গত শতাব্দীর ৮০'র দশকের মাঝামাঝি সময়ে চীনে নাগরিকদের জন্য আই ডি কার্ড ব্যবস্থা প্রচলিত হয়েছে।অনেক বছর ধরে আই ডি কার্ড কাছের বন্ধুর মত মানুষের ছায়া-সংগী হয়ে থাকে। বর্তমান চীনে নতুন আই ডি কার্ড বদলে নতুন হচ্ছে। এবারের কার্ড হলো ডিজিটাল আই ডি কার্ড, তার উন্নত মান ও জাল-বিরোধক গুণ আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।
কিছু দিন আগে পেইচিংয়ে শি রান নামে একজন ৭ বছর বয়সের ছেলে গণ নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালকের হাত থেকে পেইচিং শহরের প্রথম ডিজিটাল আই ডি কার্ড পেয়েছে। সে খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছে:
"আমার নতুন আই ডি কার্ড থাকলে, হোটেল বা বিমানের আনটিরা আমার আই ডি কার্ড নিয়ে একটু চেক করে আমার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো পাবেন।" আজকের চীনে আই ডি কার্ড ব্যাপক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেমন ভোটদাতা নথিভূক্তকরণ, বিয়ে নথিভূক্তকরণ, বা ড্রাইভিং লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ড ও সামাজিক বীমা ইত্যাদি ব্যবস্থা করার সময় আই ডি কার্ডের প্রয়োজন হয়।
গত বছর চীনে প্রনীত"নাগরিকদের আই ডি কার্ড সংশ্লিষ্ট আইন" অনুযায়ী, ১৬ বছর ও তদোর্ধ বয়সের চীনা নাগরিকদের আই ডি কার্ড থাকতে হবে, আর ১৬ বছরের কম বয়সের চীনা নাগরিকরা স্বেচ্ছায় আই ডি কার্ড পেতে পারেন। বর্তমানে চীনে ৯০ কোটি'রও বেশী মানুষ আই ডি কার্ডের অধিকারী।
চীনের গণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের আই ডি কার্ড ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মকর্তা গুও শিং বলেছেন, এবার আই ডি কার্ড পরিবর্তনের প্রধান কারন হচ্ছে পুরোনো আই ডি কার্ড প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছে, তার প্রযুক্তিগত মান খুব পশ্চাত্পদ এবং জাল-প্রতিরোধক গুণও ভালো নয়। নতুন আই ডি কার্ডে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যাতে কার্ড আরো নিরাপদ আর সুবিধাজনক হয়েছে। তিনি বলেছেন:
"পুরোনো আই ডি কার্ডের তুলনায়, নতুন কার্ডের প্রধান পার্থক্য এই যে, কার্ডে এক নতুন ধরনের কম্পিউটার চিপ ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষভাবে তৈরী রীডিং মেশিন যোগে, কার্ডের তথ্যগুলো অবিলম্বে দেখা যায়। এই ভাবে, ব্যাংকে টাকা রাখা, বিমানে বোর্ডিং পাস দেখানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে আই ডি কার্ড প্রয়োজনীয়, এ প্রক্রিয়া খুব সুবিধাজনক এবং এর কার্যকরিতা উন্নত। আই ডি কার্ড জাল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি কমেছে।"
তিনি আরো বলেছেন, এই নতুন চিপ হলো আই সি কার্ড। নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যগুলো ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্ডে ইনপুপ করা হয়।বিশেষ কার্ড রীডিং মেশিন ব্যবহার করে, আই সি কার্ডের তথ্যগুলো দেখা যায়। যে তথ্য মেশিনে দেখা যায়, কার্ডে লেখা তথ্যের সংগে তার তুলনা করে কার্ডটির বিশুদ্ধতা যাচাই করা যায়।
চীনের স্মার্ট কার্ড শিল্প সমিতির ফান লি হুয়া বলেছেন, ব্যক্তিগত তথ্য আই সি কার্ডে রাখার প্রযুক্তি চীনাদের নিজেদেরই গবেষণালব্ধ।
"চিপে আমাদের নিজেদের তৈরি এক রকমের হিসাব পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে, তার গবেষণায় কয়েক বিলিয়ন ইউয়ান রেনমিনপি খরচ হয়েছে। এই প্রযুক্তি থাকলে আর জাল করা বা পরিবর্তন করা মুশকিল।" নতুন প্রযুক্তি ছাড়া, কার্ডের বাইরের নকশাও একটু পরিবর্তন হয়েছে। তার রং আগের চেয়ে আরো সমৃদ্ধ এবং মহা প্রাচীর সহ চীনের বিভিন্ন বিখ্যাত স্থানের ছবিও কার্ডে ছাপানো হয়েছে।
জানা গেছে, চীনের ডিজিটাল আই ডি কার্ডের গবেষণায় মোট ৮ বছর লেগেছে। গবেষনার সময়, গবেষকরা আরো বেশি ক্রিয়া-বৈচিত্র্য যোহ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবায়নকালে দেখেছেন যে, প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্ভব হলেও প্রায়োহিক ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। কারণ কিছু তথ্য হচ্ছে মানুষের গোপনীয় ব্যাপার, লোকেরা তা অন্যদের জানতে দিতে চায় না। এই জন্য চীনের আই ডি কার্ডে আরো বেশী কর্ম-বৈচিত্র্য যোগ করা নি।
মার্কিন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে চীনের নতুন আই ডি কার্ড বদলের ব্যাপারকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিজিটাল প্রকল্প বলে উল্লেখিত হয়েছে। জানা গেছে, নতুন ডিজিটাল আই ডি কার্ড পেতে হলে প্রত্যেক নাগরিকের ২০ ইউয়ান রেন মিন পি দিতে হবে। এক বিলিয়ন আই ডি কার্ড বিতরণ করলে ২০ বিলিয়ন ইউয়ান রেন মিন পি'র বৃহত বাজার সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, এই বছরে নতুন আই ডি কার্ডের বদলকাজ চীনের কিছু কিছু শহরে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে, আগামী বছরে সারা দেশে শুরু হবে, সংগে সংগে পুরোনো কার্ডের উত্পাদন ও বিতরণ বন্ধ হবে। ২০০৮ সালের শেষ দিকে নতুন কার্ড প্রবর্তনের কাজ মোটামুটিভাবে সম্পন্ন হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জানা গেছে, নতুন কার্ড নিরাপদে কয়েক দশক ধরে ব্যবহার করা যাবে।
|