v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-03-15 21:55:22    
চীনের মহাপ্রাচীর

cri
    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের শহরাঞ্চলের উত্তর-পশ্চিমাংশ থেকে মহাপ্রাচীরের সবচেয়ে নিকটবর্তী অংশে যেতে গাড়িতে করে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে । পর্বতমালার উপরে ধূসর প্রাচীর উঁচু-নিচু আর একেঁ-বেঁকে রয়ে আছে । এটাই পেইচিংয়ের প্রসিদ্ধ পাতালিং মহাপ্রাচীর । মহাপ্রাচীরের উচ্চতা সাত থেকে আট মিটার । তা ছ'মিটারেরও বেশী চওড়া এবং এক মাথে পাঁচটি ঘোড়া এর উপর দিয়ে দৌড়াতে পারে । মহাপ্রাচীরের উপরে বহু সতর্কীকরন দুর্গ আছে । প্রতি দুই সতর্কীকরন দুর্গের ব্যবধান কয়েক শো মিটার । সতর্কীকরন দুর্গ দেখতে এক একটি মজবুত দুর্গের মতো । জানা গেছে , প্রাচীনকালে যুদ্ধের সময়ে মহাপ্রাচীরের উপরে ঘোড়া দৌঁড়াতো এবং নিজেদের সেনাবাহিনীর কাছে যুদ্ধের সংকেত পাঠাবার জন্যে সৈনিকরা সতর্কীকরন দুর্গের উপরে ধোঁয়া জ্বালাতেন ।

    পেইচিংয়ের পাতালীং মহাপ্রাচীর শুধু ৫০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ মহাপ্রাচীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার আর একটি ছোট অংশ মাত্র পাতালিং মহাপ্রাচীর ভালো অবস্থায় সংরক্ষিত রয়েছে আর পর্যটনের জন্যে ব্যবস্থাদি পূর্ণাংগ বলে ওখানে পর্যটকদের খুব ভিড় আছে ।

    মহাপ্রাচীর একটি বিরাট ড্রাগনের মতো চীনের উত্তরাংশের মাটিতে ছড়িয়ে আছে । চীনের পশ্চিমাংশের কানসু প্রদেশ থেকে উত্তর-পূর্ব চীনের বোহাই উপসাগরের তীর পর্যন্ত তা বিস্তৃত । তার দৈর্ঘ্য ৫০ হাজার কিলোমিটার ছড়িয়ে গেছে । চীনের পশ্চিমাংশের কানসু প্রদেশে বালি আর বৃক্ষের প্রভাবে মহাপ্রাচীরের রঙ হল দাভ-ধূসর । উত্তর চীনের অন্তমঙ্গোলিয়া স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের মহাপ্রাচীরের ১০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ অংশটা সম্পূর্ণভাবে মাটি দিয়ে নির্মান করা হয় । পূর্বাংশের সমুদ্রের তীরে মহাপ্রাচীর একটি বিরাট ড্রাগনের মতো সমুদ্রে নেমে গেছে । সুতরাং সমুদ্রে মহাপ্রাচীরের মোহনাকে আবার পুরানো ড্রাগনের মাথা বলেও আখায়িত করা হয় । কিন্তু কেন চীনের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় মহাপ্রাচীনের কাঠামো বিভিন্ন ? এটা মহাপ্রাচীনের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত ।

    মহাপ্রাচীরের ইতিহাস দু'হাজার বছরেরও বেশি পুরানো । খ্রীষ্টপূর্ব ২২১ সালে চীনের প্রথম সম্রাট ছিনশিহোয়ান চীনের একীকরন করেন । তখন চীনের আয়তন বিশাল । চীনের উত্তরাংশের সুন্নু জাতির অনুপ্রবেশের মোকাবিলা করার জন্যে ছিনশিহোয়ান মহাপ্রাচীরের নির্মঅনকাজ শুরু করেন । তখন তার দৈর্ঘ্য ৫০ হাজার কিলোমিটার দাঁড়িয়েছে । এটা সত্যি একটি আত্মরক্ষামূলক সামরিক প্রকল্প । সুতরাং ছিন রাজবংশ থেকেই মহাপ্রাচীর ৫০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ মহাপ্রাচীর বলে পরিচিত ।

    ছিন রাজবংশের পর হান রাজবংশ অর্থাত্ খ্রীষ্টপূর্ব ২০৬ সাল থেকে ২২০ খ্রীষ্টাব্দি পর্যন্ত সময়পর্বেও মহাপ্রাচীরের নির্মানকাজ চালানো হয়েছিল । কিন্তু আমরা এখন যা দেখতে পারি তার বেশির ভাগ মিং রাজবংশের মহাপ্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ ।

    মিন রাজবংশের মহাপ্রাচীর চীনের ইতিহাসে সবচাইতে দেরীতে নির্মিত মহাপ্রাচীর । এটা আকারের দিক থেকে সবচাইতে বড় , নির্মানের সময়ের দিক থেকে সবচাইতে পূর্ণাংগ । পূর্বাংশের লিয়াওনিং প্রদেশের ইয়ালুচিয়াং নদীর তীর থেকে পশ্চিমাংশের কানসু প্রদেশের চ্যাইউকুয়অন পর্যন্ত মিং রাজবংশের এই মহাপ্রাচীরের পুরো দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ত শো কিলোমিটারেরও বেশী । এটাকে একটি পূর্ণাংগ আর কঠোর সামরিক আত্মরক্ষামূলক লাইন বলা যায় । জানা গেছে , মিং রাজবংশের মহাপ্রাচীর নির্মানের জন্যে যে সব ইট , পাথর ও মাটি ব্যবহার করা হয়েছে সে গুলোকে লাগিয়ে পাঁচ মিটার উঁচু আর এক মিটার চওড়া একটি প্রাচীর নির্মান করার হলে এই প্রাচীর দিকে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করা যায় ।

    অবশ্যই বর্তমানে মহাপ্রাচীর আগের মতো সামরিক ভূমিকা পালন করছে না । ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো মহাপ্রাচীরকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি সংক্রান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে । তাকে গত দু'হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চীনা জাতির বিশ্বকোষ বলে মনে করা হয় । মহাপ্রাচীর বিশেষ করে পেইচিংয়ের পাতালিং মহাপ্রাচীর দেশ-বিদেশের ব্যাপক পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে ।

    মহা-প্রাচীর পর্যটনের ভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন আকর্ষনীয় শক্তি আছে । কিন্তু বোধ হয় , শরত্কাল আর শীত্কালে মহাপ্রাচীরের দৃশ্য সবচাইতে সুন্দর । শরত্কাল পেইচিংয়ের সবচাইতে সুন্দর মৌসুম । তখন নীল আকাশে মেঘ কম । মহা প্রাচীরের ভেতর ও বাইরে সর্বত্র লাল রঙের স্মোক ট্রি দেখা দেয় । নীল আকাশ আর স্মোক ট্রির পটভূমিতে মহাপ্রাচীর দেখতে নিতান্তই একটি তেলচিত্রের মতো । শীত্কালে রবফ পড়ার পর বরফে ঢাকা মহাপ্রাচীর অসাধারণ সুন্দর । বসন্তকাল বা গ্রীষ্মকালেও মহাপ্রাচীরের অনন্য দৃশ্য বহু পর্যটকদের আকৃষ্ট করে ।

    পেইচিংয়ে এসে মহাপ্রাচীর পরিদর্শ করা খুব সহজ । শহরাঞ্চল থেকে পাতালিং যাওয়ার জন্যে বাস , ট্রেন আর ট্যাক্সির ব্যবস্থা আছে । এখন পেইচিং শহরাঞ্চল থেকে মহাপ্রাচীর যাওয়ার জন্যে হাই ওয়ৈ চালু হয়েছে । মাত্র এক ঘন্টা সময় লাগে । পাতালিং মহাপ্রাচীর যাওয়ার পর আশেপাশের যাদুঘরও পরিদর্শন করা যায় ।

    চীনারা বলেন , যাঁরা মহাপ্রাচীরে না উঠেন , তাঁরা বীর নন । সুতরাং আপনারা যদি চিন ভ্রমনে আসেন তাহলে আপনাদের মহাপ্রাচীরে যেতে হবে এবং বীরের শৌর্য অনুভর করতে হবে ।