চিয়াং সু প্রদেশ চীনের বৃহত্তম নদী ইয়াংসির ভাটির দেশে অবস্থিত। প্রদেশটি খুবই সুন্দর এবং এখানে প্রচুর মাছ আর ধান উত্পন্ন হয়।
চিয়াংসু প্রদেশের আয়তন দশ লক্ষ বর্গকিলোমিটারেরও বেশী, তবে বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা ছোট । চিয়াং সু প্রদেশের লোক সংখ্যা সাত কোটি দশ লক্ষ। গড়পড়তা প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় সাত শো লোক থাকে। চিয়াং সু চীনের অন্যতম সবচেয়ে উন্নত প্রদেশ। নদীমাতৃক প্রদেশটির জমি খুবই উর্বর, এখানে খাদ্যশস্য ,তৈল-বীজ, তূলা, রেশম, মাছ , পশুমাংস আর হাঁসমুর্গী ইত্যাদি উত্পন্ন হয়। এগুলোর উত্পন্ন হয়। এগুলোর উত্পাদন-পরিমাণ চীনের যাবতীয় প্রদেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে। এই প্রদেশ উত্কৃষ্ট গুণগত মানের স্ফটিক উত্পন্ন হয়। এর গুণগত মান বিশ্ববিখ্যাত ব্রাজিলের স্ফটিকের সংগেও তুলনা করতে পারে।
চীনে সুপ্রাচীন সভ্যতার একটি অংশ হিসাবে চিয়াংসু প্রদেশের সভ্যতাও খুবই প্রাচীন। চিয়াংসু প্রদেশের রাজধানি নানচিং এলাকায় কয়েক লক্ষ বছর আগেই মানুষ বসবাস শুরু করে। ছ'হাজার বছর আগে আদিম গ্রাম স্থাপিত হয় এবং আদিম কৃষিউত্পাদন শুরু হয়। খ্রীষ্টীয় সপ্তম আর দশম শতাব্দীতে চিয়াংসু প্রদেশের ইয়াংচৌ শহর তখনকার চীনের সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী শহর ছিলো। চতুর্দশ আর সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রদেশটির সুচৌ আর নানচিং প্রভৃতি শহর বিশেষভাবে সমৃদ্ধ হয়ে উঠে। তার পর উসী, ছাংচৌ, নানথোং প্রভৃতি শহরেরও ক্রমেই উন্নয়ন হয় এবং চিয়াংসু প্রদেশ অর্থনীতির আর সমাজনন্নয়নের দিক থেকে বরাবরই চীনের যাবতীয় প্রদেশের মধ্যে এগিয়ে আছে। ১৯৭৮ সালে চীনে সংস্কার আর উন্মুক্তকরণ নীতি প্রবর্তন হবার পর থেকে চিয়াংসু প্রদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের গতি দ্রুততর হয়। ১৯৯৯ সালে চিয়াংসু প্রদেশের জি ডি পির মোটমূল্য সাতাত্তর হাজার কোটি ইউয়ান অর্থাত্ প্রায় ৯২৮০ কোটি মার্কিন ডলার ,এই পরিমাণ গোটা চীনের প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ। প্রদেশটির মাথাপিছু জি ডি পি ছিলো দশ হাজার ইউয়ানেরও বেশী, অর্থাত্ এক হাজার দু শো মার্কিন ডলারেরও বেশী।
চিয়াংসু প্রদেশের পল্লী অঞ্চলে এখন শিল্পউত্পাদনের দ্রুত উন্নতি হয়েছে, বিশেষ করে সুচৌ, উসী আর ছাংচৌ এলাকায় পল্লীঅঞ্চলের শিল্প ছোট থেকে বিরাট আকারে উন্নতি লাভ করেছে। এই শিল্পই এখন চিয়াংসু প্রদেশের পল্লীঅর্থনীতির প্রধান অবলম্বন এবং প্রাদেশিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রদেশটির প্রধান প্রধান শিল্প হলোঃ যন্ত্রনির্মাণ ,মটরগাড়ী, ইলেকট্রোনিক্স ,রাসায়ন, বস্ত্রবয়ন, ধাতু, নির্মাণসামগ্রি আর খাদ্যদ্রব্য। চিয়াংসু প্রদেশের অনেক নামকরা মার্কার পণ্য উত্পাদিত হয়। চিয়াংসু প্রদেশের যন্ত্রনির্মাণ -শিল্পের মোট উত্পাদনমূল্য চীনে প্রথম স্থান অধিকার করে আছে, তাছাড়া , দক্ষিণ চীনের সবচেয়ে বড় তৈল -বাসায়নিক শিল্পঘাঁটিও এখানে রয়েছে।
চিয়াংসু প্রদেশের বিজ্ঞান আর শিক্ষার মাও বেশ উন্নত। বিজ্ঞানগবেষণার মানের দিক থেকে প্রদেশটি চীনে সামনের সারীতে রয়েছে। ১৯৯৯ সাল নাগাদ চিয়াংসু প্রদেশে সব মিলিয়ে ৪০ হাজারটি জয়েন্ট ভেন্চার প্রকল্প সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে ইতিমধ্যেই ৪২৭০ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক পুঁজি ব্যবহার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ইতিমধ্যেই ৮০৩০ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক পুঁজি ব্যবস্থারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
চিয়াংসু প্রদেশের রাজধানি নানচিং হলো চীনের চারটি প্রাচীন রাজধানির অন্যতম , ইয়াংসি নদীর নিম্ম অববাহিকা-অঞ্চলের কেন্দ্রীয় শহর, প্রদেশটির রাজনীতি ,অর্থনীতি আর সংস্কৃতির কেন্দ্র। একই সময়ে নানচিং চীনের পরিবহণ আর যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। সুচৌ, উসী আর ছাংচৌ ইয়াংসিনদীর বদ্বীপের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত ---এই তিনটি শহরের অর্থনৈতিক আর সামাজিক উন্নয়নের মান চীনের যাবতীয় শহরের সামনের সারীতে এগিয়ে রয়েছে বলে এই এলাকাটি স্বর্ণত্রিভূজ নামেও সুপরিচিত। একই সময়ে শহর তিনটি আবার গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থানও বটে।
|