসীদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১০ হাজার ইউয়ান রেনমিনপিতে দাঁড়াবে। এখন তারা অভিজ্ঞতা শিখতে আসা অন্যান্য গ্রামের অধিবাসীদেরকে নিজের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন।তারা আশা করেন, চাঁদোয়ায় শাকসব্জী চাষ অন্যান্য গ্রামের অধিবাসীদের ধনী হওয়ার স্বপ্নও বাস্তবায়িত করবে।