মনস্তত্ত্ব ও চিকিত্সাবিদ্যার গবেষণা থেকে দেখা গেছে ,ডিপ্রেশনের প্রভাব ,ভাবানুভূতির উত্পীড়ন ,অন্যান্যদের সংগে সম্পর্কের অবনতি ,কাজ ও শিক্ষার সাময়িক ব্যথর্তা ইত্যাদি সমস্যার সমষ্টি হলো আত্মহত্যার গুরুত্বপূর্ণ কারণ । চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে , চীনে প্রতিবছর অন্তত: আড়াই লক্ষ লোক আত্মহত্যা করে মারা গেছেন,বিশ লক্ষেরও বেশী লোক আত্মহত্যার প্রচেষ্টা করে বেঁচে গেছেনএবং একাংশ লোক আত্মহত্যার প্রচেষ্টা করে বিভিন্ন অবস্থার বিকলাংগ হয়েছেন ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক মিছের ফিলিপ্স মনে করেন ,অধিকাংশ আত্মহত্যা-প্রয়াসী লোকের মন সাধারণত: দ্বন্দ্বে ভরপুর । বাস্তবে তারা তাদের মনের দু:খকেই শেষ করতে চান ,তাদের জীবনকে নয় । তাই যদি এই সময়ে মনস্তাত্ত্বিক সংকটে বিজ্ঞানসম্মত ও যুক্তিসংগত হস্তক্ষেপ করা হয় তাহলে তাদেরকে তাদের বেঁচে থাকার সাহস পুনরুদ্ধারে সাহায্য করা যায়। তিনি বলেছেন ,
"বতর্মানে সমাজে বিপুল সংখ্যক সাইকোলজিকল অবসট্রাক্শন রোগী রয়েছেন , তাদের আত্মহত্যার সম্ভাবনা খুবই বেশী , অথচ তারা মনস্তাত্ত্বিক চিকিত্সা পাওয়ার উপায় জানেন না , অথবা তারা উচ্চ পরিসেবা ফি ভয় করেন , বা ভয় করেন মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার জন্য চিকিত্সা অন্বেষণ করলে তাদেরকে মানসিক রোগের রোগী বলে মনে করা হবে । মনস্তাত্ত্বিক সংকটে হস্তক্ষেপের একটি উচ্চ গুণগত মানের হটলাইন পরামশর্প্রার্থীদের টেলিফোন পাওয়ার পর বিনামূল্যে বেনামী পরিসেবা দিতে পারে , যাতে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা প্রশমিত হয়।"
গত কয়েক বছরে আত্মহত্যা সমস্যার উপর জনগণের মনোযোগের মাত্রা বেড়ে চলার সংগে সংগে চীনের অভ্যন্তরের মনস্তাত্ত্বিক সংকটে হস্তক্ষেপের কাজও ক্রমেই বিকশিত হয় ।
"হাউ দো ইউ দো ,মনস্তাত্ত্বিক সংকটে হস্তক্ষেপের হটলাইন । ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যায় হস্তক্ষেপ করা আমাদের পরিসেবার আওতা ।"
এটা হলো চীনের প্রথম মনস্তাত্ত্বিক সংকটে হস্তক্ষেপের হটলাইন পেইচিংয়ের মনস্তাত্ত্বিক সংকটে হস্তক্ষেপের হটলাইন । এই হটলাইন পেইচিং শহরের মনস্তাত্ত্বিক সংকট গবেষণা ও হস্তক্ষেপ কেন্দ্রে অবস্থিত । এই কেন্দ্রের পরিচালক ছাও লিয়েন ইউয়ান সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
"আমাদের হটলাইনে বিশেষ মানসিক স্বাস্থ্য-কর্মীরা , প্রধানত: মানসিক রোগের চিকিত্সক , সমাজসেবক ও মনস্তত্ত্ববিদরা পরিসেবা দেন । কাজ শুরু করার আগে তারা কড়াকড়ি কেন্দ্রীভূত প্রশিক্ষণ আর স্ট্যান্ডার্ড তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা নিয়েছেন ।"
ছাও লিয়েন ইউয়ান সংবাদদাতাকে বলেছেন , দুই হাজার দুই সালের ডিসেম্বর মাসে মনস্তাত্ত্বিক সংকটে হস্তক্ষেপের হটলাইন চালু হওয়ার পর পরামশর্প্রার্থীদের এক লক্ষ দশ হাজারটি টেলিফোন পাওয়া গিয়েছে । আশি শতাংশেরও বেশী টেলিফোনকারী বলেছেন , মনস্তাত্ত্বিক পরিসেবা নেয়ার পর তাদের উদ্বিগ্নতা ও রুদ্ধতার অনুভূতি বিভিন্নমাত্রায় প্রশমিত হয়েছে এবং তারা আবার জীবনযাত্রার সাহস পেয়েছেন ।
মিসেস ওয়ান ইয়া সিন হচ্ছেন পেইচিংয়ের মনস্তাত্ত্বিক সংকট গবেষণা ও হস্তক্ষেপ কেন্দ্রের একজন প্রবীণ পরামশর্দাত্রী । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন, তদন্ত করে দেখা গেছে , অনেক হত্যাকারী তাদের দু:খের সময়ে তাদের দু:খের কথা শোনানোর মতো লোক জোটে না বলেই চরম পদক্ষেপ নিয়েছেন , তাই শোনা হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক সংকটে হস্তক্ষেপকমীর্দের প্রধান দায়িত্ব । তিনি বলেছেন ,
"কেউ কেউ টেলিফোনে খুবই আবেগপ্রবণ ,তখন আমরা তাকে বলি, যে ব্যাপারেরই সম্মুখীণ হন না কেন , আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো , আপনার কথা শুনবো । তখন তার উত্তেজণা , উদ্বিগ্নতা , অশান্তি কিংবা আত্মহত্যার মনোভাব কমে আসে , তার আত্মহত্যার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায় । তার মনোভাব শান্ত হলে আমরা যথাসম্ভব তার সংগে একত্রে তার বেঁচে থাকার যুক্তিগুলো পযার্লোচনা ও অন্বেষণ করি , যাতে তিনি একটি আত্মিক অবলম্বন খুঁজে পান । তারপর তাকে কিছু অনুপ্রেরণার কথা ও ভাবানুভূতির সমথর্ন দেবো । এগুলো তার জন্য খুবই কাযর্কর ।"
এখন পেইচিং ছাড়া , চীনের নানচিং , ছাংসা ইত্যাদি দশ বারোটি শহরেও মনস্তাত্ত্বিক সংকটে হস্তক্ষেপের বিশেষ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।
|