পেইচিংয়ের নিষিদ্ধ নগর পরিদর্শনের তিনি অত্যন্ত "চমত্কার" বলে আখ্যায়িত করেছেন। চীনের সংরক্ষিত সবচেয়ে পূণাংগ আর বৃহত্তম প্রাচীন ইমারতগুলোর চমক কোথায়? এখন আমাদের বেতার তরংগের মাধ্যমে আপনাদের এই নিষিদ্ধ নগরের সংগে পরিচিত হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত থিয়ান-আন-মেন থেকে উত্তর দিকে এগুলে লোকেরা কয়েক হাজার সিটার দীর্ঘ বিশাল চকচকে সোনালী রংয়ের প্রাচীন ইসারতগুলো দেখতে পাবেন।সেগুলোর প্রধান অংশ চীনের সুপরিচিত নিষিদ্ধ নগর।
নিষিদ্ধ নগরের ইতিহাস পাঁচ শো বছরেরও বেশি পুরনো। পঞদশ শতাব্দির গোড়ার দিকে নিষিদ্ধ নগরে থাকতেন। মোট ২৪জন সম্রাট নিষিদ্ধ নগরে বসবাস করেছিলেন। আজ নিষিদ্ধ নগর চীনের পর্যটনের সবচেয়ে বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। ইউনেস্কো নিষিদ্ধ নগরকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তির তালিকায় অন্তর্ভূকত করেছে।
নিষিদ্ধ নগর উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত এক বিশাল ইসারতগুচ্ছ নিয়ে গঠিত। নিষিদ্ধ নগর-এর আয়তন ৭ লক্ষ ২০ হাজার বর্গমিটার। নগরের উত্তর দক্ষিণ দৈর্ঘ্য ৯৫০ মিটার আর পূর্ব পশ্চিম প্রস্থ ৭৫০ মিটার। নিষিদ্ধ নগরে মোট ৭ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর আছে। নিষিদ্ধ নগরের চারদিকে চারটি তোরণ আছে। দক্ষিণ দিকে উ মেন ,উত্তর দিকে শেন উ ,পূর্ব দিকে তুং হুয়া আর পশ্চিম দিকে সি হুয়া তোরণ।
চীনের সামন্তসমাজের সম্রাটরা নিজেদেরকে স্বর্গের সন্তান বলে মনে করতেন। তাদের বাসস্থানকে চি ওই প্রাসাদ বলে গণ্য করা হতো। সে সব জায়গায় যেতে পারতো না। নিষিদ্ধ নগর এই নামটির উদ্ভব ঘটেছে এইভাবে।
নিষিদ্ধ নগরের ইমারতগুলো প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত।থাই হো প্রাসাদ,চুংহো প্রাসাদ আর পাও হো প্রাসাদ হচ্ছে সম্রাটদের রাষ্ট্রীয় ব্যাপার পরিচালনার স্থান।ছিয়ান ছিং প্রাসাদ, চাও থাই প্রাসাদ আর খুন নিং প্রাসাদ হচ্ছে সম্রাটদের থাকার স্থান। অবশ্য নিষিদ্ধ নগরে বিশ্রাম আর বিনোদনের জন্যেও কিছু স্থান আছে। যেমন চিউ লুং দেয়াল, রাজকিয় উদ্যান ইত্যাদি।
যদি আপনারা নিষিদ্ধ নগরের প্রধান তোরণ অর্থাত উ মেন তোরণ দিয়ে নিষিদ্ধ নগর পরিদর্শন করতে শুরু করেন,তবে আপনারা প্রথম দেখতে পাবেন তিনটি প্রধান প্রাসাদ। এই প্রাসাদগুলো হলো দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত যথাক্রমে থাই হো প্রাসাদ,চুং হো প্রাসাদ আর পাও হো প্রাসাদ। এই তিনটি প্রাসাদ নিষিদ্ধ নগরের প্রধান ইসারতগুলোর অংশ বিশেষ। চীনের সম্রাটরা এই প্রাসাদগুলোতে বসে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারাদি নিয়ে মন্ত্রীদের সংগে পরামর্শ করতেন।
থাই হো প্রাসাদ উপরোক্ত তিনটি প্রাসাদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। প্রাসাদটি হান পাই জেড পাথর দিয়ে তৈরী আট মিটার উচুঁ একটি সমতল -মত্রের উপর খোদাই রয়েছে অনেক অত্যন্ত সুন্দর নক্সা।প্রাসাদটির থামগুলোর উপরও পাথর -খোদাই রয়েছে। প্রাসাদটির দিকে যাওয়ার রাস্তার উপর মেঘ আর উড়ন্ত ড্রাগনের চিত্র-সম্বলিত পাথর -খোদাই রয়েছে। চীনের মিং আর ছিং রাজবংশের সময়ে সম্রাটদের অভিষেক-অনুষ্ঠান ,তাদের বিয়ে অনুষ্ঠান ,সম্রাজ্ঞীদের অভিযেক-অনুষ্ঠান,সেনাবাহিনীর অভিযাত্রা-অনুষ্ঠান প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান এই প্রাসাদে আয়োজিত হতো।সুতরাং থাই হো প্রাসাদটি আকার ,স্থাপতা-রীতি ,সজ্জা আর আলমারির দিক থেকে তখনকার চীনে সবচেয়ে উচ্চ শ্রেণীর ছিল।
থাই হো প্রাসাদ চীনের যাবতীয় প্রাচীন ইমারতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিরাটাকারের প্রাসাদ।প্রাসাদটির আয়তন ২০৭৭ বর্গমিটার এবং উচ্চতা ২৮ মিটার। থাই হো তপ্রাসাদটি কাঠ দিয়ে তৈরি হয়। প্রাসাদটির পেছন দিকের মাঝখানে সোনাপাতবিশিষ্ট একটি চেয়ার বসানো আছে। সেটিই সম্রাটদের সিংছাসনর্ঘ।
চুং হো প্রাসাদ থাই হো প্রাসাদটির উত্তর দিকে অবস্থিত। এই প্রাসাদে সম্রাটরা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেযোগ দেয়ার আগে একটু বিশ্রাম নিতেন এবং অনুষ্ঠানগুলোর মহড়া চলতো। চুং হো প্রাসাসটির উত্তর দিকে অবস্থিত পাও হো প্রাসাদের আয়তন সবচেয়ে ছোট। সম্রাটরা এই প্রাসাদে বসে ভোজসভা করতেন আর পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতেন। প্রাসাদটি দেখতে অত্যন্ত মনোরম।উপরোক্ত তিনটি প্রাসাদের উত্তর দিকে অবস্থিত প্রাসাদগুলো সম্রাটদের বিশ্রাম আর বিনোদনের স্থান।
|