v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-21 14:35:23    
শামুক মেয়ে

cri

    প্রাচীনকালে দক্ষিণপূর্ব চীনের চিন আন প্রদেশের রাজধানী হো কুয়ানে সিয়ে তুয়ান নামে এক সত্ প্রকুতির তরুণ অত্যন্ত পরিশ্রম করে দিন গুজরান করতো । শিশুবয়সেই মা-বাবাকে হারিয়ে আন্মীয়স্বজনহীন অবস্থঅয় এক দয়ালু । প্রতিবেশীর হাতে সে মানুষ হয়েছিল । সেকালে লোকে অল্প বয়সে বিয়ে করতো । কিন্তু সিয়ে তুয়ানের বয়স ১৭-১৮ বছর হয়ে গেলেও তখনও তার বিয়ে হয়নি । যে প্রতিবেশি তাকে এতো সনেহ করতেন তিনি অনেক চেষ্টা করেও তার অন্যে ভালো পাত্রী পাচ্ছিলেন না ।

    সিয়ে তুয়ান ঘুম থেকে উঠতো খুব ভোরে , আবার শুতে যেতো গভীর রাত্রে । দিনের বেলা সে চাষ করতো বা ক্ষেত্রের অন্য কাজ করতো, আর রাত্রে বাড়ি ফিরে সে রান্নাবান্না ধোয়া-মোছা ইত্যাদি গেরস্থালির কাজ করতো । এ সবের ফাঁকে ফাঁকে সে লেখাপড়াও করতো । একদিন সে ক্ষেত চষছিল । হঠাত্ তার লাঙ্গালের ফালে বেঁধে একটা প্রকান্ড শামুক উঠে এলো । শামুকটা পেয়ে সে ভারী খুশি হলো । শামুকটাকে সে যত্ম করে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একটা চৌবাচ্চার পানির মধ্যে ছেড়ে দিল ।

    এর কয়েকদিন পর মিয়ে তুয়ান একদিন বাড়ি ফিরে দ্যাখে --ঘরদোর ঝকঝকে তকতকে , আর টেবিলে খাবার দাবার তৈরী । পর পর ক'দিন এই একই ব্যাপার । সে ভাবলো --তার প্রতিবেশিরই এসব কাজ । ধন্যবাদ জানাতে সে প্রতিবেশির বাড়ি গেল । প্রতিবেশী বললেন , "কই , আমি তো এ সম্বন্ধে কিছু জানিনা । আমাকে কেন ধন্যবাদ কিচ্ছ ?" প্রতিবেশীর কথা সিয়ে তুয়ানের বিশ্বাস হলো না । এভাবে আরো কদিন কাটলো , প্রত্যেকদিনই বাড়ি ফিরে এসে সিয়ে তুয়ান দ্যাখে --ঘরদোর সাজানো গেছানো , রান্নাবান্না শেষ । সিয়ে তুয়ান আবার তার প্রতিবেশীর বাড়ি গিয়ে বিব্রতভাবে বললো , "আপনি কেন রোজ রোজ আমার বাড়ির কাজকর্ম , রান্নাবান্না , ধোয়ামোছা --সব কিছু করে দিচ্ছেন ? আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ, কিন্তু আপনি কষ্ট করছেন দেখে আমার খুবই সংকোচ হয় ।" প্রতিবেশী হাসিমুখে বললেন , " আমার তো মনে হয় তোমার স্ত্রীই এসব কাজ করছে । বরং বলো দেখি --স্ত্রীটিকে লুকিয়ে রেখেছো কোথায় ?" এ কথা শুনে সিয়ে তুয়ানের মনে ধাঁধাঁ লাগলো ।

    আসল ব্যাপার জানার জন্য সে ঠিক করলো , সব কিছু নিজের চোখে দেখতে হবে । খুব ভোরবেলা সে ক্ষেতে চলে গেল , আবার একটি পর সে চুপিসারে বাড়ি ফিরে এলো । লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়ার ফুটো দিয়ে সে দেখতে লাগলো । বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাত্ তার চোখে পড়লো--চৌবাচ্চার ভেতর একটি অত্যন্ত সুন্দরী মেয়ে বেরিয়ে এলো , তারপর রান্নাঘরে গিয়ে চুলো ধরালো । সিয়ে তুয়ান তাড়াতাড়ি বাড়ির ভেতরে ঢুকে সোজা চৌবাচ্চার কাছে গিয়ে দেখলো । চৌবাচ্চার ভেতরে শুধু শামুকের একটা খোল । সিয়ে তুয়ান চট করে রান্নাঘরে গিয়ে মেয়েটির সামনে দিড়িয়ে পড়লো , মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো "তুমি কে ? কেন আমার জন্য এই সব ঝামেলা পোয়াচ্ছ ?" মেয়েটি সিয়ে তুয়ানকে দেখেই হকচকিয়ে গিয়েছিল , সিয়ে তুয়ানের পাশ কাটিয়ে চৌবাচ্চার দিকে পালীয়ে যাবার চেষ্টা করছিল , কিন্তু সিয়ে তুয়ানের পীড়াপীড়ির কাছে হার মেনে মেয়েটি শৈষ পর্যন্ত সব খুলে বললো । সে বললো : " আমি স্বর্গরাজের ধবল নদীর এক পরী । স্বর্গরাজ্যের সম্রাট তোমার গুণ দেখে আর তোমার সংসারে কেউ সহায় নেই জেনে , তোমার জন্য রান্নাবান্না আর ঘর-গেরস্তালির কাজ করতে আমাকে তোমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন । ঠিক ছিল দশ বছর পর তোমার অবস্থা স্বচ্ছল হলে , আর তুমি বিয়ে করলে , আমি আবার স্বর্গরাজ্যে ফিরে যাবো । কিন্তু এখন তো তুমি আমার আসল চেহারা দেখে ফেলেছো , এখন-আর আমার এখানে থাকার উপায় নেই । এক্ষুনী আমাকে চলে যেতে হবে ।

    তুমি আগের মতোই পরিশ্রম করে কাজকর্ম কোরো আর নিজের হাতেই ঘর-গেরস্তালির কাজ করতে থাকো । তবে যাবার আগে আমি খোলটা তোমার জন্যে রেখে যাচ্ছি । এই খোলের এক আশ্চর্য গুণ আছে । এই খোল একবার চাল দিয়ে ভরলে সেই চাল হবে অযুরন্ত , কোনো দিনই এই খোল আর খালি হবে না ।"

    সিয়ে তুয়ান বারবার মেয়েটিকে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করতে লাগলো , কিন্তু মেয়েটা বললো তাদের যা বিধান তা অনুযায়ী তার পক্ষে আর কোনো মতেই থেকে যাওয়া সম্ভব নয় ।

    হঠাত্ ঝড় উঠল । এক নিমেষে মেয়েটি উধাও হয়ে গেলো । ধবল নদীর এই পরীকে কৃতজ্ঞতা জানাবার জন্য সিয়ে তুয়ান মাঝে মাঝে তাকে স্নরণ করে উপাসনা করতো ক্রমে ক্রমে দীর্ঘদিনের তার অবস্থা স্বচ্ছল হতে লাগল । একদিন সে এক কৃষকের মেয়েকে বিয়েও করলো ।