v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-21 08:57:16    
লিচিয়াং নদী

cri
    আমার বন্ধুদের মধ্যে যারা চীনের গুয়াংসী যুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ভ্রমণ করেছিলেন , তারা লিচিয়াং নদীতে ভেসে চলেছিলেন বলে গর্ব বোধ না করতে পারেন না।তবে যখন তারা লিচিয়াং সম্বন্ধে বর্ণনা করেন তখন তাদের মুখে আবার অনুতাপের ভাব ষ্পষ্টভাবে দেখা যায়।এর কারণ এই যে, জীবনে সৌভাগ্যক্রমে এত সুন্দর জায়গা একবার দেখার সুযোগ পাওয়া সত্বেও ওখানে থাকার সময় সীমিত।সেখানে বংশানুক্রমে বসবাসরত অধিবাসীদের দেখে মনে মনে তাদের জীবনের রীতি খুব পছন্দ হয়েছে এবং এই ধরনের জীবন যাপনের ইচ্ছা আপনাআপনি সৃষ্টি হয়।সত্যি লিচিয়াংএর পানি আয়নার মতো স্বচ্ছ, নদীর দু তীরের সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য অদ্বিতীয়।উপরন্তু এই নদীর দুই পারে বসবাসরত জনসাধারণের জীবনের রীতি এক ধরনের সাংস্কৃতিক আকর্ষণ।

    গুওয়াংসির উত্তর-পূর্ব শহর গুয়েলিন থেকে ইয়াংসু জেলা পর্যন্ত এ ৮৪ কিলোটার দীর্ঘ জায়গা গোটা লিচিয়াং দৃশ্যের প্রধান অংশ।একটি সবুজ ফিতার মতো এই নদী অগণ্য পাহাড়কে ঘিরে প্রবাহিত হয়।নদীর দু পারের সবুজ পাহাড় আর নদীতে আয়নার মতো স্বচ্ছ পানি যেন শতাধিক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি স্ক্রোল চিত্রকংনের মতো।এই নদীর পানিতে প্রত্যেক কিউবিক মিটারে মাত্র শুণ্য দশমিক শুণ্য ৩৭ কিলোগ্রামের বালি থাকে । সুতরাং নদীর পানি এত স্বচ্ছ যাতে নদীগর্ভ পর্যন্ত ষ্পস্টভাবে দেখা যায় এবং মাছ গণ্য করা যায়।নদী বরাবর নির্মিত ডাশিয়ু পুরানো নগর এই ছবির মতো সন্দর দর্শনীয়স্থানে অবস্থিত।খৃষ্টপূর্ব ২০০ সালে এই নগরের নির্মান শুরু হয়।নগরের সড়কের দু পাশে অধিকাংশ বড়ীঘরের ইতিহাস শত বছরের।বাড়ীঘরের দরজাগুলোতে সুক্ষ্ম কিন্তু অজস্র দাগ-লাগানো কাঠের ভাষ্কর্য এবং পোঁচ পোঁচ লাগানো চিত্রকংনগুলোতে সময় বিলীণ হয়ে যাওয়ার চিহৃ অনুভব করা যায়। মানুষের জীবনের রীতি জানতে চাইলে এখানকার প্রাচীন আর অতি সাধারণ সড়কে ঘুরে বেড়াতে হয়।বিশেষ করে লিচিয়াং মুখী পাশে একটু দেখতে হবে।দু আর তিন মিটারের চওড়া ভেলা থেকে তিন তলা ভবনের উচু বিলাসপূর্ণ ভ্রমণ জাহাজ পর্যন্ত নানা ধরনের যাবাহণ নদীর চওড়া জলসীমায় দেখা যায় ।নদীতে নৌকা চালা তো এখানকার মানুষের প্রকৃত জীবন।হাজার হাজার বছর ধরে এখানকার মানুষ নদীর তীরে বসবাস করে পানির উপর নির্ভর করে তাদের জীবনযাপন করে থাকে।এখানকার লোকেরা বলেছেন, লিচিয়াংএর পানি তাদের পুর্বপুরুষদের লালনপালন করেছে , তাদের নিজেদের লালনপালন করেছে এবং তাদের পরর্বতীকালের সন্তানদের পালণপালন করবে।বুদ্ধ গাও ছিন গাও যিনি নদীতে পর্যটকদের জন্য বাঁশের ভেলা চালান তিতি বলেছেন,

    আমার বাবা একজন মাঝি।আমার দাদা এবং দাদার বাবাও ছিলেন মাঝি। তারা মাছ ধরে জীবন যাপন করতেন।এখন আমাদের এই বংশ পরিবহণ ব্যবসা করে জীবনযাপন করে থাকি।এখানকার মানুষ দিন বেলায় পর্যটকদের সংগে নদীতে নৌকায় ভেসে চলে, সন্ধ্যার পর তারা প্রশান্ত প্রাচীন নগরের বাসায় চা খেয়ে খেয়ে বিশ্রাম নেন।তারা মাছ -ধরা নৌকাগুলোতে জ্বালানো বাতি তাকিয়ে নদীর তীরের সংগে পানি চপেটাঘাত করার তালে তালে আওয়াজ শুনতে শুনতে কত মজা! ওয়াংলিওফি নামে এক জন যুবক যার বয়স বিশের মতো। অতীতে তার পরিবারও মাছ ধরে জীবন যাপন করতো।পরে বাবার এই বংশ নদীতে পরিবহণের ব্যবসা করে বেশ কিছু টাকা উপার্জন করেছে । এই টাকা দিয়ে দুটো পর্যটন জাহাজ কেনা হয়।এখন তিনি এই জাহাজের মালিক হয়েছেন।লিচিয়াং সম্পর্কে বর্ণনা করলে তার ধারণা মাত্র একটি শব্দ , তা হলো, সৌন্দর্য।এখানকার পাহাড় সবুজ, পানি স্বচ্ছ, গুহা অসাধারণ এবং পাথর বৈচিত্রময়।সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য নি:সন্দেহে লিচিয়াংএর দুই পারের জনসাধারণের জন্য সুন্দর জীবনযাত্রা এনে এসেছে।ব্যাপক সংখ্যক দেশী-বিদেশী পর্যটক এখানে দেখতে করতে আসে।যার ফলে এখানকার মানুষের জীবনের মান আস্তে আস্তে উন্নত হয়েছে।ওয়াং লিও ফি বলেছেন,

    এখানকার দৃশ্য দেখতে আসা পর্যটকদের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোক রয়েছে ।লিচিয়াং সম্বন্ধে পর্যটকদের মূল্যয়ন আমিও শুনেছি।একজন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, তিনি বিশ্বের অনেক জায়গায় গিয়েছেন।এর মতো সুন্দর জায়গা তিনি আগে কোনো দিন দেখেননি।তিনি বলেছেন, এই জায়গা হলো মনে হয় দেবতা থাকার জায়গা।পর্যটন এখানকার মানুষের জীবন পরির্বতন করেছে।এখন পর্যটন তাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।লিচিয়াংয়ের তীরে একটি দর্শনীয়স্থান আছে যার নাম হলো চাঁদ শৃংগ।পর্যটন পরিসেবা ওখানকার মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চাঁদ শৃংগ ইয়াসু নগরের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।সমুদ্র-সমতলের তুলনায় ২৮০ মিটারের এই শৃংগে একটি বিরাটাকারের পাথর দেওয়াল আছে। এই পাথরের দেওয়ালে একটি বড় গুহা ।দূর থেকে দেখলে এই পাথরের দেওয়াল চাঁদের মতো দেখায়। স্থানীয় লোকেরা এই গুহাকে চাঁদ গুহা ডাকে ।এই শৃংগ আরোহন করার সময়ে ভিন্ন দিক থেকে পর্যটকরা এই চাঁদ উপভোগ করতে পারেন। প্রথম পূণ চন্দ্র, একটু পরে ক্ষীণচন্দ্র, তার পর আবার কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ পর্যটকদের দৃষ্টিগোচয় হয়। চাঁদ শৃংগে ভ্রমণ করার সময়ে অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করা ছাড়া, পর্যটকরা একজন স্থানীয় "চাঁদ মা" গাইডার নিতে পারেন। " চাঁদ মা" হলো পর্যটন পরিবেসায় নিয়োজিত স্থানীয় মহিলাদের প্রতি পর্যটকদের দেওয়া একটি সম্মানিত নাম । গ্রামীণ ভাষায় পরিপূর্ণ বর্ণনা ছাড়া তারা পর্যটকদের জন্য খাদ্য আর থাকার ব্যবস্থা থেকে স্বাস্থ্য পরিসেবা পর্যন্ত সার্বিক পরিসেবা যুগিয়ে দিতে পারেন।তাদের মধ্যে অনেকেই সহজ বিবেশী ভাষায় পর্যটকদের সংগে যোগাযোগ করতে পারেন। মাডাম শিউ যিতি আটটি বিদেশী ভাষা বলতে পারেন তিনি হলেন তাদের মধ্যে একজন দৃষ্টান্তমূলক প্রতিনিধি।ছয় বছর আগে দু জন ব্যানিডিয়ন যুবক পাহাড় আরোহনের সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন।তিনি বিনা পয়সায় তাদের জন্য খাবার পরিবেশন করেছিলেন এবং চিকিত্সার জন্য ঔষুধও যুগিয়ে দিয়েছিলেন।সুতরাং এই দুজন পযর্টক তাকে "চাঁদ মার" নাম দিলেন।তখন থেকে "চাদ মা" হলো সেখানে পর্যটন পরিসেবায় নিয়োজিত সস্থানীয় মহিলাদের ডাকনাম হয়ে গেছে।

    চীনে একটি প্রভাব আছে, শত বার শুনার চাইতে এক বার দেখা ভাল।যদি আপনারা সশরীরে লিচিয়াং দেখতে আসেন তাহলে আপনাদের চীন ভ্রমণ সন্তোষজনক হবে।